প্রেগন্যান্সি বা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন- ১ম সপ্তাহ

প্রেগন্যান্সি বা গর্ভবর্তী হওয়ার প্রথম সপ্তাহেই কিছু লক্ষন দেখা যায়। প্রাথমিক লক্ষন হলো মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ হওয়া। যদিও রোগের কারণেও মাসিক বন্ধ হতে পারে। তাই মাসিক বন্ধ হলে নিচের প্রেগন্যান্সি লক্ষনগুলো দেখে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিশ্চিত হতে হয়। আপনার মাসিক বন্ধ থাকলে গর্ভাবস্থা নির্ণয়ের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা হলো প্রেগন্যান্সি টেস্ট।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট দুই ধরণের:
- প্রস্রাব পরীক্ষা (প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ):
- ঘরে বসেই প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করে ফলাফল জানা যায়।
- বেশিরভাগ ফার্মেসিতে সহজেই পাওয়া যায়।
- সতর্কতা:
- ফলস পজিটিভ বা নেগেটিভ রেজাল্ট দেখাতে পারে।
- নিশ্চিত ফলাফলের জন্য কমপক্ষে তিনটি আলাদা স্ট্রিপ দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত।
- রক্ত পরীক্ষা:
- ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করা হয়।
- সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা।
- মাসিক বন্ধ হওয়ার পর যেকোনো সময় করা যেতে পারে।
গর্ভবতী বা প্রেগন্যান্সির জন্য কোন পরীক্ষা করবেন
- ঘরে বসেই দ্রুত ফলাফল জানতে চাইলে প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ বা প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহার করতে পারেন।
- নিশ্চিত ফলাফল চাইলে রক্ত পরীক্ষা করুন।
- কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়? উত্তর হচ্ছে- মাসিক বন্ধ হওয়ার ৭ দিন পর পরীক্ষা করা উচিত।
- পরীক্ষার ফলাফল যাই হোক না কেন, সন্দেহ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
প্রেগন্যান্সি হিসাব কীভাবে করবেন
- আপনার সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিন মনে রাখুন।
- ধরুন, আপনার মাসিক শুরু হয়েছিল ১০ই তারিখ এবং শেষ হয়েছিল ১৫ই তারিখ
- স্বাভাবিকভাবে, আপনার পরবর্তী মাসিক হওয়ার কথা আগামী মাসের ১০ই তারিখের আশেপাশে।
- কিন্তু, যদি আপনার মাসিক না হয় এবং গর্ভাবস্থার পরীক্ষায় আপনি গর্ভবতী বলে নিশ্চিত হন,
- তাহলে আপনার গর্ভাবস্থার হিসাব করা হবে আগের মাসের ১০ই তারিখ থেকে।
সহজ কথায়: আপনার সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিন হলো আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম দিন।
প্রেগন্যান্সির লক্ষণ প্রথম সপ্তাহের
হরমোনের পরিবর্তন গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের লক্ষণগুলোর জন্য দায়ী। প্রতিটি গর্ভাবস্থা আলাদা হলেও, প্রথম তিন মাসে অনেক নারীই কিছু সাধারণ লক্ষণ অনুভব করেন।
লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- স্তন নরম হয়ে যাওয়া ও ব্যথা: এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে স্তন ফুলে উঠতে পারে এবং স্পর্শে সংবেদনশীল হতে পারে।
- মেজাজের পরিবর্তন: হরমোনের তারতম্যের কারণে আপনার মেজাজ দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে, আবেগপ্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কান্না আসতে পারে।
- বমি বমি ভাব বা বমি (প্রাতঃকালীন অসুস্থতা): এটি গর্ভাবস্থার একটি অত্যন্ত সাধারণ লক্ষণ যা দিনের যেকোনো সময় হতে পারে, তবে সকালে বেশি দেখা যায়।
- ঘন ঘন প্রস্রাব: বর্ধিত রক্ত পরিমাণ এবং গর্ভাশয়ের বৃদ্ধির কারণে আপনার প্রস্রাবের বার্তা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস: গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে কিছু ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস স্বাভাবিক।
- তীব্র ক্লান্তি: হরমোনের পরিবর্তন এবং শরীরে নতুন জীবনের বিকাশের কারণে ক্লান্তি বোধ করা স্বাভাবিক।
- মাথাব্যথা: হরমোনের পরিবর্তন, রক্ত চাপের পরিবর্তন এবং রক্তের শর্করার পরিমাণের হ্রাসের কারণে মাথাব্যথা হতে পারে।
- বুক জ্বালা: প্রোজেস্টেরন হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়, যার ফলে বুক জ্বালা হতে পারে।
- পায়ে খিল ধরা: খনিজ পদার্থের অভাব, রক্ত চলাচলের পরিবর্তন এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে পায়ে খিল ধরতে পারে।
- পিঠের নীচের অংশ ও শ্রোণীতে ব্যথা: গর্ভাশয় বৃদ্ধি এবং ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ব্যথা দেখা দিতে পারে।
- নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি আকর্ষণ বা বিরক্তি: হরমোনের পরিবর্তনের কারণে আপনার খাদ্যের পছন্দের পরিবর্তন হতে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য: প্রোজেস্টেরন হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয় এবং লোহের পরিপূরক গ্রহণের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
নিয়মিত চেকআপের জন্য যোগাযোগ:
আপনি যখন গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হবেন, তখন দ্রুততম সময়ে একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা জরুরি। নিম্নলিখিত স্থানগুলো থেকে আপনি গর্ভাবস্থার সেবা পেতে পারেন:
- সরকারি হাসপাতাল:
- বিভাগীয় বা সদর হাসপাতাল
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র)
- গাইনি বিভাগ
- মেটারনিটি ক্লিনিক:
- আপনার জেলার যেকোনো মেটারনিটি ক্লিনিক
- কমিউনিটি ক্লিনিক:
- বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিক
- এনজিও ক্লিনিক (যেমন ব্র্যাক, সূর্যের হাসি ক্লিনিক)
- প্রাইভেট চেম্বার:
- যেকোনো গাইনি ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বার
মনে রাখবেন: একজন গর্ভবতী মায়ের এবং তার সন্তানের সুস্থতার জন্য নিয়মিত চেকআপ এবং ডাক্তারের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি সঠিক নির্দেশিকা ও পরামর্শের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট ও সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর:
প্রশ্ন: প্রেগন্যান্সি কতদিন পর বুঝা যায়?
উত্তর: মিলনের ১০-১৪ দিন পর গর্ভাবস্থার লক্ষণ দেখা দিতে পারে এবং ২১ দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্টে ফলাফল ধরা পড়ে।
প্রশ্ন: মিলনের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়?
উত্তর: মাসিক নিয়মিত হলে: সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে ২১ দিন পর টেস্ট করা উচিত। অনিয়মিত মাসিক হলে: মিলনের ১৪ দিন পর টেস্ট করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়?
উত্তর: না, লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং ফলাফল নির্ভরযোগ্য হবে না।
প্রশ্ন: প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার ঘরোয়া পদ্ধতি কি?
উত্তর: বিজ্ঞানসম্মত কোন ঘরোয়া পদ্ধতি নেই। নিশ্চিত ফলাফলের জন্য প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহার বা রক্ত পরীক্ষা করুন।
প্রশ্ন: তলপেটে ব্যথা কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ?
উত্তর: হ্যাঁ, তলপেটে ব্যথা প্রেগন্যান্সির একটি সাধারণ লক্ষণ হতে পারে। তবে, অন্যান্য কারণেও তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
প্রশ্ন: প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস সহবাস করা যায়?
উত্তর: সাধারণত, প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস সহবাস করা নিরাপদ। তবে, কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার সহবাসে বিরতি নেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।
প্রশ্ন: কোমর ব্যথা কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ?
উত্তর: হ্যাঁ, কোমর ব্যথা প্রেগন্যান্সির একটি লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে, গর্ভাবস্থার শেষ দিকে।
প্রশ্ন: সাদা স্রাব কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ?
উত্তর: হ্যাঁ, সাদা স্রাব প্রেগন্যান্সির একটি সাধারণ লক্ষণ। তবে, সাদা স্রাবের অন্যান্য কারণও থাকতে পারে।
প্রশ্ন: প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের নিয়ম কি?
উত্তর: প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের সাথে নির্দেশাবলী থাকে। সেগুলি সাবধানে পড়ে পরীক্ষা করুন।
প্রশ্ন: প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময় কোনটি?
উত্তর: সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে ২১ দিন পর যেকোনো সময় টেস্ট করা যেতে পারে। সকালের প্রথম প্রস্রাব ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
প্রশ্ন: ওরাডেক্সন ইন প্রেগন্যান্সি কি?
উত্তর: ওরাডেক্সন একটি প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের নাম।
প্রশ্ন: গর্ভবতী নারীদের কালো জিরা খাওয়া কি ঠিক?
উত্তর: বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে খেতে পারেন।
শেষকথা
প্রেগন্যান্সি বা গর্ভবতীর প্রথম সপ্তাহের লক্ষন এবং বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা করেছি। গর্ভবতী মায়ের লক্ষন, প্রেগন্যান্সির লক্ষন বুঝতে পেরেছেন। একই সাথে কখন প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন, কোথায় করবেন জেনেছেন। তারপরও সাবধানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে বুঝে নিন। প্রতি সপ্তাহের প্রেগন্যান্সি লক্ষন সমস্যা এবং সমাধান দেখুন মাই ক্লাসরুম এ। প্রেগন্যান্সি বা গর্ভবতী নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে নির্দিধায় করুন। আপনার প্রেগন্যান্সি জার্নি শুভ হোক।
Related Keys: pregnancy symptom, pregnancy test, pregnancy symptom bangla, pregnancy test kit price in bd, pregnancy week calculator etc.