ই-সেবা

জন্ম নিবন্ধন আবেদন অনলাইনে করার নিয়ম ২০২৪

জন্ম নিবন্ধন নবজাতক শিশুর নাগরিকত্বের প্রমান। বর্তমান আইন অনুযায়ী এটি বাধ্যতামূলক। এখন খুব সহজে ঘরে বসে মোবাইল দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করা যায়। আজকে জানবো কিভাবে ঘর বসে অনলাইনে Birth Certificate আবেদন করা যায়।

Table of Contents

জন্ম নিবন্ধন কেন গুরুত্বপূর্ন?

জন্ম নিবন্ধন ছাড়া নাগরিকত্ব প্রমান করা যায়না তাই সরকারি  সেবা ও সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়না।  শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি, উপবৃত্তি প্রাপ্তি সহ আরো অনেক কাজে জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন। অনেকে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে ঝামেলাবোধ করেন। এজন্য আবেদন করেননা। গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি না করে জেনে নিন আর কাজ শুরু করুন ঘরে বসেই।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন কিভাবে করবেন?

২০০৪ সালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী নবজাতক শিশু জন্ম নেয়ার পর ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। কারো কারো পক্ষে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা সম্ভব হয়না। সেক্ষেত্রে ০৫ (পাঁচ) বছরের পূর্বেই জন্ম নিবন্ধন করা উচিত হবে।

০৫ বছর পূর্বেও যদি জন্ম নিবন্ধন করা না হলে পরবর্তীতে জন্ম নিবন্ধন করতে অনেক অতিরিক্ত ডকুমেন্টস দিতে হয়। এতে, অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দিয়ে ঘরে বসেই আবেদন করতে পারেন। অথবা ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভা থেকে সরাসরি জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারেন।

যেভাবে শুরু করবেন জন্ম নিবন্ধন আবেদন

 জন্ম নিবন্ধন করার জন্য প্রথমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইটে আসতে হবে। জন্ম নিবন্ধনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিংক: https://bdris.gov.bd/br/application এই সাইটটি ভিজিট করুন। এবার এক এক করে নিচের ধাপগুলো ফলো করুন-

ধাপ-১: নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পরিচিতি

জন্ম নিবন্ধনের জন্য সাইটটিতে আসার পর নিচের চিত্রের মতো পেজ আসবে। এখান থেকে আপনাকে আপনার ঠিকানা নির্ধারন করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন (Birth Certificate) ১ম ধাপ
জন্ম নিবন্ধনের প্রথম ধাপ

এখান থেকে জন্মস্থান অথবা স্থায়ী ঠিকানা থেকে পছন্দ মত অপশন সিলেক্ট করুন। তারপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। নিচের মতো একটি ফরম দেখতে পাবেন-

জন্ম নিবন্ধন আবেদনের ২য় ধাপ
জন্ম নিবন্ধন আবেদনের ২য় ধাপ

ধাপ ০২:

জন্ম নিবন্ধন আবেদনের এ অংশ পূরন করতে মনে রাখবেন লাল স্টার দেয়া চিহ্নগুলো অবশ্যই পূরন করতে হবে।

  • নামের প্রথম অংশ বাংলায় লেখা ঘরে আপনার নামে প্রথম অংশ লিখুন। নামের শেষ অংশ বাংলায় এর ঘরে নামের শেষ অংশ লিখতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার নাম যদি একটি অংশে হয় তাহলে তা নামের শেষ অংশের ঘরে লিখুন। এক্ষেত্রে প্রথম অংশ ফাঁকা থাকবে। ধরুন, আপনার নাম শুধু “মানহা” আর অন্য কিছু নেই তখন এই অংশটুকু নামের শেষ অংশে লিখতে হবে। একই প্রক্রিয়ায় নামের ইংরেজী অংশ লিখুন।
  • সঠিক জন্ম তারিখ লিখুন
  • পিত-মাতার কততম সন্তান লিখে পরবর্তী ঘর থেকে লিঙ্গ নির্ধারণ করুন।
  • আপনার জন্মস্থানের ঠিকানা নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলা ও ইংরেজীতে লিখুন।
    সবকিছু ঠিকমতো পূরন করলে নিচের চিত্রের মতো দেখবেন-
Birth Certificate Application Form
Birth Certificate Online Form

আপনার দেয়া তথ্য সঠিক মনে হলে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। নিচের চিত্রের মতো দেখবেন। এবার নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য দিন

ধাপ ০৩: পিতা-মাতার তথ্য পূরণ

Birth Certificate Application form

ঘরে বসে অনলাইনে জন্ম সনদ পূরন করতে এই পর্যায়ে পিতামাতার তথ্য দিতে হবে। নিচের তথ্য গুলো দিয়ে সঠিকভাবে ফরম পূরন করুন।

  1. পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধনের ১৭ ডিজিট নম্বর (যদি থাকে)
  2. পিতা-মাতার সম্পূর্ণ নাম বাংলায় ও ইংরেজিতে
  3. পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর (যদি থাকে)
  4. পিতা-মাতার জাতীয়তা ( বাংলাদেশি বা অন্য কোন দেশের হলে সিলেক্ট করুন)

মনে রাখবেন, বর্তমানে পিতা-মাতার নাম অনলাইনে করতে পিতা-মাতার জন্ম সনদ অবশ্যই অনলাইনে থাকতে হবে। তানাহলে, জন্ম নিবন্ধন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ধাপ ০৪: বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা

এ ধাপে আপনাকে দুটি চেক বক্সের মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করা হবে আপনার নিবন্ধিত কোন ঠিকানা বর্তমান কিংবা স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করতে চান কিনা? নিচের চিত্রটি ফলো করলে বিষয়টি আপনার কাছে ক্লিয়ার হবে। এখান থেকে কোনটিই নয় লেখা চেক বক্স সিলেক্ট করুন।

জন্ম নিবন্ধনের ঠিকানা নির্বাচনের ফরম

এবার নিচের ফরমের মতো দেখতে পাবেন। মনে রাখবেন, জন্মস্থান থেকে যদি বর্তমান ঠিকানা আলাদা হয় তাহলে দুটি আলাদা ঠিকানা লিখুন।

জন্ম নিবন্ধনের ঠিকানা ফরম

ধাপ ০৫: জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর প্রতয়ন

এবারে আপনাকে ঘোষনা দিতে হবে যে আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদন পূর্বে আর কোথাও হয়নাই। যদি হয়ে থাকে তাহলে তারজন্য আপনি দায়ী থাকবেন। এক্ষেত্রে, আপনার বয়স ১৮ বছর হলে নিজ সিলেক্ট করুন। ১৮ বছরের কম হলে আইনানুগ অভিভাবক করবেন এবং অন্যান্য সিলেক্ট করবেন। ফলো করুন নিচের চিত্রটি-

জন্ম নিবন্ধন আবেদনের প্রত্যয়ন

ধাপ ০৬: ডকুমেন্টস সংযোজন

এপর্যায়ে জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস আপলোড করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জন্ম নিবন্ধন আপলোড করার জন্য সকল ফাইলের সাইজ হবে ১০০ কিলোবাইট এর নিচে।

জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন আবেদনের ফাইল সংযোজন

ধারা ০৭: জন্ম নিবন্ধন আবেদন রিভিউ এন্ড আপলোড

উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত সঠিকভাবে আপলোডের পরও আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদনটি রিভিউ করার সুযোগ থাকবে। কোথাও আপনার তথ্য ভুল মনে হলে সাবমিটের পূর্বে সংশোধন করে নিন। সব ঠিক থাকলে পরবর্তী লেখা বাটনে ক্লিক করুন।

সবশেষে: প্রস্তুতকৃত নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রিন্ট করবেন কিভাবে?

আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদন সঠিক হলে আইডিসহ আবেদনপত্র প্রিন্ট করার অপশন আসবে। সেখাান থেকে খুব সহজে প্রিন্ট লেখা অপশনে ক্লিক করে জন্মনিবন্ধন আবেদন প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। সাথে সাথে প্রিন্ট করার জন্য প্রিন্টার না থাকলে সেভ করে নিয়ে যেকোন আইটি সেবা প্রদানকারী সেন্টার থেকে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।

নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে?

২০২৪ সালে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে প্রাথমিক কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন। যেগুলো আপনার জন্ম তারিখসহ অন্যান্য কাগজপত্রের প্রমানক হিসেবে কাজে লাগবে। ডকুমেন্টসগেুলো হলো-

  • ১। টিকা কার্ড
  • ২। হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ
  • ৩। পিতা-মাতার তথ্য।

বয়স ০-১.৫ মাস হলে জন্ম নিবন্ধনে যা লাগবে-

  • টিকা কার্ড কিংবা হাসপাতালের ছাড়পত্র।
  • হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ
  • পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি কিংবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কপি
  • অভিভাবকের মোবাইল নম্বর

বয়স ৪৬ দিন থেকে ০৫ বছর হলে-

  • স্বাস্থ্য কর্মীর সত্যায়িত প্রত্যায়নপত্র
  • পিতা-মাতার NID কার্ডের কপি (যদি থাকে)
  • পিতা-মাতার Online Birth Certificate এর কপি (যদি থাকে)
  • স্কুল শিক্ষার্থী হলে প্রতিষ্ঠান প্রদানের সত্যায়িত প্রত্যয়ন পত্র
  • ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ
  • আবেদনকারীর অভিভাবকের মোবাইল নম্বর

৫ বছরের বেশি বয়সী সকলের জন্য-

  1. বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে সরকারি এমবিবিএস ডাক্তার কর্তৃক সত্যায়িত প্রত্যয়ন পত্র।
  2. সরকারিভাবে বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত PSC, JSC কিংবা SSC – এর সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
  3. পিতা-মাতার NID বা Birth Certificate এর কপি
  4. জন্মস্থান ও স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে হোল্ডিং ট্যাক্স এর কপি
  5. জন্ম নিবন্ধনের জন্য সঠিকভাবে পূরণকৃত আবেদন ফরম

প্রত্যেকের বয়সভেদে আলাদা আলাদা এই ডকুমেন্টসগুলো প্রয়োজন হবে ২০২৪ সালের জন্ম নিবন্ধন করার জন্য।

জন্ম নিবন্ধন ফরম

২০২৪ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করার জন্য এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে। লিংক:  https://bdris.gov.bd/br/application । তারপর নির্ধারিত ফরম পূরন করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ এ জমা দিতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন আবেদনের বর্তমান অবস্থা

আপনার আবেদনটি কোন পর্যায়ে আছে তা জানতে ভিজিট করুন https://bdris.gov.bd/br/application/status এই লিংকে । এবার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে দেখে নিন আপনার আবেদনের বর্তমান অবস্থান।

কিভাবে জন্মনিবন্ধন আবেদনটি বাতিল করবেন?

যদি আপনার জন্মনিবন্ধন আবেদনে কোন রকম ভুল থাকে তবে তা বাতিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ১৫দিন পর্যন্ত সময় পাবেন আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদনটি বাতিল করার। ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে বাতিল করার কারণ জানিয়ে আবেদন করলে বাতিল করা সম্ভব হবে। পরবর্তীতে পুনরায় আবার আবেদন করতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন সংক্রান্ত সচরাচর প্রশ্নোত্তর (FAQ’s)

প্রশ্ন: জন্ম নিবন্ধন আবেদন করবো কিভাবে?

উত্তর: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অনলাইনে এই লিংক থেকে https://bdris.gov.bd/br/application আবেদন করতে হবে।

প্রশ্ন: জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা লাগবে?

উত্তর: জন্ম নিবন্ধনে তারিখ সংশোধনে ১০০ টাকা। জন্ম তারিখ ছাড়া প্রয়োজন হয় ৫০ টাকা।

বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে?

উত্তর: 45 mmX35 mm সাইজের সাম্প্রতিক ছবি৷ এসএসসি/এনআইডি/হাসপাতালের জন্ম সংক্রান্ত নথি (বাংলাদেশী জন্মগ্রহণকারী আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে)

জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে কত সময় লাগে?

উত্তর: আবেদনপত্র একই দিনে করা যায়। তবে ক্ষেত্র বিশেষ ০২ দিন সময় লাগতে পারে।

জন্ম নিবন্ধন কোথায় করতে হয়?

উত্তর: সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা কার্যালয়/স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ জন্ম নিবন্ধন করতে হয়।

জন্ম নিবন্ধন কতবার করা যায়?

উত্তর: নিয়ম অনুযায়ী ০১ বারই আবেদন করা যায়। একের অধিকবার আবেদন করা দন্ডনীয় অপরাধ।

জন্ম নিবন্ধন আবেদনের ওয়েবসাইট কি?

উত্তর: আবেদনের ওয়েব সাইট: www.bdris.gov.bd

জন্ম নিবন্ধন যাচাই করবো কিভাবে?

উত্তর: জন্ম নিবন্ধন আবেদন যাচাই করতে হয় অনলাইনে। ওয়েবসাইট লিংক: https://everify.bdris.gov.bd/

সবশেষে: জন্ম নিবন্ধন আবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ন তাই অবহেলা না করে আজই সম্পন্ন করুন। ধন্যবাদ।

M@mun

Hasan Al Mamun is a dedicated teacher, blogger, and YouTuber who has achieved great success in his field. He was born to parents Shahjahan Topodar and Masrura Begum and grew up with a love for learning and exploration. After completing his Bachelor's degree, Hasan pursued a Master's degree in Accounting and excelled in his studies. He then began his career as a teacher, sharing his knowledge and passion for accounting with his students. In addition to teaching, Hasan is also an avid blogger and YouTuber, creating content that educates and inspires his viewers. His YouTube channel, "My Classroom," has grown to an impressive 240,000 subscribers, earning him a silver play button from YouTube. Hasan's interests include book reading, travelling, gardening, and writing, and he often incorporates these passions into his work. He strives to create an honest and supportive community in all of his endeavors, encouraging his followers to learn and grow alongside him. Overall, Hasan Al Mamun is a talented and dedicated individual who has made a significant impact in the fields of education, blogging, and content creation.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button