বাগধারা। বাংলা ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ন বাগধারার তালিকা। Bagdhara

বাগ্ধারা এমন একটি ভাষিক উপাদান, যা বাক্যের আক্ষরিক অর্থ ছাপিয়ে একটি বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। এ ধরনের শব্দগুচ্ছ বা বাক্যাংশগুলো ভাষায় প্রাণ সঞ্চারিত করে এবং বাক্যকে আরও বৈচিত্র্যময় ও অর্থপূর্ণ করে তোলে। তবে, বাগ্ধারার ব্যবহার সচেতনভাবে করতে হয়, কারণ এগুলো আক্ষরিক অর্থ ধারণ করে না, তাই একে ঠিক কীভাবে ব্যবহার করা উচিত তা ভাষা-ব্যবহারকারীর জানা প্রয়োজন। বাগ্ধারা এক ধরনের ভাষিক স্মারক, যা অতীত কালের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনারও পরিচায়ক।
বাগধারা কি?
ইংরেজি ভাষায় Idiom শব্দটি যেমন বাগ্ধারার সমার্থক, তেমনি বাংলাতেও এর বহুল ব্যবহৃত উদাহরণ রয়েছে। বাগ্ধারা এমনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হয় যে, তার শাব্দিক অর্থ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ভাবার্থ প্রকাশিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ‘কলুর বলদ’ এর শাব্দিক অর্থ হল তৈল ব্যবসায়ী জাতির ষাঁড় বা দামড়া, কিন্তু এটি সাধারণত ‘পরাধীন’ বা ‘মূর্খ’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। এরকম আরো উদাহরণ রয়েছে, যেমন ইংরেজি বাগ্ধারা “to kick the bucket,” যার অর্থ ‘মরে যাওয়া’, যদিও এখানে ‘kick’ এবং ‘bucket’ শব্দ দুটি মৃত্যু বা মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত নয়। একইভাবে, বাংলায় ‘পটল তোলা’ একটি বাগ্ধারা, যার মানে ‘বাতচিত বা কথা বলা’ নয়, বরং ‘কিছু না পাওয়া’ বা ‘অর্থহীন কথা বলা’।
বাংলা ব্যকরণ বাগধারা
বাগ্ধারা বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং কথা বলার সার্থকতা প্রমাণ করে। এটি মনের ভাব সুন্দরভাবে এবং আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। বাগ্ধারার শব্দগুচ্ছের গঠন একেবারে নির্দিষ্ট, তাই তা ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করা যায় না। যেমন, ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’ বাক্যাংশটি ‘ঢেঁকি গেলা অনুরোধে’ বললে তা স্বাভাবিক শোনায় না। তাই, বাগ্ধারার প্রচলিত রূপ অবিকৃত রেখে ব্যবহার করতে হয়।
গুরুত্বপূর্ন বাগধারার তালিকা
অক্কা পাওয়া (মারা যাওয়া):
খারাপ লোকটা আরো আগেই অক্কা পেতে পারত।
অক্ষরে অক্ষরে (যথাযথ):
দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চাই।
অদৃষ্টের পরিহাস (ভাগ্যের খেলা):
যানজট অদৃষ্টের পরিহাস নয়, মানুষেরই তৈরি।
অনধিকার চর্চা (অপরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ):
অনধিকার চর্চা তার রোগ, সব কিছুতেই কথা বলা চাই।
অন্ধকার দেখা (দিশেহারা হয়ে পড়া):
কাজের চাপে চারদিকে অন্ধকার দেখছি।
অন্ধের যষ্টি (একমাত্র অবলম্বন):
ছেলেটাই ছিল বিধবার অন্যের যষ্টি।
অমাবস্যার চাঁদ (দুর্লভ বস্তু):
তোমার দেখাই পাই না আজকাল, একেবারে অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেলে।
অরণ্যে রোদন (নিষ্ফল অনুনয়):
কৃপণ লোকের কাছে কিছু চাওয়া আর অরণ্যে রোদন করা একই কথা।
অর্ধচন্দ্র (ঘাড় ধাক্কা দেয়া):
চাইলাম চাঁদা, পেলাম অর্ধচন্দ্র!
আঁতে ঘা (খুব কষ্ট):
তোমার প্রতিবেদনে ওইসব লোকের আঁতে ঘা লেগেছে।
আকাশ কুসুম (অসম্ভব কল্পনা):
অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভের আশা! আকাশ কুসুম চিন্তা ছাড়া কিছু নয়।
আগুন নিয়ে খেলা (বিপজ্জনক ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করা):
তুমি আমার সাথে আগুন নিয়ে খেলতে এসো না।
আঙুল ফুলে কলাগাছ (হঠাৎ বড়োলোক হওয়া):
আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে তো, তাই কথাবার্তার ধরন বদলে গেছে।
আঠারো মাসে বছর (দীর্ঘসূত্রিতা):
সাত দিনের মধ্যে ও করবে এই কাজ! ওর তো আঠারো মাসে বছর।
বাগধারা বাক্য রচনা
আদা-জল খেয়ে লাগা (প্রাণপণ চেষ্টা করা):
এতদিন কাজটা ফেলে রেখেছিলে, এবার আদা-জল খেয়ে লেগে দেখো শেষ করতে পারো কিনা।
আমড়া কাঠের ঢেঁকি (অপদার্থ):
তার মতো আমড়া কাঠের ঢেঁকি লাখে একটা মেলে।
আষাঢ়ে গল্প (আজগুবি গল্প):
বর্ষাকালে আষাঢ়ে গল্প না হলে কি আসর জমে?
ইঁচড়ে পাকা (অকালপক্ব):
ইঁচড়ে পাকা ছেলেমেয়েদের দিয়ে এমন কাজ করানো কঠিন।
ইতর বিশেষ (পার্থক্য):
দুজনের কাজের মাঝে অনেক ইতর বিশেষ আছে।
উড়নচণ্ডী (বেহিসেবি):
যেমন উড়নচণ্ডী মেয়ে তেমন উড়নচণ্ডী জামাই।
উড়ে এসে জুড়ে বসা (অপ্রত্যাশিতভাবে জায়গা দখল করা):
উড়ে এসে জুড়ে বসা লোকের মুখে অনধিকার চর্চার উপদেশ মানায় না।
উড়োকথা (গুজব):
উড়োকথায় কান দিয়ো না।
উড়োচিঠি (বেনামি চিঠি):
এমন উড়োচিঠির উপর ভিত্তি করে তদন্ত করা ঠিক হবে না।
উত্তম-মধ্যম (বেদম প্রহার):
সব চোখের কপালেই উত্তম-মধ্যম লেখা থাকে, তা থেকে রেহাই নেই।
উনিশ-বিশ (সামান্য পার্থক্য):
বইটির প্রথম সংস্করণ আর দ্বিতীয় সংস্করণে পার্থক্য উনিশ-বিশ।
এককথার মানুষ (দৃঢ়সংকল্প ব্যক্তি):
আমি এককথার মানুষ; বলেছি যখন, করেই দেখাব।
গুরুত্বপূর্ণ বাগধারা
এক ঢিলে দুই পাখি (এক প্রচেষ্টায় দুই ফল):
বুঝেছি, তুমি এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাও।
এলাহি কাণ্ড (বিরাট আয়োজন):
এমন এলাহি কাণ্ড করে বসেছে। অথচ কিনা সামান্য জন্মদিনের অনুষ্ঠান।
এসপার ওসপার (চূড়ান্ত মীমাংসা):
আজ ওর সঙ্গে এসপার ওসপার করে তবেই ঘরে ফিরব।
ওজন বুঝে চলা (আত্মসম্মান রক্ষা করা):
নিজের ওজন বুঝে চললে এরকম সম্মানহানি হতো না।
কচুকাটা করা (ধ্বংস করা):
ওর সাথে লাগতে যেও না, কচুকাটা করে ছাড়বে।
কড়ায় গণ্ডায় (চুলচেরা হিসাব):
হিসাবের খাতায় সব লিখে রেখেছি, সময়মতো কড়ায় গণ্ডায় আদায় করা যাবে।
কথার কথা (গুরুত্বহীন কথা):
এটা একেবারেই কথার কথা, মানতেই হবে এমন নয়।
কপাল ফেরা (সৌভাগ্য লাভ):
বহু কাল দুঃখে কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত তার কপাল ফিরল।
কলমের এক খোঁচা (লিখিত আদেশ):
কলমের এক খোঁচায় দুর্বৃত্তদের চাকরি চলে গেল।
কলুর বলদ (একটানা খাটুনি):
মা সারাজীবন সংসারে কলুর বলদের মতো খেটেই গেলেন।
কাঁচা পয়সা (নগদ উপার্জন):
উঠতি ধনীদের কাঁচা পয়সার গরমে বাজারে সব কিছুর দাম বাড়ছে।
কাগজে কলমে (লিখিতভাবে):
কাগজে-কলমে সব প্রমাণ রয়েছে।
কাছাটিলা (অসাবধান):
এমন কাছাটিলা লোক দিয়ে দারোয়ানের কাজ হবে না।
কাঠাখোট্টা (নীরস ও অনমনীয়):
এমন কাঠখোট্টা লোককে দিয়ে রাজনীতি হয় না।
কানকাটা (নির্লজ্জ):
তার মতো কানকাটা লোক এমন মিষ্টি গালিতে অপমান বোধ করে না।
বাগধারা উদাহরণ
কান খাড়া করা (ওত পেতে থাকা):
সাবধানে কথা বলো, আশেপাশে কেউ হয়তো কান খাড়া করে আছে।
কান ভাঙানো (কুপরামর্শ):
ও নিশ্চয় আমার নামে কান ভাঙিয়েছে। আর তুমিও তা বিশ্বাস করে বসে আছ।
কিস্তিমাত করা (সফলতা লাভ):
সবচেয়ে বড়ো পুরস্কারটা পেয়ে সে একেবারে কিস্তিমাত করেছে।
কুয়োর ব্যাঙ (সংকীর্ণমনা লোক):
ও রকম কুয়োর ব্যাঙ দিয়ে নতুন কিছু করা যাবে না।
কৈ মাছের প্রাণ (যা সহজে মরে না):
শত প্রতিকূল পরিবেশেও এরা কৈ মাছের প্রাণ হয়ে বাঁচে।
কোমর বাঁধা (দৃঢ় সংকল্প):
কোমর বেঁধে কাজে নেমে পড়ো, সফলতা আসবেই।
খয়ের খাঁ (চাটুকার):
খয়ের খাঁ থেকে একটু সাবধানে থেকো।
খেজুরে আলাপ (অকাজের কথা):
কার্জের সময়ে খেজুরে আলাপ করতে ভালো লাগে না।
গড্ডলিকা প্রবাহ (অন্ধ অনুকরণ):
গড্ডলিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে পথ চলতে শেখো।
গভীর জলের মাছ (খুব চালাক):
ওর মতো গভীর জলের মাছকে নাগালে আনা কঠিন।
গরম গরম (তৎক্ষণাৎ):
সাংবাদিকরা গরম গরম খবর পেলে খুব খুশি হয়।
বাগধারা অর্থসহ বাক্য রচনা pdf
গা ঢাকা দেওয়া (পলায়ন করা):
কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করে এখন সে গা ঢাকা দিয়েছে।
গায়ে পড়া (অযাচিত):
গায়ে পড়ে কোনো কাজ করতে যেও না বাপু।
গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো (ফাঁকির মনোভাব):
গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো যার স্বভাব, তাকেও দলে রাখতে হলো।
গুড়ে বালি (আশায় নৈরাশ্য):
ঝড়ের কারণে আম ব্যবসায়ীদের লাভের আশা এবার গুড়ে বালি।
গোঁফ খেজুরে (খুব অলস):
গোঁফ খেজুরে লোককে দিয়ে এসব কাজ হবে না।
গোড়ায় গলদ (শুরুতেই ভুল):
গোড়ায় গলদ করলে হিসাব মিলবে কী করে?
গোল্লায় যাওয়া (নষ্ট হওয়া):
সৎ সঙ্গে মিশলে গোল্লায় যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া (মধ্যবর্তীকে অতিক্রম করে কাজ করা):
দাপ্তরিক কাজে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে যেয়ো না, বিপদে পড়বে।
ঘোড়ার ডিম (কিছুই না):
আস্ফালন কোরো না, তুমি আমার ঘোড়ার ডিম করতে পারবে।
চশমখোর (বেহায়া):
এমন চশমখোর লোকের সাথে আমি মিশি না।
চিনির বলদের মতো ঘানি টানা (ফল লাভে অংশীদার না হওয়া): সারাজীবন চিনির বলদের মতো ঘানি টানলে, বিনিময়ে কিছুই পেলে না।
চিনে জোঁক (নাছোড়বান্দা): লোকটি এ কাজ পাওয়ার জন্য একেবারে চিনে জোঁকের মতো লেগে আছে।
চুনোপুঁটি (সামান্য ব্যক্তি): সকলকে চুনোপুঁটি ভেবে অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
চুলোয় যাওয়া (নষ্ট হওয়া): ছোট্ট একটা ভুলের জন্য এমন পরিশ্রমের কাজটা শেষ পর্যন্ত চুলোয় গেল।
চোখ পাকানো (রাগ দেখানো): আমার দিকে এমন চোখ পাকানোর কারণ কী?
চোখ বুজে থাকা (ভূমিকা না রাখা): প্রতিবেশীর বিপদে চোখ বুজে থাকতে নেই।
চোখে সরষে ফুল দেখা (বিপদে দিশেহারা হওয়া): পরীক্ষা সামনে, তাই চোখে সরষে ফুল তো দেখবেই।
ছা-পোষা (অত্যন্ত গরিব): ছা-পোষা লোক আমি, দেশ নিয়ে ভাবার সময় কোথায়?
বাগধারা তালিকা pdf
ছেলের হাতের মোয়া (সহজলভ্য): সবকিছু ছেলের হাতের মোয়া ভেবো না।
জগাখিচুড়ি (বিশৃঙ্খল): সবকিছু জগাখিচুড়ি করে রেখেছ দেখছি!
জিলাপির প্যাচ (কূটবুদ্ধি): বাইরে থেকে দেখতে সরল হলেও লোকটির অন্তরে জিলাপির প্যাচ।
ঝোপ বুঝে কোপ মারা (অবস্থা বুঝে সুযোগ গ্রহণ): তিনি ঝোপ বুঝে কোপ মেরে সফল হয়েছেন।
টইটম্বুর (ভরপুর): বৃষ্টির পানিতে পুকুরটা একেবারে টইটম্বুর হয়ে আছে।
টনক নড়া (সজাগ হওয়া): আগে কথা বললে না, এতক্ষণে তোমার টনক নড়লে?
টাকার গরম (বিত্তের অহংকার): সব সময়ে টাকার গরম দেখানো ঠিক নয়।
ঠোঁট কাটা (বেহায়া): আজকাল ঠোঁটকাটা লোকের অভাব নেই।
ডান হাতের ব্যাপার (খাওয়া): আগে ডান হাতের ব্যাপারটা সেরে নেই, পরে অন্য কথা।
ডুব মারা (পালিয়ে যাওয়া): যেই আমি বিপদে পড়লাম, অমনি তোমরা সবাই ডুব মারলে।
ডুমুরের ফুল (অদৃশ্য বস্তু): তুমি দেখি একেবারে ডুমুরের ফুল হয়ে গেছ।
তালকানা (কাণ্ডজ্ঞানহীন): এমন তালকানা লোকের সাথে চলা যায় না।
তালপাতার সেপাই (ছিপছিপে): শরীরের প্রতি যত্ন নাও, দিন দিন তুমি তো তালপাতার সেপাই হয়ে যাচ্ছ।
তাসের ঘর (স্বল্পস্থায়ী): বাবার চাকরি যাওয়ায় মায়ের সব স্বপ্ন তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল।
মজার বাগধারা
তিলকে তাল করা (ছোটোকে বড়ো করা): তিলকে তাল করা ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
তীর্থের কাক (সুযোগ সন্ধানী): শরণার্থীরা রিলিফের চালের জন্য তীর্থের কাকের মতো বসে আছে।
তেল মাখানো (তোশামোদ): সাহেবকে তেল মাখানোর লোকের অভাব নেই।
থতমত খাওয়া (প্রস্তুত হয়ে পড়া): ক্লাসে হঠাৎ নতুন শিক্ষক দেখে সবাই থতমত খেয়ে গেলাম।
দা-কুমড়া সম্পর্ক (শত্রুতা): বাপ-চাচাদের দা-কুমড়া সম্পর্ক এখন চাচাতো ভাইদের মধ্যে টিকে আছে।
দিবাস্বপ্ন (অলীক কল্পনা): দিবাস্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে না এমন লোক মেলা ভার।
দুধের মাছি (সুসময়ের বন্ধু): সুযোগসন্ধানীরা সব সময়ে দুধের মাছির মতো ক্ষমতার আশপাশে ঘোরে।
ধরাকে সরা জ্ঞান (অহংকার করা): তুমি ধরাকে সরা জ্ঞান করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছ।
ননীর পুতুল (শ্রমবিমুখ): ছেলেটাকে একেবারে ননীর পুতুল বানিয়ে রেখেছে, কোনো কাজ করতে দেয় না।
নয়-ছয় (অপব্যবহার): তুমি নয়-ছয় করে টাকাগুলো শেষ কোরো না।
পটল তোলা (মারা যাওয়া): আজ বাদে কাল পটল তুলবে, অথচ তার মিথ্যাচার গেল না।
পুঁটি মাছের প্রাণ (ছোটো মন): পুঁটি মাছের প্রাণ নিয়ে নেতা হওয়া যায় না।
বইয়ের পোকা (সব সময়ে বই পড়ে এমন): পরিচিত লোকদের কাছে বইয়ের পোকা হিসেবে তার নাম আছে।
গুরুত্বপূর্ন বাগধারা তালিকা
ভরাডুবি (সর্বনাশ): ব্যাবসা তো ভালোই গুছিয়েছিলে, এমন ভরাডুবি হলো কীভাবে?
ভিজে বিড়াল (কপট ব্যক্তি): সাবধান, আমাদের চারদিকে ভিজে বিড়ালের অভাব নেই।
ভিটায় ঘুঘু চরানো (নিঃষ করা): ও হুমকি দিয়ে বলেছে, আমার ভিটায় নাকি ঘুঘু চরাবে।
ভুঁইফোঁড় (নতুন আগমন): ভূঁইফোড় সাংবাদিকদের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকের সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
মগের মুল্লুক (অরাজকতা): দেশ তো আর মগের মুল্লুক হয়ে যায়নি যে, এমন দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাবে।
মণিকাঞ্চন যোগ (উপযুক্ত মিলন): যেমন বর তেমন কনে- এ যেন মণিকাঞ্চন যোগ।
মানিক জোড় (গভীর সম্পর্ক): সহকর্মীদের এমন মানিক জোড় খুব কমই দেখা যায়।
লেফাফা দুরন্ত (বাইরে পরিপাটি): লোকটি লেফাফা দুরন্ত হলে কী হবে, আসলে মূর্খ।
সম্পমে চড়া (প্রচণ্ড উত্তেজনা): এসব দুর্নীতি দেখে তার মেজাজ সপ্তমে চড়ে গেল।
সোনার সোহাগা (উপযুক্ত মিলন): বর-কনেকে খুব সুন্দর মানিয়েছে, এ যেন সোনায় সোহাগা।
হাতটান (চুরির অভ্যাস): লোকটির হাতটানের অভ্যাস আছে, সাবধানে থেকো।
হাতেখড়ি (শিক্ষার শুরু): ওস্তাদ রবিউল ইসলামের কাছে তাঁর সংগীত চর্চার হাতেখড়ি হয়।
বাংলা ব্যাকরণের বাগধারা
অগাধ জলের মাছ (অত্যন্ত চালাক): আকিজকে দেখে সরল মনে হলেও আসলে তাকে চেনা বড়ই কঠিন, ও যেন অগাধ জলের মাছ।
অনুরোধে ঢেঁকি গেলা (পরের অনুরোধে কষ্ট স্বীকার করা): কাজটি বড়ই কঠিন, কিন্তু বন্ধুত্ব সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়ে মামুন অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে বাধ্য হলো।
অগ্নিশর্মা (নিরতিশয় ক্রোধ): তার অগ্নিশর্মা রূপ দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী (সামান্য বিদ্যার অহংকার): অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী লোকেরা জীবনে উন্নতি করতে পারে না।
অন্ধের নড়ি (একমাত্র অবলম্বন): স্বামীর মৃত্যুর পর রতনই তার মায়ের অন্ধের নড়ি।
অজগরবৃত্তি (আলসেমি): তোমার অজগরবৃত্তির স্বভাবই আমাদের দুরবস্থার মূল কারণ।
অ আ ক খ (প্রাথমিক জ্ঞান): অ আ ক খ জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও কৃষ্ণ চাকরিটা পেলো কীভাবে?
অগস্ত্য যাত্রা (চির প্রস্থান): চিত্তরঞ্জন দাশ সূরাইকে কাঁদিয়ে অগস্ত্য যাত্রা করলেন।
আক্কেল সেলামি (নির্বুদ্ধিতার দণ্ড): ৩০ টাকা বাঁচাতে গিয়ে বিনা টিকিটে গাড়িতে চড়ে ১০০ টাকা আক্কেল সেলামি দিতে হলো।
আক্কেল গুড়ুম (হতবুদ্ধি): ইঁচড়ে পাকা ছেলেটার কথা শুনে সবার আক্কেল গুড়ুম।
আকাশ থেকে পড়া (বিস্মিত হওয়া): ছেলের চুরির কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লে, বলি, ছেলে সাধু ছিল কবে?
আড়িপাতা (আড়াল থেকে শোনা): টেলিফোনে আড়ি পেতে আজকাল সন্ত্রাসী ধরা কঠিন কাজ নয়।
আকাশ-পাতাল (দুস্তর ব্যবধান): মিজান ও আরজু সহোদর হলেও উভয়ের মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।
১০০০ বাগধারা
আকাশ ভেঙে পড়া (মহাবিপদ): গহনা চুরির সংবাদ পেয়ে জমিরনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।
আকাশে তোলা (মাত্রারিক্ত প্রশংসা): রহিম এসএসসিতে এ+ পেয়েছে বলে গ্রামসুদ্ধ মানুষ তাকে আকাশে তুলছে।
আক্কেল দাঁত (বুদ্ধির পরিপক্বতা): সোহেল অপদার্থ ছেলে, তার এখনো আক্কেল দাঁত গজায়নি।
আখের গোছানো (স্বার্থ হাসিল করা): স্বার্থপর ব্যক্তিরা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে, এ যেন আখের গোছানোর শামিল।
আগুন লাগা সংসার (ভেঙে যাচ্ছে এমন সংসার): স্বামী-স্ত্রীতে খুবই দ্বন্দ্ব, এ যেন আগুন লাগা সংসার।
ইঁদুর কপালে (মন্দভাগ্য): নাফিসের মতো ইঁদুর কপালে আর দ্বিতীয়টি নেই, সাতবারেও এসএসসি পাস করতে পারেনি।
ইলশেগুঁড়ি (গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি): দুদিন ধরেই থেমে থেমে গুঁড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে, একেই বলা হয় ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি।
ঈদের চাঁদ (বহু আকাঙ্ক্ষিত বস্তু): প্রবাসী পুত্র দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে আসায় বাবা যেন ঈদের চাঁদ হাতে পেয়েছেন।
উড়ো কথা (গুজব): রহিম মিয়াকে এখানে জড়িও না— উনি উড়ো কথায় কান দেন না।
উঠতে-বসতে (যখন-তখন): আর বলো না, অফিসের নতুন বড় সাহেব একটু বদমেজাজের, উঠতে-বসতে কথা শোনান।
উঠে-পড়ে লাগা (দৃঢ় সংকল্প): পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার জন্য সীমা এবার উঠে পড়ে লেগেছে।
উভয় সংকট (দু দিকেই বিপদ): বাবার কথায় রাজি হলে মা একাকী হয়ে যাবেন আর মার কথায় রাজি হলে বাবা দেশছাড়া হবেন, আমি পড়েছি উভয় সংকটে।
উলুবনে মুক্তা ছড়ানো (অপাত্রে দান)
ভালো মানুষের কাছে ধর্মের কাহিনি না বললে যেমন ক্ষতি নেই, তেমনি অপাত্রে দান করলেও কোনো লাভ নেই। এ যেন উলুবনে মুক্তা ছড়ানো।
ঊনপাঁজুরে (মন্দভাগ্য)
ঊনপাঁজুরে লোকটি ব্যবসা করার চেষ্টায় বারবার ব্যর্থ হচ্ছে—লোকসান যেন তার পিছু ছাড়ে না।
ঊনপঞ্চাশ বায়ু (পাগলামি)
জাহিদ হোসেনের অদ্ভুত আচরণ দেখে মনে হয় তার ওপর ঊনপঞ্চাশ বায়ু ভর করেছে।
এক হাত নেওয়া (জব্দ করা)
খলিল চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ, তাই তার সঙ্গে ঝামেলা করলে সে এক হাত নিয়ে ছাড়বে।
একাই একশ (অসাধারণ কুশলী)
নয়ন এত দক্ষ যে, সে একাই একশ। তাকে এই কাজের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে।
একনজর (অতি অল্প সময়ের জন্য)
মেয়েকে একনজর দেখার জন্য মায়ের মন ছটফট করছে।
এক মাঘে শীত যায় না (বিপদ একবার আসে না)
সুমনের বিপদ কাটলেও সে জানে, এক মাঘে শীত যায় না। ভবিষ্যতে আরও বিপদ আসতে পারে।
এক ক্ষুরে মাথা মোড়ানো (একই প্রকৃতির লোক)
সেন্টু ও পিন্টু দুজনেই খারাপ লোক, তারা যেন একই ক্ষুরে মাথা মোড়ানো।
এক বনে দুই বাঘ (প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী)
দুই জমির মালিক নিজেদের জমি রক্ষার জন্য লড়াই করছে। এ যেন এক বনে দুই বাঘ।
ওজন বুঝে কথা বলা (সুচিন্তিতভাবে কথা বলা)
ওজন বুঝে কথা বললে ভবিষ্যতে বিপদে পড়তে হয় না।
ওঁৎ পাতা (সুযোগের সন্ধানে থাকা)
বসির জঙ্গলে শিকার ধরার আশায় ওঁৎ পেতে বসেছিল।
ওষুধে ধরা (প্রার্থিত ফল পাওয়া)
রোদেলা তার মামার পরামর্শে পড়াশোনায় মন দিয়েছে এবং দারুণ উন্নতি করেছে। একেই বলে ওষুধে ধরা।
ওষুধ পড়া (যথাযোগ্য প্রভাব পড়া)
সীমা দিদির পরামর্শ আজ অমিতের মায়ের ওপর একেবারে ওষুধের মতো কাজ করেছে।
কলির সূচনা (কষ্টের সূচনা)
মহিলার একমাত্র সন্তান মারা যাওয়ায় তার জীবনে কলির সূচনা হয়েছে।
ক-অক্ষর গোমাংস (বর্ণ পরিচয়হীন মূর্খ)
বেলাল প্রচুর ধনসম্পদের মালিক হলেও সে ক-অক্ষর গোমাংস।
কলমের খোঁচা (লিখে ক্ষতি করা)
সুদখোর মহাজন কৃষকদের প্রতারণা করে কলমের খোঁচায় সর্বস্বান্ত করে।
কলম পেষা (একঘেয়ে কেরানির কাজ)
জীবনের স্বাদ বলতে কিছুই পেলাম না, কেবল কলম পেষার কাজই করে গেলাম।
কচ্ছপের কামড় (যা সহজে মরে না)
চোরের প্রাণ কচ্ছপের কামড়ের মতো। এতবার মার খেয়েও সে টিকে আছে।
কুমিরের সান্নিপাত (অসম্ভব ব্যাপার)
কাজটি কুমিরের সান্নিপাত মনে হলেও বুদ্ধিমান জলিল তা সম্পন্ন করেছে।
কথা চালা (রটনা করা)
লোকটি মিথ্যা কথা রটিয়ে প্রতিবেশীর সংসার ভেঙে দিয়েছে।
কত ধানে কত চাল (যথার্থ হিসাব-নিকাশ)
সংসারের দায়িত্ব পেলে বুঝবে কত ধানে কত চাল।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব (অমূলক বস্তু)
রাষ্ট্রদ্রোহীদের কল্যাণের প্রতিশ্রুতি যেন কাঁঠালের আমসত্ত্ব।
কড়ার ভিখারী (নিঃস্ব ব্যক্তি)
সিদ্দিক সাহেব একসময় জমিদার ছিলেন, এখন তিনি কড়ার ভিখারী।
কাঠের পুতুল (জড় পদার্থের মতো নিষ্ক্রিয়)
দুর্ঘটনার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলে কী হবে? কাঠের পুতুল হয়ে বসে থাকবে?
কেউ কেটা (সামান্য)
কেউ কেটা লোকের বড় কথা শুনে আমার রাগ হলো।
কড়িকাঠ গোনা (কাজ না করে সময়ক্ষেপণ)
কাজের সময় কড়িকাঠ গুনলে নিজের ক্ষতি ছাড়া কিছুই হবে না।
কাঁচা বাঁশে ঘুণে ধরা (অল্প বয়সে নষ্ট হয়ে যাওয়া)
করিম খারাপ লোকদের সঙ্গে মিশে অল্প বয়সেই নষ্ট হয়ে গেছে।
কেঁচো গণ্ডুষ করা (পুনরায় আরম্ভ করা)
অঙ্কটি ঠিকমতো কষতে না পেরে মতিন আবার কেঁচো গণ্ডুষ করল।
কানে তোলা (গুরুত্ব দেওয়া)
আমার কথা কানে তুললে আজ এ বিপদ হতো না।
কুনোব্যাঙ (সীমাবদ্ধ জ্ঞান)
ঘরে বসে থাকার চেয়ে কাজ শেখো। কুনোব্যাঙ হয়ে বসে থেকো না।
কানে তুলো দেওয়া (আক্ষেপ না করা)
অন্যের কথা শুনে মিজান আর কষ্ট পায় না, কারণ সে কানে তুলো দিয়েছে।
কাপুড়ে বাবু (বাহ্যিক সভা)
কাপুড়ে বাবুর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সত্যিকারের ভদ্রলোকের অভাব।
কোণঠাসা (জব্দ করা)
মাহফুজ বড় সাহেবের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে অফিসে কোণঠাসা হয়ে গেছে।
খণ্ড প্রলয় (তুমুল কাণ্ড)
ভাইদের জমি নিয়ে খণ্ড প্রলয় শুরু হয়ে গেল।
খোদার খাসি (ইষ্টপুষ্ট)
বাবার সংসারে বসে খেয়ে খেয়ে খোদার খাসি হয়েছো!
খুঁটে খাওয়া (স্বাবলম্বী হওয়া)
ছেলেটি স্বাবলম্বী হলে আমি চিন্তামুক্ত হবো।
খতিয়ে দেখা (বিবেচনা করা)
বিষয়টি আগে খতিয়ে দেখে তারপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
খাদা নাকে তিলক (অশোভন সাজ)
শোকের বাড়িতে এমন সাজে উপস্থিত হওয়া মানে খাদা নাকে তিলক পরা।
উলুবনে মুক্তা ছড়ানো (অপাত্রে দান): ভড লোকের কাছে ধর্মের কাহিনি বলা আর না বলা উভয়ই সমান, কারণ উলুবনে মুক্ত ছড়ালে কোনো লাভ হয় না।
ঊনপাঁজুরে (মন্দভাগ্য): ঊনপাঁজুরে লোকটার আর কারবার করা ঠিক নয়— কারণ লোকসান তার পিছু ছাড়ছে না।
ঊনপঞ্চাশ বায়ু (পাগলামি): জাহিদ হোসেনের মতিগতির কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই, মনে হয় তার ওপর ঊনপঞ্চাশ বায়ু ভর করেছে।
এক হাত লওয়া (জব্দ করা): চেয়ারম্যানের খাস লোক খলিল, ওর সাথে বাধিও না, সুযোগ বুঝে ও এক হাত নিয়ে তবেই ছাড়বে।
একাই একশ (অসাধারণ কুশলী): নয়নের ওপর ভরসা রাখো, এ কাজ ও করতে পারবে, কারণ ও একাই একশ।
একনজর (অতি অল্প সময়ের জন্য): মেয়েকে দেখার জন্য মায়ের মন ছটফট করছে, তাকে একনজর দেখতে পেলেই খুশি হবে।
এক মাঘে শীত যায় না (বিপদ একবার আসে না): সুমনের বিপদে আমি এগিয়ে গেলেও সে আমার বিপদে আসল না, এক মাঘে শীত যায় না।
এক ক্ষুরে মাথা মোড়ানো (একই প্রকৃতির লোক): সেন্টু যেমন বদ পিন্টুও তেমনি উভয়ে যেন একই ক্ষুরে মাথা মুড়িয়েছে।
এক বনে দুই বাঘ (প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী): দুজনে চরের জমিটুকু যেকোনো মূল্যে দখলে নিতে চান- এ যেন এক বনে দুই বাঘ।
বাগধারা অর্থ কি
ওজন বুঝে কথা বলা (সুচিন্তিতভাবে কথা বলা): নিজের ওজন বুঝে কথা বললে কারো কাছে লজ্জা পেতে হয় না।
ওঁৎ পাতা (সুযোগের সন্ধানে থাকা): জঙ্গলের মধ্যে শিকারের আশায় বসির ওঁৎ পেতে বসেছিল।
ওষুধে ধরা (প্রার্থিত ফল পাওয়া): মামার পরামর্শে রোদেলার পড়াশোনার আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। একেই বলে ওষুধে ধরা।
ওষুধ পড়া (যথাযোগ্য প্রভাব পড়া): আজ সীমা দিদির কথা অমিতের মার ওপর একেবারে যেন ওষুধ পড়েছে।
কলির সূচনা (কষ্টের সূচনা): অসহায় মহিলার এক মাত্র সন্তান মরে যাওয়ায় তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, কেবল কলির সূচনা।
ক-অক্ষর গোমাংস (বর্ণ পরিচয়হীন মূর্খ): বেলাল অনেক ধন-সম্পদের মালিক, কিন্তু সে একেবারে ক অক্ষর গোমাংস।
কলমের খোঁচা (লিখে ক্ষতি করা): সুদখোর মহাজনরা অনেক সময় দলিলে প্যাঁচ লাগিয়ে কৃষককে সর্বস্বান্ত করে, একেই বলে কলমের খোঁচা।
কলম পেষা (একঘেয়ে কেরানির কাজ): জীবনের স্বাদ বলে কিছুই পেলাম না, সারাজীবন শুধু কলম পিষেই কাটিয়ে দিলাম।
কচ্ছপের কামড় (যা সহজে মরে না): চোরের প্রাণটি যেন কচ্ছপের কামড়, এত মার খেয়েও টিকে রয়েছে।
কুমিরের সান্নিপাত (অসম্ভব ব্যাপার): কাজটি কুমিরের সান্নিপাত হলেও বুদ্ধিমান জলিলের কাছে তা সম্ভবপর।
কথা চালা (রটনা করা): লোকটি প্রতিবেশীর সংসারে মিথ্যা খবর দিয়ে সংসার ভেঙেছে, এ রকম কথা চালানো মানুষকে কেউ বিশ্বাস করে না।
পরীক্ষার জন্য বাগধারা
কত ধানে কত চাল (যথার্থ হিসাব-নিকাশ): যদি সংসারের বোঝাটা ঘাড়ে পড়ত, তাহলে বুঝতে কত ধানে কত চাল।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব (অমূলক বস্তু): রাষ্ট্রদ্রোহীদের মুখে রাষ্ট্রের কল্যাণের কথা কাঁঠালের আমসত্ত্ব ছাড়া বৈ কিছু নয়।
কড়ার ভিখারী (নিঃস্ব ব্যক্তি): একসময় সিদ্দিক সাহেব জমিদার শ্রেণির ছিলেন, কিন্তু আজ ভাগ্য দোষে একেবারে কড়ার ভিখারী হয়ে গেছেন।
কাঠের পুতুল (জড় পদার্থের মতো নিষ্ক্রিয়): চোখের সামনে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল আর তুমি চেয়ে চেয়ে দেখলে, কাঠের পুতুল নাকি?
কেউ কেটা (সামান্য): কেউ কেটা লোকের মুখে বড় কথা শুনে আমার শরীর জ্বলে উঠল।
কড়িকাঠ গোনা (কাজ না করে সময়ক্ষেপণ): কাজের সময় কড়িকাঠ গুনলে লাভ নয় বরং তোমার ক্ষতিই হবে।
কাঁচা বাঁশে ঘুণে ধরা (অল্প বয়সে নষ্ট হয়ে যাওয়া): করিম খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে নষ্ট হয়ে গেছে, তাই বাকি জীবন অন্ধকার, কাঁচা বাঁশে ঘুণে ধরলে এমনই হয়।
কেঁচো গণ্ডুষ করা (পুনরায় আরম্ভ করা): অঙ্কটি কষতে গিয়ে মতিন উত্তর মিলাতে পারছে না, তাকে কেঁচো গণ্ডুষ করতে হবে।
কানে তোলা (গুরুত্ব দেওয়া): কতবার বলেছি মেয়েটির দিকে খেয়াল রেখ, আমার কথা কানে তুললে আজকে তার এ সর্বনাশ হতো না।
কুনোব্যাঙ (সীমাবদ্ধ জ্ঞান): শুধু ঘরে বসে বসে কী ভাবছ? কুনোব্যাঙ হয়ে বসে না থেকে কাজে লেগে পড়।
কানে তুলো দেওয়া (আক্ষেপ না করা): মিজান ভালো চাকরি না পেয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন, তাই অন্যের কটু কথাতে কান দেয় না- আসলে তিনি কানে তুলো দিয়েছেন।
ব্যকরনের বাগধারার তালিকা
উলুবনে মুক্তা ছড়ানো (অপাত্রে দান): ভড লোকের কাছে ধর্মের কাহিনি বলা আর না বলা উভয়ই সমান, কারণ উলুবনে মুক্ত ছড়ালে কোনো লাভ হয় না।
ঊনপাঁজুরে (মন্দভাগ্য): ঊনপাঁজুরে লোকটার আর কারবার করা ঠিক নয়— কারণ লোকসান তার পিছু ছাড়ছে না।
ঊনপঞ্চাশ বায়ু (পাগলামি): জাহিদ হোসেনের মতিগতির কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই, মনে হয় তার ওপর ঊনপঞ্চাশ বায়ু ভর করেছে।
এক হাত লওয়া (জব্দ করা): চেয়ারম্যানের খাস লোক খলিল, ওর সাথে বাধিও না, সুযোগ বুঝে ও এক হাত নিয়ে তবেই ছাড়বে।
একাই একশ (অসাধারণ কুশলী): নয়নের ওপর ভরসা রাখো, এ কাজ ও করতে পারবে, কারণ ও একাই একশ।
একনজর (অতি অল্প সময়ের জন্য): মেয়েকে দেখার জন্য মায়ের মন ছটফট করছে, তাকে একনজর দেখতে পেলেই খুশি হবে।
এক মাঘে শীত যায় না (বিপদ একবার আসে না): সুমনের বিপদে আমি এগিয়ে গেলেও সে আমার বিপদে আসল না, এক মাঘে শীত যায় না।
এক ক্ষুরে মাথা মোড়ানো (একই প্রকৃতির লোক): সেন্টু যেমন বদ পিন্টুও তেমনি উভয়ে যেন একই ক্ষুরে মাথা মুড়িয়েছে।
এক বনে দুই বাঘ (প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী): দুজনে চরের জমিটুকু যেকোনো মূল্যে দখলে নিতে চান- এ যেন এক বনে দুই বাঘ।
ওজন বুঝে কথা বলা (সুচিন্তিতভাবে কথা বলা): নিজের ওজন বুঝে কথা বললে কারো কাছে লজ্জা পেতে হয় না।
ওঁৎ পাতা (সুযোগের সন্ধানে থাকা): জঙ্গলের মধ্যে শিকারের আশায় বসির ওঁৎ পেতে বসেছিল।
ওষুধে ধরা (প্রার্থিত ফল পাওয়া): মামার পরামর্শে রোদেলার পড়াশোনার আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। একেই বলে ওষুধে ধরা।
ওষুধ পড়া (যথাযোগ্য প্রভাব পড়া): আজ সীমা দিদির কথা অমিতের মার ওপর একেবারে যেন ওষুধ পড়েছে।
কলির সূচনা (কষ্টের সূচনা): অসহায় মহিলার এক মাত্র সন্তান মরে যাওয়ায় তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, কেবল কলির সূচনা।
বাংলা ২য়পত্র বাগধারা
ক-অক্ষর গোমাংস (বর্ণ পরিচয়হীন মূর্খ): বেলাল অনেক ধন-সম্পদের মালিক, কিন্তু সে একেবারে ক অক্ষর গোমাংস।
কলমের খোঁচা (লিখে ক্ষতি করা): সুদখোর মহাজনরা অনেক সময় দলিলে প্যাঁচ লাগিয়ে কৃষককে সর্বস্বান্ত করে, একেই বলে কলমের খোঁচা।
কলম পেষা (একঘেয়ে কেরানির কাজ): জীবনের স্বাদ বলে কিছুই পেলাম না, সারাজীবন শুধু কলম পিষেই কাটিয়ে দিলাম।
কচ্ছপের কামড় (যা সহজে মরে না): চোরের প্রাণটি যেন কচ্ছপের কামড়, এত মার খেয়েও টিকে রয়েছে।
কুমিরের সান্নিপাত (অসম্ভব ব্যাপার): কাজটি কুমিরের সান্নিপাত হলেও বুদ্ধিমান জলিলের কাছে তা সম্ভবপর।
কথা চালা (রটনা করা): লোকটি প্রতিবেশীর সংসারে মিথ্যা খবর দিয়ে সংসার ভেঙেছে, এ রকম কথা চালানো মানুষকে কেউ বিশ্বাস করে না।
কত ধানে কত চাল (যথার্থ হিসাব-নিকাশ): যদি সংসারের বোঝাটা ঘাড়ে পড়ত, তাহলে বুঝতে কত ধানে কত চাল।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব (অমূলক বস্তু): রাষ্ট্রদ্রোহীদের মুখে রাষ্ট্রের কল্যাণের কথা কাঁঠালের আমসত্ত্ব ছাড়া বৈ কিছু নয়।
কড়ার ভিখারী (নিঃস্ব ব্যক্তি): একসময় সিদ্দিক সাহেব জমিদার শ্রেণির ছিলেন, কিন্তু আজ ভাগ্য দোষে একেবারে কড়ার ভিখারী হয়ে গেছেন।
কাঠের পুতুল (জড় পদার্থের মতো নিষ্ক্রিয়): চোখের সামনে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল আর তুমি চেয়ে চেয়ে দেখলে, কাঠের পুতুল নাকি?
কেউ কেটা (সামান্য): কেউ কেটা লোকের মুখে বড় কথা শুনে আমার শরীর জ্বলে উঠল।
কড়িকাঠ গোনা (কাজ না করে সময়ক্ষেপণ): কাজের সময় কড়িকাঠ গুনলে লাভ নয় বরং তোমার ক্ষতিই হবে।
কাঁচা বাঁশে ঘুণে ধরা (অল্প বয়সে নষ্ট হয়ে যাওয়া): করিম খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে নষ্ট হয়ে গেছে, তাই বাকি জীবন অন্ধকার, কাঁচা বাঁশে ঘুণে ধরলে এমনই হয়।
কেঁচো গণ্ডুষ করা (পুনরায় আরম্ভ করা): অঙ্কটি কষতে গিয়ে মতিন উত্তর মিলাতে পারছে না, তাকে কেঁচো গণ্ডুষ করতে হবে।
বাগধারার তালিকা
কানে তোলা (গুরুত্ব দেওয়া): কতবার বলেছি মেয়েটির দিকে খেয়াল রেখ, আমার কথা কানে তুললে আজকে তার এ সর্বনাশ হতো না।
কুনোব্যাঙ (সীমাবদ্ধ জ্ঞান): শুধু ঘরে বসে বসে কী ভাবছ? কুনোব্যাঙ হয়ে বসে না থেকে কাজে লেগে পড়।
কানে তুলো দেওয়া (আক্ষেপ না করা): মিজান ভালো চাকরি না পেয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন, তাই অন্যের কটু কথাতে কান দেয় না- আসলে তিনি কানে তুলো দিয়েছেন।
ঠারে ঠারে (ইঙ্গিতে): ঠাপে ঠারে তুমি লোকটিকে কী বললে?
ঠোঁট ফুলান (অভিমান করা): কিছু হতেই তুমি এমন ঠোঁট ফুলাও কেন?
ঠেলার নাম বাবাজি (চাপে পড়ে কারুর হওয়া): কোনো মতেই টাকা আদায় করতে পারছিলাম না, যেই পুলিশের কথা বলেছি অমনি টাকাটা দিয়ে দিল- একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজি।
ডিমে রোগা (চির বুগণ): ডিমে রোগা ছেলেকে নিয়ে মায়ের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
ডুবে ডুবে জল খাওয়া (গোপনে কাজ করা): রিফা এতদিন ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিল, সেদিন ধরা পড়ে গেছে।
ডাকাবুকো (নির্ভীক, দূরন্ত): শরণ ডাকাবুকো হলে কী হবে, বাবার শাসনকে সে ঠিকই ভয় পায়।
ডান হাতের কাজ (খাওয়া): ডান হাতের কাজ শেষ করেই আমাকে ঢাকার উদ্দেশে বের হতে হবে।
বাগবিধি বাগধারা
টু মারা (চেষ্টা/অনুসন্ধান): ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে মিনা লাইব্রেরিতে নতুন বই পড়তে একটু-আধটু ঢু মারে।
ঢেঁকির কচকচি (বিরক্তিকর অবস্থা): সারাদিন তোমার ঢেঁকির কচকচি শুনতে আর ভালো লাগে না।
ঢিমে তেতলা (মন্থর): তোমার কাজে যে ঢিমে তেতলা দেখছি, তা মনে হয় সম্পন্ন করতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যাবে।
ঢাক ঢাক গুড় গুড় (গোপন করার চেষ্টা): তোমার সবসময় ঢাক গুড় গুড় করা স্বভাব, যা বলার স্পষ্ট করে বলতে পারো না?
ঢাকের কাঠি (তোষামোদকারী): তোমার ওপর বিশ্বাস করা বোকামি, কারণ তুমি তো একটা ঢাকের কাঠি।
ঢাক পেটানো (প্রচার করা): রুনা বলে, আজকাল নিজের ঢাক নিজে না পেটালে কাজ হয় না।
ঢাকে বাড়ি পড়া (কাজ আরম্ভ করা): ঢাকে বাড়ি পড়েছে তাড়াতাড়ি উঠে পড়।
তাক লাগান (অবাক করা): কামারের ছেলে ডাক্তারিতে চান্স পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
তুলাধোনো হওয়া (প্রহার বা মার খাওয়া): ডাকতেরা ডাকাতি করতে এসে জনতার হাতে তুলাধোনা হয়েছে।
তড়িঘড়ি করা (তাড়াহুড়া করা): একটু চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নাও, তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিলে তার মানুষ দিতে হয়।
তামার বিষ (অর্থের কুপ্রভাব): তামার বিষে চেয়ারম্যান ধরাকে সরাজ্ঞান করছে।
তোলপাড় করা (সর্বত্র ছুটে বেড়ানো): ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তোলপাড় করা মাহমুদের স্বভাব।
তাসের ঘর (ক্ষণস্থায়ী): সংসারটা আসলে একটা তাসের ঘর বৈ কিছু নয়।
তেল দেওয়া (খোশামোদ করা): আলম সাহেব পরিশ্রম না করে বড় সাহেবকে তেল দিয়েই কাজ হাসিল করতে চায়।
তুলসী বনের বাঘ (ভণ্ড): তিতাসের চালচলন সহজ মনে হলেও আসলে সে একটা তুলসী বনের বাঘ।
থৈ থৈ করা (প্লাবিত হওয়া): এবারের প্রবল বর্ষায় খালবিল থৈ থৈ করছে।
থৈ পাওয়া (সীমা পাওয়া): মিজান কঠোর পরিশ্রম করেও বড় সাহেবের কাছে থৈ পেল না, কারণ সে মিথ্যাবাদী।
থোড়াই কেয়ার করা (কিছুমাত্র গ্রাহ্য না করা): তোমার এই লাফালাফি আমরা থোড়াই কেয়ার করি, যা পার কর।
গুরুত্বপূর্ন বাংলা ২য়পত্র বাগধারা
থ মেরে যাওয়া (কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া): হাজি সাহেবের মুখে মিথ্যে কথা শুনে আমি থ মেরে গেলাম।
দর-কষাকষি (দরদাম করা): চৌধুরী সাহেব বাজারে গেলেই দর-কষাকষি করেন, এ যেন তার চির স্বভাব।
দাঁত ভাঙা (দর্প চূর্ণ করা): স্বপন হঠাৎ বড় লোক হয়ে কথার দাপট দেখায়, তার কথার দাঁত ভাঙা জবাব দিতে হবে।
দুধের ছেলে (কচি শিশু): এমন দুধের ছেলের ওপর পড়ালেখার বাড়তি চাপ দিতে নেই।
দাও মারা (মোটা অর্থ আত্মসাৎ): আত্মীয় বলে তুহিনকে প্রশ্রয় দিও না। সুযোগ পেলে ও কিন্তু দাঁও মেরে বসবে।
দহরম-মহরম (ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক): সাথীর সঙ্গে মিতার দহরম-মহরম দেখলাম কয়েক দিন, এখন একেবারে মুখ দেখাদেখি বন্ধ।
দুধে-ভাতে থাকা (সুখে থাকা): জহির বাপের প্রচুর সম্পদ পেয়ে আরামেই আছে, একেই বলে দুধে-ভাতে থাকা।
দিনদুপুরে (প্রকাশ্যে): দুর্যোগপ্রবণ এলাকার ত্রাণ স্থানীয় নেতারা কুক্ষিগত করল, এ যেন দিন দুপুরে ডাকাতি।
দিন ফুরানো (আয়ু শেষ হওয়া): সন্তান আরোগ্য লাভ না করায় মা চিন্তিত – কেননা তার ধারণা, দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে।
দিনকে রাত করা (সত্যকে মিথ্যা প্রমাণ করা): রহিম প্রভাব খাটিয়ে যত চেষ্টা করুক না কেন, দিনকে রাত করতে পারবে না।
ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির (অত্যন্ত সত্যবাদী): গ্রামের মাতব্বর যে কেমন ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির তা সকলেই জানে।
ধোপ দুরস্ত (বাবুয়ানি): নুন আনতে যার পান্তা ফুরায়, তার চালচলনে কত ধোপ দুরস্ত ভাব।
ধড়া-চূড়া (সাজ পোশাক বা বিজাতীয় পোশাক): সন্ধ্যা হয়েছে, এবার ধরা-চূড়া ছেড়ে পড়তে বস।
ধোলাই দেওয়া (প্রচণ্ড প্রহার): জনতা চোরকে ধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিল।
ধর্মের কল (সভা প্রকাশ): আরে তোমার এখন প্রতিবাদ করার দরকার নেই, ধর্মের কল এক সময় বাতাসে নড়বে।
ধর্মের ধাড় (স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি): হেলাল এত দত করো না। ধর্মের ঘাড়ের পতন অনিবার্য।
ধকল সওয়া (সহ্য করা): বৃদ্ধার একমাত্র ছেলেটি হারিয়ে যাওয়ায় তার পক্ষে সকল সওয়া সম্পন্ন না।
মাক গলানো (অনধিকার চর্চা): শিখা ম্যাডাম তাসলিমা ম্যাডামের প্রতিটি কাজে না লা।
বাগধারার ব্যবহার
মাটের গুরু (মূল নায়ক): চৌধুরী সাহেবের বাড়িতে যে আগুন দিয়ে তার নাটের গুরু বা।
নরম গরম (মিঠে কড়া): মিনার শাশুড়িকে নরম গরম প্রকৃতির মনুষ্যই বলা চলে।
সেই আঁকড়া (একগুঁয়ে): এই নেই আঁকড়া লোকেদের নিয়ে পথ চলা বেজায় কঠিন কাজ।
মাড়ির টানে (গভীর মমত্ববোধ): ঈদে যাতায়াতে অসুবিধা হওয়া গরেও নাড়ির টানে সবাই বাড়ি যায়।
মজর রাখা (খোঁজখবর নেওয়া): মিনা শ্বশুরবাড়িতে থাকলেও মায়ের দিকে নজর রাখতে এক বিন্দু ভোলে না।
নিষক খাওয়া (অন্নপুষ্ট খাওয়া): মিনা তার স্যিান্তে অবিচল। যার নিমক খেয়েছে, তার সঙ্গে বেঈমানি করতে পারবে না।
মামীর পাঁঠা (প্রাণ ভয়ে ভীত ব্যক্তি): নারুচী গ্রামের লোকেরা ডাকাতের ভয়ে নবমীর পাঁঠা হয়ে বসবাস করে।
নরক গুলজার (প্রেত প্রাসাদ): রফিক এখন বন্ধুদের সঙ্গে মদ খেয়ে খেয়ে বাড়িটিকে নরক গুলজার করে তুলেছে।
নিমরাজি (প্রায় রাজি): মিতালির সঙ্গে তুলিকে যেতে একটু অনুরোধ কর না। সে তো এখন নিমরাজি।
মাক সিটকানো (অবজ্ঞা করা): লিজা যে ভাইকে একসময় নাক সিঁটকাতো। এখন বিপদে তারই দ্বারস্ত হয়েছে।
মাড়ির খবর (আসল খবর): আসিফের কোনো কথা পেটে থাকে না, সে তার নাড়ির খবর জসিমকে জানিয়েছে।
পুকুর চুরি (বড় রকমের চুরি): এ গ্রামে এ রকম পুকুর চুরি এর আগেও হয়েছে কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি।
পাথরে পাঁচকিল (সুখের সময়): আতিকের তো এখন পাথরে পাঁচকিল, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে তার চাকরি হয়েছে।
পথের কাঁটা (শত্রু): যাকে পথের কাঁটা ভেবে তাড়িয়ে দিয়েছিলে, সে-ই তমরেজই তোমার ছিন্নভিন্ন সংসারের হাল ধরল।
পদ্মমুখ (প্রশংসামুখর হওয়া): ইসমাইল তার সাহসিকতার দরুন মানুষের কাছে পঞ্চমুখ হয়েছে।
পিঁপড়ের পেট টেপা (অত্যধিক হিসাব করে চলা): এভাবে পিঁপড়ের পেট টিপে কয়দিন চলবে? অধিক উপার্জনের চেষ্টা কর।
বাংলা বাগধারা
পালের গোদা (দলপতি): মহিমই পালের গোদা, তারই উসকানিতে এ সর্বনাশ হয়েছে।
পারের কড়ি (পরকালের মূলধন): দিন ফুরিয়ে এলো অথচ পারের কড়ি সংগ্রহ করা হলো না।
পথে বসা (সর্বস্বান্ত হওয়া): অনিক ব্যবসায় মার খেয়ে আজ পথে বসেছে।
পেটে পেটে বুদ্ধি (দুষ্টু বুদ্ধি): মোড়লকে দেখে মনে হয় সহজ-সরল কিন্তু তার পেটে পেটে বুদ্ধি আছে।
পায়াডারি (অহংকার): ছেলে চাকরি পাওয়াতে তোমার পায়াভারি হয়েছে।
পরের ধনে পোদ্দরী (অন্যের টাকায় বাহাদুরি): পরের ধনে পোদ্দারী করে সবাই ভাব দেখাতে পারে।
ফেউলাগা (পেছনে লেগে ক্রমাগত বিরক্ত করা): ব্যাংকে যাওয়ার পথে ফেউলাগার কারণে টাকা জমা দিতে পারল না।
ফাঁদে পা দেওয়া (চক্রান্ত না বুঝে বিপদে পড়া): মজিদ টাকার লোভে পড়ে হাবিবের ফাঁদে পা দিল।
ফতো নবাব (নবাবী মনের দরিদ্র ব্যক্তি): ফতো নবাব সেজে বসে আছে, এদিকে ঘরের হাঁড়িতে চাল নেই।
ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাওয়া (অল্পতেই ক্লান্ত হওয়া): ফুলের ঘায়েই যে মূর্ছা যায়, তাকে দিয়েছ কঠিন কাজ করতে।
ফাকতা উড়ানো (ভাবনা-চিন্তা না করে নিশ্চিন্তে দিন কাটানো): বাড়ির খবর রাখো না, এদিকে ফাকতা উড়িয়ে বেড়াচ্ছো।
ফেঁপে ওঠা (বড়লোক হওয়া): যারা অসৎ পথে অর্থ রোজগার করে তারা হঠাৎ ফেঁপে ওঠে।
আলোচিত বাগধারা
ফুলবাবু (বড়লোকি আচরণ): অভাবের সংসারে আহার জোটে না অথচ সিরাজ ফুলবাবু সেজে ঘুরে বেড়ায়।
ফোড়ন কাটা (টিপ্পনি কাটা): গাঁয়ের মাতবর ফোড়ন কাটা স্বভাবের লোক, একথা সবাই জানে।
ফপর দালালি (গায়ে পড়ে মাতব্বরি): আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে তুমি ফপর দালালি না করলেই খুশি হব।
ফুলটুসি (সহজে আহত বোধ করে যে): তোমার মতো ফুলটুসি মেয়ে তো আর দেখা যায় না, সামান্য আঘাতেই কষ্ট পাও।
বাপের বেটা (উপযুক্ত পুত্র): সতীনাথ ভাদুড়ী ছিলেন বাপের বেটা।
বক ধার্মিক (বাইরে সাধু ভেতরে অসাধু): ধর্মের বুলি আওড়িয়ে বক ধার্মিকেরা নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে।
বিসমিল্লায় গলদ (শুরুতেই ভুল): এ কাজ কিছুতেই হবে না, এর বিসমিল্লায়ই গলদ।
বাপের ঠাকুর (শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি): চেয়ারম্যান সাহেব তার অভিভাবক সেজেছেন, যেন তার বাপের ঠাকুর।
বেগার ঠেলা (অনিচ্ছায় অলাভজনক কাজ করা): এ সংসারে আমি আজীবন বেগার ঠেলে গেলাম।
পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ন বাগধারা
বিড়ালের আড়াই পা (ক্ষণস্থায়ী রোগ): মাঝে মাঝে বিড়ালের আড়াই পা যেন বৃহৎ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
বাজারে কাটা (বিক্রি করা): এবার ঈদে কুটির শিল্পের তৈরি জিনিসপত্র খুব বেশি বাজারে কেটেছে।
বিষের পুঁটলি (বিদ্বেষী): সোনিয়া আর রিমার মাঝে মোটেও বনিবনা নেই। একজন আরেকজনের যেন বিষের পুটলি।
ব্যাঙের সর্দি (অসম্ভব কিছু): জেলেকে জলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, ব্যাঙের আবার সর্দি?
বসন্তের কোকিল (সুসময়ের বন্ধু): এখন তুমি অনেক অর্থ-প্রতিপত্তির মালিক। তাই বসন্তের কোকিলের অভাব নেই।
বা হাতের ব্যাপার (ঘুষ): বাঁ হাতের ব্যাপারটা সেরে না ফেললে বড় সাহেব ফাইলে হাত দিবেন না।
বিদুরের খুদ (সামান্য উপহার): বিদুরের খুদ দিয়ে কী সব কাজ উদ্ধার করা যায়।
বাঘের আড়ি (নাছোড়বান্দা): সরকারি চাকরির জন্য বসে থাকলে হবে, বাঘের আড়ির মতো পড়ালেখা করতে হবে।
ব্যাঙের আধুলি (সামান্য সম্পদ): ব্যাঙের আধুলি দিয়ে কী সবকিছু পাওয়া যায়?
বাঘুঘু (অতি ধূর্ত লোক/প্রচ্ছন্ন শয়তান): বাস্তুঘুঘু লোকেদের সাথে পারা কঠিন, এদের থেকে সাবধানে থাকাই ভালো।
বিষদাঁত (ক্ষতিকর শক্তি): উঁচু গলায় কথা বলো না, তোমার বিষদাঁত ভেঙে দেব।
বালির বাঁধ (ক্ষণস্থায়ী): ধনী-গরিবের বন্ধুত্ব বেশিদিন টেকে না, এ যে বালির বাঁধ ছাড়া আর কিছু নয়।
বড় মুখ (বড় আশা করা): স্যার বড় মুখ নিয়ে আপনার কাছে এসেছি, চাকরিটা যেন হয়।
ভূতের বেগার (পণ্ডশ্রম): জীবনভর ভূতের বেগারই খাটলে, বিনিময়ে কিছু পেলে?
ভালোয় ভালোয় (মঙ্গল মতো): যা হবার তা হয়েছে এখন ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরতে পারলেই বাঁচি।
ভাঁড়ে মা ভবানী (ভাণ্ডার শূন্য): আমার কাছে অর্থ চাও, কিন্তু আমার তো ভাঁড়ে মা ভবানী।
ভালুক জ্বর (ক্ষণস্থায়ী জ্বর): জোহানের সবল দেহে ভালুক জ্বর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না।
ভূষণ্ডির কাক (প্রাচীন ও বিজ্ঞ): তোমার মতো ভূষণ্ডির কাকের এমন বোকার মতো কথা বলা উচিত নয়।
ভালুক জ্বর (ক্ষণস্থায়ী জ্বর): ভালুক জ্বর নিয়ে বসে থাকলে হবে না, চল কলেজে যাই।
ভাতে মারা (না খেতে দিয়ে দুর্বল করা): তুমি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছ, তোমাকে হাতে না মেরে ভাতে মারব।
ভেক ধরা (ভান করা): ঝরনা মেয়েটা খুবই বেয়াদব, কিছু হলেই ভেক ধরে।
গুরুত্বপূর্ন বাগধারা
ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ (বাজে কাজে অর্থ ব্যয় করা): ভূতের বাপের শ্রাদ্ধে টাকা-পয়সা নষ্ট করে ছেলেটা এখন দিশেহারা।
ভেরেণ্ডা ভাজা (অকাজ): কোনো কাজ নেই তাই বাড়ি বসে ভেরেণ্ডা ভাজছি।
মামার বাড়ির আবদার (সহজে মিটে এমন): মামার বাড়ির আবদার পেয়েছ যে চাইলে তোমাকে দিতে হবে।
মাথা গোঁজার ঠাঁই (আশ্রয়): জমিদার বিনয়ের ভিটেমাটি আত্মসাৎ করায় তার আর মাথা গোঁজার ঠাঁই রইল না।
মন না মতি (অস্থির মনা মন): মানুষের মন দ্রুত পরিবর্তন হয় বলেই তাকে মন না মতি বলে।
মুশকিল আসান (বিপদ থেকে মুক্ত হওয়া): যে বিপদে পড়েছিলাম ভাই এত সহজে যে মুশকিল আসান হবে ভাবতে পারিনি।
মাছের মার পুত্রশোক (নিরর্থক দুঃখ/মমতাহীন): রাজাকারদের মুখে দেশপ্রেমের কথা, এযেন মাছের মার পুত্রশোক।
মিছরির ছুরি (মুখে মধু অন্তরে বিষ): ওর মিষ্টি কথায় ভুলো না, কথা তো নয় যেন মিছরির ছুরি।
বিগত সালে আসা গুরুত্বপূর্ন বাগধারা
মুখ তুলে চাওয়া (প্রসন্ন হওয়া): এতদিনে বিধাতা আমাদের পরিবারের প্রতি মুখ তুলে চাইলেন!
মরা থেকো (অত্যন্ত রোগা): এমন মরা থেকো গরুকে কীভাবে মোটাতাজা করলে, স্টেরোয়েড হরমন দিয়ে?
মুখে ফুল চন্দন পড়া (সুসংবাদের জন্য ধন্যবাদ): এমন একটা সুসংবাদ দিলে, তোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক।
মাকাল ফল (অন্তঃসারশূন্য রূপবান ব্যক্তি): আমজাদ একটা মাকাল ফল, তার দ্বারা কোনো কাজ হবে না।
মাথা খাওয়া (প্রশ্রয় দিয়ে সর্বনাশ করা): বেশি মাত্রায় আদর দিয়ে ছেলেটার মাথা খেয়েছ।
মুখ রাখা (মান বজায় রাখা): বিশ্বকাপে মাশরাফিরা ভালো খেলে দেশের মুখ রক্ষা করল।
মাটির মানুষ (কোমল প্রকৃতির লোক): ফজলুল করিম মাটির মানুষ ছিলেন, জনগণের মনের ভাষা বুঝতেন।
মাটিতে পা না পড়া (অহংকার দেখানো): কী ব্যাপার, বড় চাকরি পেয়ে যে তোমার মাটি পা পড়ে না?
ম্যাও ধরা (দায়িত্ব গ্রহণ করা): পিতার মৃত্যুতে শাজাহান সংসারের ম্যাও ধরেছে।
যেখানে-সেখানে (যত্রতত্র): বন্যার পানি বাড়ায় লোকজন যেখানে-সেখানে আশ্রয় নিচ্ছে।
বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা বাগধারা
যমের অরুচি (যার মৃত্যু নেই): বয়সের ভারে তালকানা হয়ে গেছে তবু মরে না, যেন যমেরও অরুচি ধরেছে।
যম-যন্ত্রণা (মৃত্যু যন্ত্রণা): একমাত্র যুবক ছেলেকে হারিয়ে মা এখন যম-যন্ত্রণায় জ্বলে যাচ্ছে।
যশুরে কই (বেঢপ): মাঝে মাঝে তোমার যশুরে কই আচরণ আমার কাছে অদ্ভুত ঠেকে।
যক্ষের ধন (কৃপণের কড়ি): স্বামীর মৃত্যুর পর সুমি তার ধনসম্পদ যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছে।
যমের দোসর (নিষ্ঠুর ব্যক্তি): ঐ যমের দোসরের সঙ্গে লাগতে যেও না, সে তোমাকে শেষ করে ছাড়বে।
যমের ভুল (যার সহজের মরণ হয় না): চেয়ারম্যান যমের ভুল হয়ে রয়েছে সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করতে।
রাজার হাল (আড়ম্বর): শ্বশুরের সম্পদ পেয়ে রাজন সামী রাজার হালে জীবনযাপন করে।
রায়, বাঘিনী (উগ্র স্বভারে নারী): শেফালী ও শ্যামলী হলো রায় বাঘিনী, তাদের সংসারে অশান্তি লেগেই থাকে।
রাঘব-বোয়াল (বড় চোর): গরিবের হক গরিব মারে না, মারে যতসব রাঘব বোয়ালরা।
রাহুর দশা (দুঃসময়): রাহুর দশায় একমাত্র প্রকৃত বন্ধুরাই পাশে থাকে।
রুই-কাতলা (বড় বড় লোক): তুমি হলে দিন আনে দিন খাওয়া মানুষ, রুই-কাতলাদের মাঝে ঠাঁই পাবে কী করে?
রাই কুড়িয়ে বেল (অল্প অল্প সঞ্চয়ে প্রচুর অর্থ জমানো): মনিকা দেবী মিতব্যয়ী বলেই রাই কুড়িয়ে বেল করতে পেরেছেন।
রাজা-উজির মারা (অর্থহীন গল্প): তোমার কি কোনো কাজ নেই নাকি, এখানে এসে রাজা-উজির মারছ।
রাশভারি (গম্ভীর প্রকৃতি): মাহবুব সাহেবকে দেখে সহজ সরল মনে হলেও তিনি কিন্তু রাশভারি লোক।
রাশভারি (গম্ভীর প্রকৃতির): আমাদের ইংরেজি শিক্ষক রাশভারি লোক, তাই তাকে সবাই ভয় পায়।
রাবণের চিতা (চির-অশান্তি): সিডরের আঘাতে সবাইকে হারিয়ে বিধবার বুকে রাবণের চিতা জ্বলছে।
Bangla Grammar Bagdhara
রাবণের গোষ্ঠী (বৃহৎ পরিবার): রিয়াদ সাহেব একার রোজগারে কুলিয়ে উঠবেন কীভাবে, তার যে রাবণের গোষ্ঠী।
রক্তের টান (স্ববংশপ্রীতি): রক্তের টানের কারণে জনির দুঃখে মনি দুঃখ পেল।
রাতকানা (যে রাতে চোখে দেখে না): তানিয়ার জীবনে বড়ই কষ্টের, সে এখন রাতকানা রোগে ভুগছে।
রাজঘোটক (উপযুক্ত মিলন): ছেলে আর মেয়েটাকে ভালোই মানিয়েছে, দেখে মনে হয় রাজঘোটক।
লাল হয়ে যাওয়া (ধনশালী হওয়া): এবার চালের মজুদদাররা একেবারে লাল হয়ে গেছে।
লেজে পা পড়া (বিপদে পড়া): সাপের লেজে পা পড়েছে, এখন বুঝবে কত ধানে কত চাল হয়।
লেজে গোবরে হওয়া (নাজেহাল হওয়া): পাভেল রহমানের কাছে কাজ দিলে লেজেগোবরে এক করে ফেলে।
লঙ্কা পায়রা (ফুলবাবু): তোমার মতো লঙ্কা পায়রা দিয়ে কোনো কাজ হবে না।
লেজ গুটানো (পালানো): বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে অনেক আদম ব্যাপারি মানুষের টাকা মেরে দিয়ে লেজ গুটিয়েছে।
লগন চাঁদ (ভাগ্যবান): তোমার মতো লগন চাঁদ, হয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারলে জীবনটা সার্থক হতো।
লঙ্কাভাগ (স্বার্থচিন্তা): শুধু নিজের লঙ্কাভাগের কথা চিন্তা না করে, দেশ ও জাতির দিকে নজর দাও।
লঘুগুরু জ্ঞান (কাণ্ডজ্ঞান): লঘুগুরু জ্ঞান না থাকলে জীবনে উন্নতি করা যায় না।
লঙ্কাকাণ্ড (হুলুস্থূল অবস্থার সৃষ্টি করা): দুই সতীনের লঙ্কাকাণ্ডে সংসারটা বিষময় হয়ে উঠেছে।
শিয়ালের যুক্তি (ব্যর্থ জল্পনা-কল্পনা): কাউন্সিলর-চেয়ারম্যান শিয়ালের যুক্তি করে মানুষকে বোকা বানাতে চায়।
শিমুল ফুল (বাইরে সুন্দর): ওকে দেখে সব ভুলে যেয়ো না, ও আসলে শিমুলের ফুল।
বাংলা ব্যকরণ বাগধারার তালিকা
শুকনোয় ডিঙি চালানো (শক্তিতে কাজ করা): মাঠে কৃষকেরা শুকনোয় ডিঙি চালিয়ে ফসল ফলায়।
শিকায় তোলা (স্থগিত রাখা): পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই বইগুলো শিকায় তুলে রাখলে?
শাঁখের করাত (উভয় সংকট): তোমার কাজে আছি বললেও বিপদ, নেই বললেও বিপদ এ যেন শাঁখের করাত।
শিরে সংক্রান্তি (আসন্ন বিপদ): কাল পরীক্ষা অথচ কিছুই পড়া হয়নি, এ যেন শিরে সংক্রান্তি।
শনির দৃষ্টি (কু-দৃষ্টি): আজ পদে পদে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি, মনে হয় শনির দৃষ্টিতে পড়েছি।
শিবরাত্রির সলতে (একমাত্র সন্তান): অর্জুন তার পিতা-মাতার শিবরাত্রির সলতে, তাইতো তাকে সবাই চোখে চোখে রাখে।
শরতের শিশির (সুসময়ের বন্ধু): দুঃসময়ে সজীবের খোঁজ পাওয়া যায় না, সে আসলে শরতের শিশির।
শকুনি মামা (অনিষ্টকর ব্যক্তি): তার মতো শকুনি মামার মুখ দেখাও আমি বান্ধ করে দিয়েছি।
শেষ রক্ষা (ভালোভাবে সমাপ্তি): হরতাল অবরোধে সব বন্ধ-পরীক্ষা হলেই তখন শেষ রক্ষা বলা চলে।
শ্রীঘ্রর (কয়েদখানা): বৌকে হত্যা করে হাবিব এখন শ্রীঘরের বাসিন্দা।
শনির দশা (দুঃসময়): কী রে পড়ালেখা তো হয় না, শনির দশা লেগেছে আমার।
ষোলকলা (পুরোপুরি): বিশ্ববিদ্যালয় পড়া শেষে একটি ভালো চাকরি পাওয়ায় বুশমির আশা-আকাঙ্ক্ষা ষোলকলা পূর্ণ হলো।
ষাটের কোলে (অধিক বয়স): তোমার বয়স এখন ষাটের কোলে, একটু ভালো কাজ কর।
বিগত সালের বাগধারা
ষণ্ডামার্কা (গুণ্ডা প্রকৃতির লোক): পাভেল রহমান ষণ্ডামার্কা লোক, চেহারা দেখলে বোঝা যায়।
ষাঁড়ের গোবর (অপদার্থ): ছেলেটা একেবারে ষাঁড়ের গোবর, কোনো কাজের নয়।
ষত্ব-ণত্ব জ্ঞান (কাণ্ডজ্ঞান): ষত্ব-ণত্ব জ্ঞান নেই এমন লোকের হাতে সভাপতির দায়িত্ব পড়লে সংগঠন অচল হতে বাধ্য।
ষোল কড়াই কানা (সম্পূর্ণ বিনষ্ট): অতিবৃষ্টির কারণে ফসলে ষোল কড়াই কানা হয়ে গেল।
সোনার চাঁদ (অতি আদরের): তুফলি তার পিতার একমাত্র কন্যা হওয়ায় সে সোনার চাঁদ।
সাপে নেউলে (ভীষণ শত্রুতা): স্বামীকে নিয়ে দুই সতীনের সাপে নেউলে সম্পর্ক।
সর্ষে ফুল দেখা (মহাবিপদ): সাঈদ সাহেব ভোটে পরাজিত হয়ে সর্ষে ফুল দেখছেন।
সাপের পাঁচ পা দেখা (অহংকারী হওয়া): শ্বশুরের টাকায় বড় লোক হয়ে রিকু সাপের পাঁচ পা দেখাচ্ছে।
সাপের ছুঁচো গেলা (উভয় সংকট): সাপের ছুঁচো গেলা অবস্থানে পড়ে দিশেহারা অমিত আত্মহত্যা করল।
সাক্ষীগোপাল (নিষ্ক্রিয় দর্শক): দেশের এই দুর্দিনে আমাদের সাক্ষীগোপাল হয়ে থাকলে চলবে না।
সেয়ানে সেয়ানে (চালাকে চালাকে): মতি আর ময়নার সাথে বিরোধ মানে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই।
সাপে-নেউলে (শত্রুতা): তাদের দুইভায়ের মধ্যে সম্পর্ক নেই, একেবারে সাপে-নেউলে সম্পর্ক।
বাংলা বাগধারা
সবুরে মেওয়া ফলে (ধৈর্যে সুফল মিলে): একটুতে বিচলিত হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়, সবুরে মেওয়া ফলে।
সাত সতের (বিচিত্র ধরনের): এক মনে কাজ কর, সাত সতের মন দিয়ে কাজ করলে উন্নতি হয় না।
সুখের পায়রা (সুসময়ের বন্ধু): রিপন এখন অনেক বড় লোক, তার সুখের পায়রার অভাব নেই।
হাতে-কলমে (ব্যবহারিকভাবে): স্কাউটদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় হাতে-কলমে, এতে কোনো ফাঁকি নেই।
হাটে হাঁড়ি ভাঙা (গোপন কথা ফাঁস করা): ওকে রাগালে তোমারই ক্ষতি, হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবে।
হাত পাকানো (দক্ষতা অর্জন): ঘরের কাজটি খুবই সুন্দর হয়েছে, দেখে মনে হচ্ছে হাত পাকা মিস্ত্রি দিয়ে কাজ করানো।
হাতির পাঁচ পা দেখা (দুঃসাহসী হওয়া): তুমি যে জন্মের ভীরু তা সবাই জানে, হাতির পাঁচ পা দেখিয়ে লাভ নেই।
খোদার খাসি (হৃষ্টপুষ্ট/অলস): লেখাপড়া ভালোভাবে না শিখলে খোদার খাসির মতো দেহটা কোনো কাজে আসবে?
হালে পানি পাওয়া (সুবিধা করা): দেশের যে অবস্থা ব্যবসায় অনেক কষ্ট করেও হালে পানি পেলাম না।
হ-য-ব-র-ল (বিশৃঙ্খল): মায়ের মৃত্যুর পর মেধাবী যতীনের জীবনটা যেন হ-য-ব-র-ল হয়ে গেল।
হাড়ে হাড়ে চেনা (মর্মান্তিকভাবে চেনা): তুমি তাকে না চিনলেও আমি ওকে হাড়ে হাড়ে চিনি।
হাতের পাঁচ (শেষ সম্বল): কখন কী বিপদ আসে তা বলা যায় না, হাতের পাঁচ খরচ করো না।
হ-য-ব-র-ল (বিশৃঙ্খল অবস্থা): বইপত্রগুলো আলমারিতে হ-য-ব-র-ল করে রেখেছে কেন?
হাড়ে হাড়ে (মর্মে মর্মে): দিলদার সাহেব যে কেমন লোক তা আমি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি।
হরিলুট (অপচয়): টেন্ডারবাজির নামে দেশে সরকারি টাকার হরিলুট চলছে।
হাঁটু বয়স (অবুঝ শিশু): পিংকি হাঁটুর বয়সের মেয়ে হয়ে চাচার সঙ্গে ঝগড়া করছে।
শেষকথা
বাগধারা বাংলা ভাষার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং এটি শব্দের বিশেষভাবে ব্যবহৃত এক ধরনের প্রকাশ। প্রতিদিনের ভাষায় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত বাগধারা মানুষের যোগাযোগে প্রাঞ্জলতা ও মাধুর্য নিয়ে আসে। ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ বাগধারা, তাদের অর্থ, উদাহরণ, এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করার কৌশল শিখলে ভাষার প্রতি আগ্রহ আরও বাড়ে। যেমন, বাগধারা অর্থ বুঝে বাক্য রচনা করার মাধ্যমে এর সঠিক প্রয়োগ সহজে শেখা সম্ভব। বাগধারা অর্থসহ বাক্য রচনা PDF ফরম্যাটে পাওয়া গেলে যে কেউ সহজেই শিখতে পারে এবং মজার বাগধারার তালিকা দেখে বাক্য গঠনেও দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে, বাগধারা শুধুমাত্র শব্দের অর্থই নয়, বরং ভাষার শৈলী ও গভীরতা বৃদ্ধি করে, যা আমাদের ভাষার চর্চা ও ব্যবহারে সহায়ক হতে পারে।