আমাদের গ্রাম রচনা। আদর্শ গ্রাম রচনা।
আমাদের গ্রাম রচনাটি ৩য় শ্রেনি, ৪র্থ শ্রেণি, ৫ম শ্রেণি, ষষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনি উপযোগী লেখা হয়েছে। ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক সময় আমাদের গ্রাম রচনা না দিয়ে বলা হয় আমাদের গ্রাম সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখুন। আবার চাকরি কিংবা ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে আসে আমাদের গ্রাম সম্পর্কে অনুচ্ছেদ লিখুন। বাংলা ২য়পত্র বিষয় থেকে আমাদের গ্রাম রচনাটি সহজ ভাষায় লিখা হয়েছে । ৩য় থেকে ৭ম শ্রেনি উপযোগী করে লেখা হয়েছে।
আমাদের গ্রাম রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। যেন, একবার পড়লেই মুখস্থ হয়ে যায়। আমাদের গ্রাম এর জায়গায় যদি আসে আদর্শ বিদ্যালয় তাহলেও রচনাটি লিখতে পারেন। My Village essay is written for class- 3, 4, 5, 6 and 7.
আমাদের গ্রাম অথবা, একটি আদর্শ গ্রাম রচনা
ভূমিকা :
‘আমাদের গ্রাম খানি ছবির মতন
মাটির তলায় এর ছড়ানো রতন
সত্যিই কবির বর্ণনার মতো আমার গ্রামখানিও পটে আঁকা ছবির মতো। ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় আমার এ গ্রাম স্বর্গতুল্য। স্বর্গসদৃশ এ গ্রামের মুক্ত প্রকৃতি আর আলো-হাওয়ায় আমার বেড়ে ওঠা। তাই এ গ্রামের প্রতিটি ধূলিকণা থেকে সবকিছুই আমার কাছে মধুর ও প্রিয় ।
নাম ও অবস্থান : আমার গ্রামের নাম রূপপুর। জেলা শহর থেকে বেশ দূরেই গ্রামটির অবস্থান। এর দক্ষিণ ও পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। ত্রিমোহনা নদীর পাশে অবস্থিত এ গ্রামের পশ্চিম পাশে রয়েছে মহাসড়ক ও উত্তরে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। যত দূর দৃষ্টি যায় মনে হয় সবুজের গালিচা বিছানো। পরিসরে গ্রামটি তেমন বড় নয়। সব মিলিয়ে দৈর্ঘ্যে তিন মাইল প্রস্থে দেড় মাইল। নদী, ফসল, মাঠ, বাগান প্রভৃতি মিলিয়ে গ্রামটি যেন সাজানো চিত্রপটের মতো। যেখানে সবার মধ্যে রয়েছে এক অপূর্ব মেলবন্ধন ।
কবির ভাষায়-
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি।
লোকসংখ্যা : আমাদের গ্রামে প্রায় চার হাজার লোকের বসবাস। সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করে আমাদের গ্রামে ৷ সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন অনেক সুদৃঢ় ।
পোশাক-পরিচ্ছদ : গ্রামের সবাই রুচিসম্মত পোশাক পরিধান করে। পুরুষেরা সাধারণত লুঙ্গি, পাজামা, পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট এবং মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি পরে ।
একটি আদর্শ গ্রাম রচনা ৩য়, ৪র্থ, ৫ম শ্রেণির জন্য
পেশা : আমাদের গ্রামে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের বসবাস। কেউ ডাক্তার, কেউ প্রকৌশলী, কেউ জেলে, কেউ তাঁতি, কেউ শিক্ষক, কেউবা ব্যবসায়ী। গ্রামে শিক্ষার হার প্রায় ৮০%। সরকারি, বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে অনেকেই কর্মরত। কেউবা আবার রয়েছে প্রবাসে/এক কথায় বিচিত্র পেশাজীবী মানুষের বাস রয়েছে এখানে ।
ঘরবাড়ি : গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ অবস্থাপন্ন হওয়ায় আধা পাকা টিনের ঘর বেশি। তবে বেশ কিছু পাকা বাড়িও রয়েছে। আর নদীপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় বেশির ভাগ বাড়ি বেশ মজবুত করেই তৈরি। আবার কোনো কোনো বাড়ি কাঠের তৈরি দোতলা ঘর ও শান বাঁধানো পুকুরঘাট রেখে প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে।
উৎপন্ন দ্রব্য: ধান, পাট, গম, কালাইসহ বিভিন্ন মসলাজাতীয় পণ্য উৎপন্ন হয় রূপপুর গ্রামে। বিস্তৃত ফসলের মাঠ থাকায় অনেকেই গাভী পালন করে দুধ বিক্রি করে। পুকুর ও নদী থাকায় হাঁস-মুরগি পালন করে অনেকে। বিভিন্ন রকম ফল যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, আনারস, নারিকেল, কমলা, বেদানা, সুপারি, হরীতকী, আমলকী ইত্যাদিও উৎপন্ন হয়। গ্রামের মানুষের বেশির ভাগ চাহিদা এখান থেকেই পূরণ করা যায়।
আমাদের গ্রাম রচনা ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণির
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : আমাদের গ্রামে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও মহাবিদ্যালয়ও রয়েছে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা প্রাথমিক শিক্ষা নিজ গ্রামেই পায়। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় নিজ গ্রামেই। এ ছাড়া বয়স্ক ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য নৈশ বিদ্যালয়ও রয়েছে, যেখানে রাতে শিক্ষা দেওয়া হয় ।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমাদের গ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে বেশ কিছু অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। যেমন পোস্ট অফিস, দাতব্য চিকিৎসালয়, কৃষি অফিস, গণগ্রন্থাগার, পশু চিকিৎসালয় প্রভৃতি। এ ছাড়া রয়েছে বেশ কিছু এনজিও প্রতিষ্ঠান। এসব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্রামের মানুষকে নিরন্তর সেবা নিয়ে যাচ্ছে।
হাট-বাজার ও দোকানপাট আমাদের গ্রামে একটি বড় হাট আছে, যেখানে সপ্তাহে দুদিন রবি ও বৃহস্পতিবার হাট বসে। এদিন আমাদের গ্রাম ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে নানা ক্রেতা-বিক্রেতার আগমন ঘটে। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল- সন্ধ্যায় যে বাজার বসে, সেখানেই পাওয়া যায়।
আমাদের গ্রাম রচনা ক্লাস 7
যোগাযোগব্যবস্থা : আমাদের গ্রামের পাশে নদী ও বড় রাস্তা থাকায় নদীপথ ও সড়কপথে যোগাযোগব্যবস্থা খুবই ভালো। গ্রামের রাস্তাঘাট পাকা হওয়ায় পার্শ্ববর্তী তিনটি জেলায় যোগাযোগব্যবস্থা খুবই সুগম। তাই মুমূর্ষু রোগী নিয়েও কাউকে হয়রানি হতে হয় না ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে রূপপুর গ্রামটি অতুলনীয়। ছায়াঘেরা, পাখিডাকা এ গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে যেন পাখির কলকাকলিতে। দিগন্তজোড়া সবুজের হাতছানি পথিককেও যেন মায়ায় জড়িয়ে ফেলে। ষড়তুর বাংলাদেশের প্রতিটি ঋতুই এ গ্রামের মানুষের কাছে উপভোগ্য হয়ে ওঠে। গাছে গাছে ফুল, ফল, উপরে নীল আকাশে কখনো জমাট বাঁধা কালো মেঘ কখনো বা সাদা মেঘের ভেলার লুকোচুরি। নিচে সবুজের সমারোহ। সারিবদ্ধ তাল, তমাল, নারকেল, সুপারি বাগান, স্নিগ্ধ বাতাস । অতিথি পাখির আনাগোনা গ্রামখানিকে যেন সাজিয়েছে স্বর্গীয় উপকরণে, যেখানে স্বর্গীয় ধারার মতো কেবল সৌন্দর্যই উপভোগ করা যায়।
কবির ভাষায়-
‘সকালে সোনার রবি পূর্ব দিকে ওঠে
পাখি ডাকে, বায়ু বয়, নানা ফুল ফোটে।’
সামাজিক অবস্থা : সামাজিক অবস্থানে গ্রামটি বেশ উন্নত ও পরিশীলিত। গ্রামের অধিকাংশ লোক অবস্থাপন্ন ও সচেতন হওয়ায় এখানে খুন-খারাবি বা চুরি-ডাকাতি যেমন হয় না, তেমনি গ্রামবাসীও বেশ কুসংস্কারমুক্ত।
উপসংহার : সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলা ভূমির এক কোণে আমার ছোট্ট রূপপুর গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামের শান্ত প্রকৃতির মতো প্রতিটি মানুষই পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কে আবদ্ধ।
কবির ভাষায় তাই শেষ করতে হয়-
‘আমাদের ছোট গায়ে ছোট ছোট ঘর,
থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর।
পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই,
এক সাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।’
সত্যিই আমাদের গ্রাম একটি আদর্শ গ্রাম। সবাই একসাথে মিলেমিশে বসবাস করে। এ গ্রামে জন্মে আমি ধন্য।
আরও পড়ুন:
সবশেষে
অনেকেই আমাদের গ্রাম রচনা pdf চেয়েছেন। আমাদের গ্রাম রচনা class 8, আদর্শ গ্রাম রচনা ক্লাস ২, আদর্শ গ্রাম অনুচ্ছেদ রচনা, আমাদের গ্রাম রচনা ৩য় শ্রেণি, আমাদের গ্রাম রচনা ক্লাস 6, আমাদের গ্রাম রচনা class 10 সহ সকল চাহিদার পূরন হবে এই পোস্ট।