স্বাস্থ্যকথা
গরমের সময় শিশুদের যত্ন
দেশজুড়ে চলছে তীব্র গরম। এই প্রখর রোদের প্রভাবে শিশুদের শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাদের শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা (অন্তর্নিহিত তাপমাত্রা বা কোর টেম্পারেচার) বেড়ে যায়। শরীরের নিজস্ব তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে হঠাৎ করে বাইরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেলে এবং শরীরে তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে।
প্রচন্ড গরমে শিশুর যে সমস্যা হতে পারে:
- হিট ক্র্যাম্প: শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ও লবণ বেরিয়ে যাওয়ার ফলে পেশিতে ব্যথা ও টান অনুভূত হয়।
- হিট এক্সোসশন: ব্যথা, ক্লান্তি, অবসাদ এবং নিস্তেজতা দেখা দেয়।
- হিটস্ট্রোক: এটি একটি জরুরী অবস্থা। অন্তর্নিহিত তাপমাত্রা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে গেলে লিভার, কিডনি, ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে যায় এবং এমনকি শিশু অচেতনও হয়ে যেতে পারে।
প্রতিকার:
- প্রচুর পরিমাণে পানি: শিশুকে পর্যাপ্ত পানি, খাওয়ার স্যালাইন, পানিজাতীয় ফল (যেমন: তরমুজ) খাওয়ানোর মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।
- ঠান্ডা পরিবেশ: শিশুকে রোদ ও গরম থেকে দূরে রেখে ঠান্ডা বা ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা।
- শরীর ঠান্ডা রাখা: ফ্যানের নিচে রাখা, আঁটসাঁট কাপড় খুলে ঢিলেঢালা পোশাক পরানো, ঘাম মুছে শরীর ঠান্ডা করা।
- সঠিক খাবার: চিনি ও প্রোটিনজাতীয় খাবার এড়িয়ে দেওয়া। শসা, জলীয় খাবার, এনার্জি সরবরাহকারী খাবার (যেমন: ডাবের পানি) দেওয়া।
- শিশুদের জন্য: ৬ মাসের নিচের শিশুদের ঘন ঘন মায়ের দুধ খাওয়ানো। দুধের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য মা সাবধানে পানি, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, শাকসবজি খাবেন। প্রস্রাব পর্যবেক্ষণ করা।
সতর্কতা:
- গরমের সময় বাইরে খেলাধুলা বন্ধ রাখা: বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
- ঘরে খেলাধুলার সময়: নিয়মিত পানি বা খাওয়ার স্যালাইন দেওয়া। এনার্জি ড্রিংক, সুগার ওয়াটার এড়িয়ে চলা।
- অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা: রাস্তার শরবত, আখের রস, অপরিষ্কার খাবার শিশুদের খাওয়ানো যাবে না। এতে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিসের ঝুঁকি বাড়ে।
- ঘুমের ব্যবস্থা: শিশুদের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে দেওয়া।
- চিকিৎসা পরামর্শ: শিশু অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
মনে রাখবেন:
- শিশুদের শরীর প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় গরমের প্রভাব বেশি অনুভব করে।
- নিয়মিত শিশুদের তত্ত্বাবধানে রাখুন এবং তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
- উপরে উল্লেখিত টিপসগুলো মেনে চললে আপনার শিশু গরমের সময় সুস্থ থাকবে।