স্বাস্থ্যকথা
ঘাড়ের ব্যথা: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
ঘাড়ে হুটহাট টান লেগে ব্যথা হওয়া – আমাদের সাথে হরহামেশাই ঘটে। দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং ভুল অঙ্গভঙ্গির কারণে আমরা অনেকেই ঘাড়ব্যথার শিকার হই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক অঙ্গভঙ্গি পরিবর্তন করেই ঘাড়ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে বা বাড়তে থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঘাড়ব্যথার কারণ:
- ভুল অঙ্গভঙ্গি: দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থায় বসে থাকা, কুঁজো হয়ে হাঁটা, ফোন বা কম্পিউটারের দিকে ঘাড় নিচু করে তাকিয়ে থাকা, ভারী জিনিসপত্র মাথায় বহন করা ইত্যাদি।
- পেশির টান: ব্যায়াম, খেলাধুলা, অতিরিক্ত কাজের চাপ ইত্যাদির কারণে পেশিতে টান লেগে ঘাড়ব্যথা হতে পারে।
- আঘাত: সড়ক দুর্ঘটনা, পতন ইত্যাদির ফলে ঘাড়ে আঘাত লেগে ব্যথা হতে পারে।
- গাঠনগত সমস্যা: অস্টিক্ষয়, স্পাইনাল স্টেনোসিস, ডিস্ক হার্নিয়েশন ইত্যাদি গাঠনগত সমস্যার কারণে ঘাড়ব্যথা হতে পারে।
- অন্যান্য রোগ: আর্থ্রাইটিস, ফাইব্রোমায়ালজিয়া, মেনিনজাইটিস ইত্যাদি রোগের লক্ষণ হিসেবেও ঘাড়ব্যথা দেখা দিতে পারে।
ঘাড়ব্যথার লক্ষণ:
- ঘাড়ে ব্যথা, শক্ততা বা টান অনুভূত হওয়া
- মাথা ঘোরানো বা নড়ানোয় অসুবিধা হওয়া
- মাথাব্যথা
- কাঁধ বা হাতে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া
- ঘুমাতে অসুবিধা হওয়া
- মাংসপেশিতে দুর্বলতা অনুভূত হওয়া
ঘাড়ব্যথা হলে করনীয়:
- ঘরোয়া চিকিৎসা:
- প্রথম কয়েকদিন বরফ লাগান।
- এরপর, একটি হিটিং প্যাড বা গরম তোয়ালে দিয়ে ছেঁক নিয়ে কিংবা গরম পানিতে গোসল করে ঘাড়ে তাপ প্রয়োগ করতে পারেন।
- ডাক্তারের পরামর্শমতো আইবুপ্রোফেন বা প্যারাসিটামলের মতো ব্যথা উপশমকারী ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।
- ঘাড়ের ব্যায়াম করুন।
- সঠিক অঙ্গভঙ্গিতে থাকার চেষ্টা করুন।
- ঘাড়ের মৃদু মাসাজ নিতে পারেন।
- চিকিৎসা:
- যদি ঘরোয়া চিকিৎসায় ব্যথা কম না থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- ডাক্তার ব্যথার কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ, ফিজিওথেরাপি, অস্ত্রোপচার ইত্যাদি চিকিৎসা দিতে পারেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- ঘাড়ের ব্যথা যদি এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, গুরুতর হয় বা অন্যান্য উপসর্গের সাথে ঘাড়ের ব্যথাও থাকে, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এই উপসর্গগুলোর মধ্যে থাকতে পারে:
- হাত বা পায়ে দুর্বলতা বা অসাড়তা
- হাতে বা পায়ে ঝিমঝিমভাব
- মল-মূত্রত্যাগে নিয়ন্ত্রণ হারানো
- জ্বর
- মাথা ঘোরার তীব্রতা বেড়ে যাওয়া
- হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘাড়ের ব্যথা, বিশেষ করে যদি কোনো আঘাতের সাথে ঘটে থাকে
ঘাড়ের রগ ব্যথায় করনীয়:
- সঠিক নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য ডাক্তার আপনার শারীরিক পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনে এক্স-রে, এমআরআই, সিটিস্ক্যান ইত্যাদি পরীক্ষা করতে পারেন।
- ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সঠিক অঙ্গভঙ্গিতে থাকা। দাঁড়া সোজা রেখে বসুন, দাঁড়া বাঁকা হয়ে দাঁড়াবেন না। ঘাড় নিচু করে ফোন ব্যবহার বা কম্পিউটারে কাজ করা এড়িয়ে চলুন। ভারী জিনিসপত্র মাথায় বহন করবেন না।
- নিয়মিত व्यायाম, বিশেষ করে ঘাড়ের ব্যায়াম, ঘাড়ের পেশি শক্তিশালী করতে এবং ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, যেমন সুষম খাদ্যাভাস এবং মানসিক চাপ কমানো, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং ঘাড়ব্যথার ঝুঁকি কমায়।
মনে রাখবেন: ঘাড়ব্যথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গুরুতর সমস্যা নয় এবং সঠিক যত্ন ও চিকিৎসার মাধ্যমে সহজেই সারিয়ে উঠা যায়। তবে উপেক্ষা না করে সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
শেষকথা
আরও জানার চেষ্টা করবেন- ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ, ঘাড় ব্যথা হলে করণীয়, হঠাৎ ঘাড় ব্যথার কারণ, ঘাড়ের বাম পাশে ব্যথার কারণ, ঘাড়ের রগ ব্যথা কারণ, ঘাড় ব্যথার কারণ ও প্রতিকার, ঘাড়ের ডান পাশে ব্যথা, ঘাড়ের রগ ব্যথা হলে করণীয়।
ঘাড় ব্যথার সমাধান দরকার।