দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের জন্য ১০ টি অভ্যাস
সুস্থ জীবন যাপন আমরা প্রত্যেকে চাই। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য কিছু উপায় সবসময় মনে রাখা জরুরী। নিজেকে পরিবর্তন করা কঠিন কিন্তু অসম্ভব কিছু না। সুস্থ্য থাকার জন্য কিছু অভ্যাস গড়ে তোলাও জরুরী। দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনযাপন করতে প্রয়োজন নিয়মিত সুস্থ জীবনধারা মেনে চলা। কিছু সহজ অভ্যাস নিয়মিত অনুশীলন করলে আমরা দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি করতে পারি। চলুন দেখে নেয়া যাক-
১. নিয়মিত শরীরচর্চা:
গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক মাত্র ১৫ মিনিট ব্যায়াম আমাদের আয়ু তিন বছর পর্যন্ত বাড়াতে পারে। আরও বেশি সময় ব্যায়াম করলে আরও বেশি সুফল পাবেন। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। তবে মনে রাখবেন, ব্যায়াম এমন হতে হবে যাতে ঘাম ঝরে।
২. ধূমপান ত্যাগ:
ধূমপানের অভ্যাস আমাদের জীবন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারে এবং অকালমৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। ৩৫ বছর বয়সে ধূমপান ত্যাগ করলে ৮.৫ বছর বেশি বাঁচার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি ৬০ বছর বয়সে ধূমপান ত্যাগ করলেও আয়ুতে ৩.৭ বছর যোগ হতে পারে। তাই ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করার সবচেয়ে ভালো সময় এই মুহূর্তেই।
৩. নিজের সুখকে প্রাধান্য দিন:
হাসিমুখ ও প্রসন্ন থাকা দীর্ঘায়ু লাভের রহস্য হতে পারে। ৩৫ টি জরিপের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সুখী ব্যক্তিদের জীবন ১৮% দীর্ঘায়িত হয়। তাই নিজের যত্ন নিন এবং সবসময় হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করুন।
৪. মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন:
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ও উদ্বেগ আমাদের আয়ু কমিয়ে দিতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি দ্বিগুণ করে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে অকালমৃত্যুর ঝুঁকি ৩ গুণ বাড়িয়ে দেয়।
৫. ইতিবাচক মনোভাব রাখুন:
জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখুন এবং প্রাণ খুলে হাসার চেষ্টা করুন। ইতিবাচক মনোভাব মানসিক চাপের কুফলগুলো কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।
৬. আপনজনদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখুন:
আপনজনদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন। সুস্থ সামাজিক জীবন মানসিক চাপ কমিয়ে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দীর্ঘায়ু পেতে সাহায্য করে। আপনজনদের সাহায্য করা এবং সঙ্গ দেওয়া নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।
৭. কর্তব্যবোধ:
এক গবেষণায় ১৫০০ জন শিশুকে বার্ধক্য পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, নিয়মানুবর্তী ও কর্মঠ ব্যক্তিরা ১১% বেশি আয়ুস্কাল লাভ করে। শৃঙ্খলাবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক ব্যাধি ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম থাকে বলে জানা যায়।
৮. পর্যাপ্ত ঘুম:
নিয়মিত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম দীর্ঘ জীবন লাভ করতে সহায়ক হতে পারে। অপরদিকে, ৫-৭ ঘণ্টার কম অথবা ৮-৯ ঘণ্টার বেশি ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
৯. সুষম খাদ্য:
পুষ্টিকর ও সুষম খাবার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, শস্যজাত খাবার, মাছ, মাংস, ডিম ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
আরো পড়ুন:
১০. নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা:
নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা করিয়ে স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিন। কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নির্ধারিত চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
উপসংহার:
উপরে উল্লেখিত ১০ টি অভ্যাস নিয়মিত অনুশীলন করলে আমরা দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারি। মনে রাখবেন, সুস্থ জীবনধারা মেনে চলা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।