বইমেলা রচনা। ১৫-৩০ পয়েন্ট সকল শ্রেনির জন্য একুশে বইমেলা
বইমেলা রচনাটি ৩য় শ্রেনি, ৪র্থ শ্রেণি, ৫ম শ্রেণি, ষষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনি উপযোগী লেখা হয়েছে। ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক সময় বইমেলা রচনা না দিয়ে বলা হয় বইমেলা সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখুন। আবার চাকরি কিংবা ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে আসে বইমেলা সম্পর্কে অনুচ্ছেদ লিখুন। বাংলা ২য়পত্র বিষয় থেকে বইমেলা রচনাটি সহজ ভাষায় লিখা হয়েছে । ৩য় থেকে ৭ম শ্রেনি উপযোগী করে লেখা হয়েছে।
বইমেলা রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। যেন, একবার পড়লেই মুখস্থ হয়ে যায়। বইমেলা এর জায়গায় যদি আসে আদর্শ বিদ্যালয় তাহলেও রচনাটি লিখতে পারেন। Book Fair essay is written for class- 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10
বইমেলা রচনা
ভূমিকা: বইমেলা বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। সাধারণ অর্থে ‘মেলা’ বলতে আমরা যা বুঝি, ‘বইমেলা’ তা থেকে একটু পৃথক। বইমেলায় সাধারণ ‘মেলার মতো আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা থাকে না। বইপ্রেমী মানুষের মিলনমেলা ঘটে বইমেলায়। আমাদের দেশের বইমেলার ইতিহাস খুব বেশি পুরোনো নয়। এ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বইমেলা এগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বইমেলার আন্তর্জাতিক ইতিহাস
বইমেলা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় বিদেশের মাটিতে। ত্রয়োদশ শতকের স্টুরব্রিজের মেলাকে প্রথম অনুষ্ঠিত বইমেলা বলে ধরা হয়। এরপর ১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে বই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে ১৬২২ খ্রিষ্টাব্দে এক উল্লেখযোগ্য পুস্তক প্রদর্শনী আয়োজিত হয়, যা ছিল মূলত মেলারই অংশ। সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ বইমেলার আয়োজন করা হয় ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে। আমেরিকা কোম্পানি অব বুক সেলার্সের উদ্যোগে ম্যাথু কেরি এর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এটি চালু ছিল। শুধু বই নিয়ে যে মেলা, সেটি প্রথম আয়োজিত হয় ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে। বইমেলার ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলা, যার সূচনা ঘটে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে।
লেখক-প্রকাশক-পাঠকের মিলনমেলা
নানা ধরনের মেলার মধ্যে বইমেলার আমেজ ভিন্ন স্বাদের। বইমেলায় কেবল বইয়ের সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটে না, মেলার মাধ্যমে পাঠক, লেখক ও প্রকাশকের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টি হয়। বইমেলায় লেখকদের সঙ্গে কথা বলে, মতবিনিময়ের মাধ্যমে বইপ্রেমীরা এক নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করে। অনেকে প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নিতে, তার সঙ্গে পরিচিত হতে মেলায় আসে। এ যেন সত্যি পাঠক-লেখক ও প্রকাশকের এক সুন্দর মিলনমেলা।
আনন্দমুখর পরিবেশ ও বইমেলা
বইমেলার পরিবেশ অন্যান্য মেলার মতো নীরব নয়। এখানে রস ও আনন্দ দুটিই আছে। বইমেলার বিচিত্র মনোরম পরিবেশ সবাইকে নির্মল আনন্দের আমেজ দেয়। স্কুলের ছোট ছেলেমেয়েরা এখানে এসে তাদের পছন্দের বই নিজের চোখে দেখে সংগ্রহের আনন্দ পায়।
বাংলাদেশের বইমেলার ইতিহাস
বাংলাদেশে বইমেলা আয়োজনের ইতিহাস খুব বেশি পুরোনো নয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে সর্বপ্রথম একটি বইমেলার আয়োজন করা হয়। ভাষাশহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা একাডেমিতে বইমেলার আয়োজন করা হয়। ১৯৮৫ সালে এর নামকরণ করা হয় ‘একুশে বইমেলা’। ১৯৯৫ সাল থেকে সরকারি উদ্যোগে এর আয়োজন করা হয়। এরপর থেকে বাংলা একাডেমির বইমেলা ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বইমেলা
বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বইমেলার মধ্যে ‘একুশে বইমেলা’ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ঢাকার পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্যোগে বইমেলার আয়োজন করে থাকে। এগুলো ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা পর্যায়েও সুবিধাজনক সময়ে বইমেলার আয়োজন করা হয়। বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ‘একুশে বইমেলা’ একটু ভিন্ন ধাঁচের। এখানে বইমেলার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকাশনা বা বিভিন্ন লেখক তাঁদের বইয়ের প্রকাশনা উৎসবেরও আয়োজন করে থাকেন। এ ছাড়া আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়।
বইমেলার চিত্র
আমাদের দেশের বিভিন্ন বইমেলায় প্রায় একই ধরনের চিত্র দেখা যায়। ছোট ছোট অনেক বইয়ের দোকান থাকে, যেগুলোতে থাকে বিভিন্ন ধরনের বই। এ দোকানগুলোকে বলা হয় স্টল। স্টলগুলোতে নতুন ঝকঝকে বই মনোরমভাবে সজ্জিত থাকে। সুন্দরভাবে সাজানো এ বইগুলো দর্শকদের আকর্ষণ করে। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, রম্য রচনা, ভ্রমণকাহিনি, সমালোচনা প্রভৃতি ধরনের বই পাওয়া যায় বইমেলায়।
বইমেলায় যারা আসে, তারা সবাই বই কিনতে আসে না। অনেকে আসে ঘুরে দেখার জন্য। আবার বইমেলায় আসা সবার রুচি একরকম নয়। তাই সবার রুচিকে প্রাধান্য দিয়ে স্টলগুলো নিজেদের সুনামকে ধরে রাখে। বইমেলায় সেরা প্রকাশনাকে পুরস্কৃত করা হয়। এর ফলে প্রকাশকরা ভালো মানের বই প্রকাশে উৎসাহী হন।
তাৎপর্য: বইমেলা
বিভিন্ন লেখক ও পণ্ডিতদের চিন্তাচেতনা, জীবনদর্শন, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি একটি বইয়ে প্রকাশিত হয়। বইমেলায় কেবল আমাদের দেশের লেখকেরই নয়, বিদেশি অনেক লেখকের বইও পাওয়া যায়। তাই বইমেলা হলো জ্ঞানের সম্ভার। এই বইমেলা বাঙালির জীবনে যোগ করেছে এক নতুনমাত্রা, বইপ্রেমীদের তো বটেই। বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই বিক্রেতা ও প্রকাশনা সংস্থাগুলো এক নতুন আমেজ নিয়ে জেগে ওঠে।
এই সময় অনেক নতুন নতুন পত্রিকা, বিশেষ করে সাহিত্য পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করে। বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বইমেলার সময় তাদের বইগুলোতে নির্দিষ্ট পরিমাণে ছাড় দিয়ে থাকে। এতে ক্রেতাদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হয়। বইমেলার সময় যে আলোচনার আয়োজন করা হয়; তার মাধ্যমে ক্রেতাদের বই কেনার আগ্রহ জেগে ওঠে। বইমেলা মানুষের ভেতরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়, মানুষকে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করে।
সেই সঙ্গে মানুষের রুচিবোধকেও জাগিয়ে তোলে। বইমেলা কেরল ব্যবসায়িক প্রয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অনেক। বইমেলা অনেক নতুন পাঠক সৃষ্টি করে এবং মানুষকে নতুনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, জ্ঞানের জগৎকে বিস্তৃত করে, চেতনাকে জাগ্রত করে। তাই বইমেলার তাৎপর্য অপরিসীম।
প্রভাব: বইমেলা
বই মানুষকে জ্ঞানের রাজ্যে নিয়ে যায়, অজানাকে জানায়। বইকে বলা হয় মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট বন্ধু। ভালো বই মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটায়। আমাদের সমাজে মানুষে মানুষে বিভেদ বিদ্যমান। বই মানুষে মানুষে এই বিভেদের প্রাচীর ধ্বংস করে। বই মানুষের সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তোলে, মনুষ্যত্বকে উদ্বোধিত করে, জীবনাদর্শকে সুনির্দিষ্ট করে। মানুষের বিপদের দিনে বই তাকে পথ দেখায়, দুঃখের দিনে বই তাকে সঙ্গ দেয়।
বই পড়ে মানুষ মুক্ত জীবনের স্বাদ গ্রহণ করে আর এই বই ক্রয় করার উৎকৃষ্ট স্থান হলো বইমেলা। বইমেলায় জ্ঞানের পাশাপাশি পাওয়া যায় আনন্দ। বইমেলা সকল ধরনের মানুষের কাছে আজ মিলনমেলা হয়ে উঠেছে। এ দেশের তরুণ প্রজন্ম বইমেলা সম্পর্কে বেশি আগ্রহী। তাদের চিন্তা-চেতনা, মানসিকতা, বই দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। কেবল তরুণ প্রজন্মই নয়, সব বয়সের এবং সব স্তরের মানুষের জীবনে এই বইমেলার প্রভাব রয়েছে।
একুশে বইমেলা
একুশে বইমেলা আজ বাঙালির ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বাঙালি জাতির সংস্কৃতিচর্চার ও সৃজনশীলতার বিকাশে একুশে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিবছর ঘুরেফিরে দখিনা হাওয়ার আমেজ নিয়ে ‘একুশে বইমেলা’ আমাদের মাঝে উপস্থিত হয় বলিষ্ঠ পদক্ষেপে। ‘একুশে বইমেলা’র পরিধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেলার একটি অংশকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলা চলাকালীন বই প্রকাশ উপলক্ষে বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বইমেলায় প্রতিদিন কোনো না কোনো বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মাসব্যাপী এ মেলার প্রথম দিন থেকেই ছোট বড় সকলের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মেলার সুবিশাল প্রাঙ্গণ। পরিণত হয় লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের মিলনমেলায়। একটি পাঠানুরাগী প্রজন্ম গড়ে তুলতে সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলা একাডেমির বইমেলা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি লালনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন রচনা:
উপসংহার
বইমেলা মানুষের সৃজনশীলতায় অবদান রাখে। বইমেলা মানুষের পাঠকসত্তাকে জাগিয়ে তোলে, চিন্তার পরিধিকে বিস্তৃত করে। এর মাধ্যমে রুচিবোধের পরিবর্তন ঘটে। তবে কিছু অসাধু বই বিক্রেতা কুরুচিপূর্ণ বই বিক্রি করে, যা মানুষের মনকে কলুষিত করে। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে প্রশাসনকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। নতুবা এই বইমেলার মহৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।
সর্বোপরি বইমেলা মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করে, জ্ঞানের রাজ্যে অবাধ প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে এবং বিস্তৃতিতে আমরা একে স্বাগত জানাই ।
সবশেষে
অনেকেই বইমেলা রচনা pdf চেয়েছেন। বইমেলা রচনা class 8, আদর্শ গ্রাম রচনা ক্লাস ২, আদর্শ গ্রাম অনুচ্ছেদ রচনা, বইমেলা রচনা ৩য় শ্রেণি, বইমেলা রচনা ক্লাস 6, বইমেলা রচনা class 10 সহ সকল চাহিদার পূরন হবে এই পোস্ট। মাই ক্লাসরুম ফেসবুক পেজ এখানে
যেভাবে খুজে পাবেন: বইমেলা রচনা সহজ ভাষায় ২০০ শব্দ, ৩০০ শব্দ, ৪০০ শব্দ, ৪৫০ শব্দে লেখা হয়েছে। বিভিন্ন ক্লাসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে রচনাটি লেখা হয়েছে। বইমেলা রচনাটি ৬ষ্ঠ ৭ম ও ৮ম শ্রেণির জন্য ১৫ পয়েন্ট ২০ পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। ৯ম ১০ম ১১শ ও ১২শ ক্লাসের জন্য ২৫ পয়েন্ট ও ৩০ পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। অনেকে বইমেলা রচনা pdf ডাউনলোড করতে চান। আপনি মাই ক্লাসরুম থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন না। ধন্যবাদ।