বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা ১৫০ থেকে ১৫০০ শব্দের Pdf
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনাটি ৩য় শ্রেনি, ৪র্থ শ্রেণি, ৫ম শ্রেণি, ষষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনি উপযোগী লেখা হয়েছে। ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা না দিয়ে বলা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখুন। আবার চাকরি কিংবা ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে অনুচ্ছেদ লিখুন। বাংলা ২য়পত্র বিষয় থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনাটি সহজ ভাষায় লিখা হয়েছে । ৩য় থেকে ৭ম শ্রেনি উপযোগী করে লেখা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। যেন, একবার পড়লেই মুখস্থ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জায়গায় যদি আসে আদর্শ বিদ্যালয় তাহলেও রচনাটি লিখতে পারেন। Flood Effect of Bangladesh essay is written for class- 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
ভূমিকা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ ও নিপীড়নের হাত থেকে বাঙালি জাতিকে রক্ষা করতে তিনি দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে তিনি নেতৃত্ব প্রদান করেন। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন।
তাঁর এই অসাধারণ দেশপ্রেম ও দূরদর্শী নেতৃত্ব দ্বারা তিনি সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর ও তৎকালীন তুখোড় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ তাই অকৃত্রিম ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতায় ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সমাবেশে তাঁকে জাতির জনক ও বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। বাঙালি জাতি যুগ যুগ ধরে তাঁকে স্মরণ করবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম-পরিচয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুন। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। তাঁর বড় বোন ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী।
তাঁর ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের। ছোটবেলায় বঙ্গবন্ধুকে আদর করে ‘খোকা’ নামে ডাকা হতো। বাঙালির প্রাণপুরুষ, অসীম সাহসী এই দেশপ্রেমিক রাজনীতিক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে নৃশংসভাবে সপরিবারে নিহত হন।
যা বাঙালি জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। আজও বাঙালির হৃদয় তাঁর জন্য ডুকরে কাঁদে। তবে দৈহিকভাবে তাঁর মৃত্যু ঘটলেও তিনি বাঙালি জাতির হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন।
শেখ মুজিবের বাল্যকাল
কিশোর বঙ্গবন্ধু ছোটবেলা থেকেই ছিলেন জনদরদি। ছোটবেলা থেকেই তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সমান চোখে দেখতেন। একবার স্কুল থেকে ফেরার সময় এক গরিব বন্ধুকে নিজের ছাতা দিয়ে তিনি বৃষ্টিতে ভিজে বাড়িতে ফেরেন। পারিবারিক আনন্দঘন পরিবেশে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর বাল্যকাল কেটেছে।
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ৭ বছর বয়সে স্থানীয় গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। নয় বছর বয়স তথা ১৯২৯ সালে তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। পরে তিনি মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু ১৯৩৪ সালে তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় ৪ বছর তাঁর লেখাপড়া বন্ধ থাকে।
অতঃপর ১৯৩৭ সালে আবারও তিনি মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন এবং এ স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে বিএ পাস করেন। ১৯৪৬ সালে বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে আইন বিষয়ে পড়ার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
রাজনীতি সচেতনতা
শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তিনি জেলে যান। তাঁর স্কুলের ছাত্রাবাস ছিল জরাজীর্ণ। তাই ছাত্রাবাস মেরামতের জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। এই অর্থের জন্য তিনি শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পথরোধ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিশোর শেখ মুজিবুর রহমানের সাহস দেখে শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক বিস্মিত হয়েছিলেন এবং ছাত্রাবাস মেরামত করার জন্য অর্থের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করায় তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। উল্লেখ্য, ৬১ বছর পর ১৪ আগস্ট ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়।
জনদরদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বাল্যকাল থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান দরিদ্র মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। একবার তিনি নিজের বাড়ির গোলার ধান গরিব চাষিদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। তাঁর পিতা এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘এবার চাষিদের জমির ধান বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। আকালে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। আমাদের মতো তাদের পেটেও ক্ষুধা আছে। তারাও আমাদের মতো বাঁচতে চায়।’ এভাবেই শেখ মুজিবুর রহমান বাল্যকাল থেকেই জনদরদি হয়ে ওঠেন।
বঙ্গবন্ধুর সংসারজীবন
১৯৩৮ সালে আঠারো বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফজিলাতুন্নেছার বিয়ে হয়। এই দম্পতি দুই কন্যা ও তিন পুত্রসন্তান লাভ করেন। কন্যারা হলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। আর পুত্রদের নাম শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। বাঙালির বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এই রাজনীতিক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে তিন পুত্র ও স্ত্রীসহ উচ্চাভিলাষী কিছু সেনাসদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।
রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ
ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি। তাঁর অসাধারণ নেতৃত্ব গুণের কারণে ১৯৪৬ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পিকেটিংয়ের সময় গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীকালে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হলে কারারুদ্ধকালীন তিনি যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৬৬ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানি শাসকেরা বাংলা ভাষা রক্ষায় সংগ্রামরতদের রাজপথে গুলি করে হত্যা করে।
কারারুদ্ধ থাকা অবস্থায় এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু অনশন ধর্মঘট করেন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। আর এভাবেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ঘোষণা
১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনেই বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন, যা ছিল কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের পরিপূর্ণ রূপরেখা। এটি বাঙালির ‘ম্যাগনাকার্টা’ সনদ বা মুক্তির দলিল হিসেবে পরিচিত। শেখ মুজিবুর রহমান এই ছয় দফাকে ‘আমাদের বাঁচার দাবি’ শিরোনামে প্রচার করেছিলেন ! কিন্তু বাঙালির এই প্রাণের দাবিকে সম্মেলনের উদ্যোক্তারা প্রত্যাখ্যান করেন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও গণ-অভ্যুত্থান
১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে আরও ৩৪ জনকে এই মামলার আসামি করা হয়। এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে গণ-আন্দোলন সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, পুলিশের গুলিবর্ষণ প্রভৃতির ফলে আন্দোলন চরম রূপ ধারণ করলে পাকিস্তান সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯-এ শেখ মুজিবের সম্মানে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ সমাবেশে তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
অসহযোগ আন্দোলন
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক আইনসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্র আঁটতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৭১ সালে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন।
এ জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিবাদস্বরূপ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় দেশ স্বাধীনের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। আন্দোলনে ভীত হয়ে ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, সেই ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বলেন :
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
ঐ দিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য প্রায় দশ লাখ মানুষ রেসকোর্স ময়দানে এসেছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেই স্বাধীনতাসংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে লাখ লাখ বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ঘোষণা
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে নিরীহ, নিরস্ত্র ও অসহায় বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা চালায়। ঐ রাতেই তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। আর গ্রেফতারের পূর্বমুহূর্তে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় মুজিব নগর সরকার। বর্বর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে এবং সেই সঙ্গে শুরু করে ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠনসহ ভয়াবহ নৃশংসতা। এ জুলুম-অত্যাচার বীর বাঙালি মেনে নেয়নি। এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও আদেশে উদ্বুদ্ধ হয়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অগ্রগণ্য।
সংগ্রামী জীবন
শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন বলেই তাঁর জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর থেকেই তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য সংগ্রাম শুরু করেন। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ‘উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ ঘোষণা করলে শেখ মুজিবের প্রস্তাবে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন পরিচালনা করায় তাঁকে গ্রেফতার এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৫০ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের ঢাকায় আগমন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দুর্ভিক্ষবিরোধী মিছিল বের হয়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জের আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন এবং মন্ত্রিত্ব পান।
নিজ দলের জন্য সম্পূর্ণ সময় ব্যয় করার তাগিদে ১৯৫৭ সালে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৬১ সালে ছাত্রদের নিয়ে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাঙালির মুক্তিসনদ ছয় দফা ঘোষণা করেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি।
২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। এভাবে শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন এবং বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য দাবি তুলে ধরতে সংগ্রামী জীবন বেছে নিয়েছেন।
শেখ মুজিবুর রহমানের কারাবরণ
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। ভাষা আন্দোলনের সময় ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে তাকে প্রায় দু’বছর পাঁচ মাস জেলে আটক রাখা হয়। ১৯৫৪ সালের ৩০ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে করাচি থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করে গ্রেফতার হন এবং ২৩ ডিসেম্বর মুক্তিলাভ করেন।
১৯৫৮ সালে ১২ অক্টোবর তৎকালীন সামরিক সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। প্রায় চৌদ্দ মাস জেলখানায় বন্দি থাকার পর তাঁকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় জেল গেটেই গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬০ সালে ৭ ডিসেম্বর তিনি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬২ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়ে ১৮ জুন মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬৪ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ১৪ দিন পূর্বে তিনি আবার গ্রেফতার হন। ১৯৬৫ সালে তথাকথিত রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে মামলায় তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে ঢাকা’কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। একের পর এক দাবি নিয়ে জনগণের অধিকারের কথা বলার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের প্রথম তিন মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, পাবনা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন শহরে আটবার গ্রেফতার হন ও জামিন পান। ১৯৬৮ সালে ১৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
১৯৬৯ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি জনগণের অব্যাহত প্রবল চাপের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্য আসামিদের মুক্তিদানে বাধ্য হয়। এরপর ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর আবার তিনি গ্রেফতার হন। এবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি মুক্তি লাভ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু লন্ডন হয়ে দেশের মাটিতে পা রাখেন।
বঙ্গবন্ধু সুদীর্ঘ কারাজীবন প্রসঙ্গে এ কথাটি উল্লেখ না করলেই নয়— তিনি একদিন সকালে স্ত্রী রেণুর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেন,
‘একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, “হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।”
আমি আর রেণু দু’জনই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, “আমি তো তোমারও আব্বা।” কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায়।
আমি যখন জেলে যাই, তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।’
[অসমাপ্ত আত্মজীবনী— শেখ মুজিবুর রহমান]
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পেলেও লন্ডন হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই তিনি দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভিত্তি করে তিনি সংবিধান প্রণয়ন করে সে অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
ভিন্নচোখে শেখ মুজিব
শেখ মুজিবুর রহমান এক মহাত্মার নাম। অসীম সাহসী, গভীর আত্মবিশ্বাসের সাথে তাঁর পুরো জীবন ছিল সীমাহীন স্বপ্নময়। স্বপ্ন দেখতেন এ দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও স্বাধীনতার। এজন্য তিনি দেশ-বিদেশ ঘুরে দেশের উন্নয়নের রসদ খুঁজে বেড়াতেন। তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমরা পাই তাঁর “আমার দেখা নয়াচীন” গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন-
‘১৯৫২ সালে জেল হতে বের হলাম, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর।
জেলে থাকতে ভাবতাম আর মাঝে মাঝে মওলানা ভাসানী সাহেবও বলতেন, ‘যদি সুযোগ পাও একবার চীন দেশে যেও।’ অল্পদিনের মধ্যে তারা কত উন্নতি করেছে। চীন দেশের খবর আমাদের দেশে বেশি আসে না এবং আসতে দেওয়াও হয় না। তবুও যতটুকু পেতাম তাতেই মনে হতো যদি দেখতে পেতাম [আমার দেখা নয়াচীন— শেখ মুজিবুর রহমান] কেমন করে তারা দেশকে গড়েছে।’
দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে বঙ্গবন্ধু সর্বদা মানুষের কল্যাণ চেয়েছেন। জীবনের নানা দুঃসময়ে তিনি আলোচনার টেবিলে সবকিছু সমাধানের চেষ্টা করেছেন। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি বারবার যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলেছেন। তেমনি ভাবনায় ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষকে মনে করে তৎকালীন পাকিস্তান (তখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি) প্রসঙ্গে ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে লিখেছেন-
‘পাকিস্তান গরিব দেশ, যুদ্ধ চাইতে পারে না। যুদ্ধ হলে পাকিস্তানের জনগণের সকলের চেয়ে বেশি কষ্ট হবে এই জন্য। তাদের পাট, চা, তুলা অন্যান্য জিনিস বিদেশে বিক্রি না করলে দেশের জনগণের কষ্টের সীমা থাকবে না। দুর্ভিক্ষ মহামারি সমস্ত দেশকে গ্রাস করবে। তাই মানুষের মঙ্গলের জন্য, পাকিস্তানের স্বার্থের জন্য যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।’
[আমার দেখা নয়াচীন— শেখ মুজিবুর রহমান]
মৃত্যু মুহূর্তেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন সত্যিকারের নির্ভীক সাহসী একজন রাজনীতিবিদ এবং শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক। যা তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তেও অটুট ছিল। এ প্রসঙ্গে এনথনি ম্যাসকারনিহাসের বরাত দিয়ে ব্রি. জে. এম সাখাওয়াত হোসেন লিখেছেন-
‘এনথনি ম্যাসকারনিহাসের ‘Bangladesh: A Legacy of Blood’ বইটিতে তিনি যে তথ্য উদ্ঘাটিত করেন, সে বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, মেজর হুদা, মহিউদ্দিন এবং নূর শেখ সাহেবের বাড়িতে প্রবেশ করার পর মহিউদ্দিন সিঁড়ির, উপরে উঠতে গিয়ে শেখ সাহেবের সামনা-সামনি হন। শেখ সাহেব তখন উপর থেকে নিচে নামছিলেন।
যদিও মেজর মহিউদ্দিন মুজিবকে হত্যা করার নিয়তে যাচ্ছিল, কিন্তু জীবনে প্রথমবার মুজিবের সামনা-সামনি পড়াতে এবং তাঁর অবিচল চেহারা আর ব্যক্তিত্ব দেখে কিছুটা ভড়কে যায়, প্রায় তোতলানো ভাষায় বলে ‘স্যার আপনি আসুন’। উচ্চকণ্ঠে মুজিব বলেন, ‘তোমরা কি চাও, তোমরা কি আমাকে মারতে এসেছ? এটা ভুলে যাও। আমাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মারতে পারেনি তোমরা আমাকে মারবে এ চিন্তা করলেই বা কিভাবে।’
[বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৭৫-৮১— ব্রি. জে. এম সাখাওয়াত হোসেন]
শেখ মুজিবের অবদান
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের স্বপ্ন ছিল বাংলার স্বাধীনতা ও বাঙালি জাতিসত্তার প্রতিষ্ঠা। তাঁর এ স্বপ্ন পূরণ হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে। তিনি দেশের শাসনভার গ্রহণ করেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং জাতীয় কবির মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন।
তাঁর শাসনামলেই বাংলাদেশ ‘জাতিসংঘের সদস্যপদ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, ইসলামি সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। তিনিই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন। এ ছাড়া ব্যাংক, বীমাসহ বহু প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করেন। শেখ মুজিবের অবদান বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এবং করবে।
মুজিববর্ষ উদযাপন
মুজিববর্ষ হলো বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য ঘোষিত বর্ষ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০২০-২০২১ সালকে মুজিববর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা করেছিল। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত এ বর্ষ উদ্যাপন করার কথা ছিলো। তবে, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে মুজিববর্ষ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত বাড়িয়ে পালন করা হয়।
মুজিববর্ষে জাতীয় কর্মসূচি
১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বছরব্যাপী এ উদ্যাপন। জাঁকজমকপূর্ণভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য সরকার দুটি কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে একটি ছিল ১০২ সদস্যবিশিষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটি। এ কমিটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে সভাপতি এবং কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে প্রধান সমন্বয়কারী করে গঠন করা হয় ৬১ সদস্যবিশিষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।
কর্মসূচিসমূহ : (পূর্ব নির্ধারিত)
১০ জানুয়ারি ২০২০ : মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনা শুরু
১৭ মার্চ : সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর ৩১ বার তোপধ্বনি। সব সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন।
১৭ এপ্রিল : মেহেরপুরের মুজিবনগর সরকার দিবস উদযাপন।
৭ জুন : ছয় দফা দিবস উদ্যাপন
২৫ সেপ্টেম্বর : জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণদানের বার্ষিকীতে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা।
ফেব্রুয়ারি, ২০২১ : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১ উৎসর্গ করা হয় বঙ্গবন্ধুকে।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ : ১৯৬৯ সালের এ দিনে জাতির জনক’কে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনীর আয়োজন।
৭ মার্চ, ২০২১ : ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপনে সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি ও আর্মি স্টেডিয়ামে জয় বাংলা কনসার্টের আয়োজন।
১৭ মার্চ, ২০২১ : সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মুজিববর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মহামারী করোনা ভাইরাস এর কারণে মুজিববর্ষ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।
বৈশ্বিক উদযাপন
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কোর ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে মুজিববর্ষ পালনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ২০১৯ সালের ১২-১৭ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
মুজিব শতবর্ষে গৃহীত অঙ্গীকার
স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করে সোনার বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। বাবার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব শতবর্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এর মধ্যে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বিনামূল্যে ঘর প্রদানের জন্য গৃহায়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। আর বলেন— “মুজিব শতবর্ষে দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না।”
মুজিববর্ষের থিমসং বা আবহসঙ্গীত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামগ্রিক জীবন ভাবনা এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অনন্য অবদানকে থিমসং বা আবহসঙ্গীতে তুলে ধরা হয়েছে। গীতিকার ড. কামাল আবদুল নাসের তাঁর গান এভাবে শুরু করেছেন—
তুমি বাংলার ধ্রুবতারা,
তুমি হৃদয়ের বাতিঘর
আকাশে-বাতাসে বজ্রকণ্ঠ
তোমার কন্ঠস্বর।
উপসংহার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির জনক। দেশের মানুষের হৃদয়ে তাঁর স্থান ছিল সংগ্রাম ও স্বাধীনতার প্রেরণা হিসেবে। তাঁর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এ জন্য তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ ভূখণ্ড যত দিন থাকবে, তত দিন তিনি অমর, অক্ষয় হয়ে থাকবেন। এ কারণেই কবি অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছেন—
‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’।
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন রচনা:
- মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা
- আমাদের বিদ্যালয় রচনা
- বর্ষাকাল রচনা
- আমাদের গ্রাম রচনা
- আমাদের জাতীয় পতাকা রচনা
সবশেষে
অনেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা pdf চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা class 8, আদর্শ গ্রাম রচনা ক্লাস ২, আদর্শ গ্রাম অনুচ্ছেদ রচনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা ৩য় শ্রেণি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা ক্লাস 6, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা class 10 সহ সকল চাহিদার পূরন হবে এই পোস্ট। মাই ক্লাসরুম ফেসবুক পেজ এখানে।
যেভাবে খুজে পাবেন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা সহজ ভাষায় ২০০ শব্দ, ৩০০ শব্দ, ৪০০ শব্দ, ৪৫০ শব্দে লেখা হয়েছে। বিভিন্ন ক্লাসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে রচনাটি লেখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনাটি ৬ষ্ঠ ৭ম ও ৮ম শ্রেণির জন্য ১৫ পয়েন্ট ২০ পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। ৯ম ১০ম ১১শ ও ১২শ ক্লাসের জন্য ২৫ পয়েন্ট ও ৩০ পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। অনেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা pdf ডাউনলোড করতে চান। আপনি মাই ক্লাসরুম থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন না। ধন্যবাদ।
সার্চ করবেন যেভাবে: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা ২০০ শব্দের,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা pdf, শেখ মুজিবুর রহমান জীবনী রচনা, শেখ মুজিবুর রহমান জীবনী pdf, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ রচনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনাদর্শ pdf, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ