স্বাস্থ্যকথা
বয়স যখন ৬০- কি খাবেন? কি খাবেন না?

সব বয়সে ভালো থাকতে খাদ্য ও পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ষাটোর্ধ্ব বয়সে পৌঁছালে, আমাদের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে যা আমাদের খাদ্যাভাস ও পুষ্টির চাহিদাও প্রভাবিত করে।
বয়স বাড়লে কেন খাদ্যাভ্যাস বদলায়?
- খাদ্য বিপাক ক্ষমতা কমে যায়: বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে খাদ্য বিপাক ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে বেশি বয়সে কম ক্যালোরি, অর্থাৎ কম খাবারের প্রয়োজন হয়।
- মাংসপেশি ক্ষয়: বয়সের সাথে সাথে মাংসপেশি ক্ষয় হতে থাকে। এর ফলে শারীরিক শক্তি কমে যায়।
- হাড় ও পেশির সমস্যা: হাড় এবং পেশির সমস্যার কারণে বয়স হলে চলাচল ও নড়াচড়া কমে যায়। যার ফলে শরীর কম ক্যালোরি ব্যবহার করে।
- পুষ্টির ঘাটতি: খাবার পরিমাণ কমে যাওয়ার পরেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখার জন্য প্রবীণদের ভিটামিন ও মিনারেল বেশি পরিমাণে প্রয়োজন হয়।
- খাবারের রুচি হ্রাস: বয়সের সাথে সাথে খাবারের রুচি কমে যেতে পারে।
- খাদ্য-সম্পর্কিত রোগ: ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, হৃদরোগ এবং বার্ধক্যজনিত অন্যান্য রোগের কারণে অনেক ধরনের খাবার খাওয়া বারণ হতে পারে।
- পুষ্টি শোষণে সমস্যা: খাবার থেকে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি ইত্যাদি পুষ্টিগুণ শোষণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
- পানিশূন্যতা: শরীরের বিভিন্ন বদলের কারণে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের পানির চাহিদা অনুযায়ী তৃষ্ণা নাও পেতে পারে।
প্রবীণদের জন্য খাদ্যাভাসের পরামর্শ:
পরিমিত খাবার:
- পরিমাণে অল্প কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খাবেন। অপুষ্টিজনিত রোগ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত মেদজনিত রোগ প্রতিরোধ করতে উচ্চ পুষ্টিমানের খাবারে মনোযোগী হওয়া উচিত।
আমিষ বা প্রোটিন:
- মাংসপেশির অতিরিক্ত ক্ষয় রোধ করতে আমিষ জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে। ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি প্রাণিজ খাদ্য আমিষ এবং ভিটামিন বি১২-এর ভালো উৎস। উদ্ভিজ্জ আমিষ পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রকারের ডাল, শিম, বাদাম ইত্যাদি থেকে।
খাদ্যআঁশ:
- পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে খাদ্যআঁশ বেশি খাবেন। শাকসবজি, ফলমূল সবসময়ই পরিপূর্ণ পুষ্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি:
- নিজেকে সচল রাখতে এবং হাড় সুস্থ রাখতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুগ্ধজাত খাবার ও গাঢ় সবুজ শাক জাতীয় খাবার এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছের তেল খাওয়া উচিত।
পানি:
- পানিশূন্যতার কারণে শরীরে অনেক ধরনের জটিলতা কারণ হতে পারে। তাই দিনে নিয়মিতভাবে পানি কয়েকবার পান করতে হবে। নিজের স্বাস্থ্য ও শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণ পানি পান করার চেষ্টা করবেন।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্যজনিত বদলগুলো প্রতিরোধ করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই বোঝায়। রঙিন ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম, শস্য বীজ এমনকি চা-কফি, ডার্ক চকলেট এর উৎস হতে পারে।
পরিহার্য খাবার:
- অতিরিক্ত চিনি এবং চর্বি জাতীয় খাদ্য পরিহার করবেন। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে লবণ পরিমিতভাবে গ্রহণ করবেন। খাবারে অতিরিক্ত লবণের বদলে লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন।
বয়স্ক মানুষের সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ
এছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মাল্টি ভিটামিন ক্যাপসুল প্রবীণরা গ্রহণ করতে পারেন। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস সবার জন্য, মনে রাখবেন সুস্থ জীবনযাপন শুরু করার কোনো বয়স নেই।
মনে রাখবেন:
- এই নির্দেশিকাগুলো সাধারণ পরামর্শ। আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণের জন্য একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।
- যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তাহলে আপনার খাদ্য সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং পর্যাপ্ত ঘুমানোও সুস্থ থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শেষকথা
বয়স্ক মানুষের সমস্যা গুলি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন কি খেতে হবে জানুন। সুস্থ থাকার জন্য এ বিষয়গুলো মেনে চলুন।