বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা। রূপসী বাংলাদেশ ৩০ পয়েন্ট
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনাটি ৩য় শ্রেনি, ৪র্থ শ্রেণি, ৫ম শ্রেণি, ষষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনি উপযোগী লেখা হয়েছে। ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক সময় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা না দিয়ে বলা হয় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখুন। আবার চাকরি কিংবা ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে আসে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পর্কে অনুচ্ছেদ লিখুন। বাংলা ২য়পত্র বিষয় থেকে বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনাটি সহজ ভাষায় লিখা হয়েছে । ৩য় থেকে ৭ম শ্রেনি উপযোগী করে লেখা হয়েছে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনাটি ।
বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। যেন, একবার পড়লেই মুখস্থ হয়ে যায়। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এর জায়গায় যদি আসে আদর্শ বিদ্যালয় তাহলেও রচনাটি লিখতে পারেন। Bangladesh Prakritik Soundorjo essay is written for class- 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা
ভূমিকা: বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবি গেয়েছেন—
“কোন বনেতে জানিনে ফুল গন্ধে এ মন করে আকুল
কোন গগনে উঠেরে চাঁদ এমন হাসি হেসে।
আঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ওই আলোতেই নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে।”
কবির বাণী সার্থক। বাংলাদেশকে প্রকৃতির সুরম্য লীলানিকেতন বললে মোটেই অত্যুক্তি হবে না। লীলাময়ী প্রকৃতি এখানে মুক্ত হাতে সৌন্দর্য ও মাধুর্য বিতরণ করে। এ দেশে অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শাশ্বতকাল ধরে মুগ্ধ কবিচিত্তে সংগীতের উৎসধারাকে উৎসারিত করছে— ভাবুকের হৃদয়ে অনির্বচনীয় ভাবের হিল্লোল তুলেছে। এ স্নিগ্ধ নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের মূলে দেখতে পাই ষড়ঋতুর বিচিত্র লীলা।
ঋতুবৈচিত্র্য: যারা বিশ্বপ্রকৃতির অনন্ত বিচিত্রতার মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেতে চান, তাদের কাছে এ দেশের নির্মল নীলাকাশ, নদীকান্তার, পুষ্প-পল্লব, বৃক্ষ বটচ্ছায়া, সুশীতল পল্লি বীথিকার এক অপূর্ব আবেদন রয়েছে। পদ্মা, মেঘনা, গোমতি প্রভৃতি স্রোতস্বিনী এর বুকে চিরচঞ্চলা নটীর ন্যায় লীলায়িত ভঙ্গিতে ছুটে চলছে। বাংলাদেশ শস্য শ্যামল দেশ। এর স্নিগ্ধ তরুচ্ছায়া, বিহঙ্গের কলগীতি ও মধুর গুঞ্জন, প্রভাতের অরুণরাগ ও সায়াহ্নের স্তব্ধ গাম্ভীর্য একে প্রকৃতির লীলা-নিকেতনে পরিণত করেছে।
আমরা পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ি, পাখির ডাকে জাগি। সুরের আনন্দে আমাদের ঘুমন্ত মন জেগে ওঠে। কর্মক্লান্ত দিবসের অবসানে যখন জেগে ওঠে তারকার দীপালি, প্রকৃতি তখন বধূর মতো দিবসের বেড়া ধরে সীমার পরপারে অসীমকে উপলব্ধি করে, প্রসারিত চিত্তকে গুটিয়ে অন্তিম অর্ঘ্যের মতো আপনাকে নিঃশেষে সমর্পণ করে সৃষ্টিকর্তার পদতলে। অরণ্য-ছায়া ও পুষ্প মঞ্জরীর এমন মাধুর্য, মানবপ্রকৃতির সাথে পশুপাখির এমন অকৃত্রিম সৌহার্দ বিশ্বে অতুলনীয়। এখানে মানুষের চেহারায় যেমন বৈচিত্র্যের সমাবেশ ঘটেছে, তেমনি প্রকৃতির মাঝেও বৈচিত্র্যের অভাব নেই। ঋতুভিত্তিক বাংলার রূপ হয় পরিবর্তিত।
বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা
গ্রীষ্ম কাল:
বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস মিলে গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মের খররৌদ্রে যে শান্ত প্রকৃতি অশান্ত দুর্দম আবেগে ফেটে পড়তে পারে, তা বাংলার কালবৈশাখী যে না দেখেছে সে বুঝবে না।
বর্ষাকাল
আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস মিলে বর্ষাকাল। বর্ষার ধারাবর্ষণ জগতের যত কথা, আজ সব ডুবিয়ে মূক-প্রকৃতির কণ্ঠে এনে দেয় মুখরতা। চারদিকে ঝিল্লি-দাদুরীর একটানা ডাক, মেঘভারে দিকে দিকে অন্ধকার নেমে আসে। আর সেই অন্ধকারের বুকে মাঝে মাঝে দেখা দেয় বিদ্যুতের ঝলক। এমনি করে অবিরল ধারাবর্ষণের মধ্য দিয়ে বিকশিত বনরাজির সজল গন্ধে বিদায় নেয় বর্ষা প্রকৃতি।
শরৎকাল
ভাদ্র-আশ্বিন মাস মিলে শরৎকাল। এ সময় আকাশে থাকে সাদা মেঘের ভেলা, জলে শুভ্র হংস। মানুষ অভ্যর্থনা জানিয়ে বলে,
“আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ
আমরা গেঁথেছি শেফালি মালা
নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে
সাজিয়ে এনেছি ডালা।”
সব কাজ ফেলে।
বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র
হেমন্তকাল
হেমন্তে চলে ধান কাটার উৎসব। পাকা ধানের গন্ধে বাড়ির চারদিক মুখর হয়। কৃষাণীরা গৃহস্থালির ধান ঝাড়াই-বাছাইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময়ে বাংলার ঘরে ঘরে হয় নবান্ন উৎসব, চলে পিঠাপুলির নিমন্ত্রণ। শান্ত-সৌম্য ঋতু হেমন্ত।
শীতকাল
পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। উৎসব-প্রমত্ত ধরণীর অঙ্গে শীত বুলিয়ে দেয় তার শীতল ছোঁয়া। ধরণী জড়-বিশ হয়ে পড়ে। ক্রমে শীত দূরে সরে যায়।
বসন্তকাল
ফাল্গুন ও চৈত্র মাস মিলে বসন্তকাল। মানুষের আকাঙ্ক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। এ সময় পাখির কল-কাকলি, কোকিলের সুমধুর কুহুতান, দক্ষিণের হাওয়া, আম্রমুকুলের গন্ধ আর ফুলের সমারোহ প্রভৃতি মিলে সৃষ্টি হয় এক অপূর্ব মায়ালোক। কবিগুরুর কথায়,
“আহা আজি এ বসন্তে
কত ফুল ফোটে, কত পাখি গায়।”
বারো মাসব্যাপী বাংলায় চলে ষড়ঋতুর বিচিত্র লীলা। তাই ঋতুতে ঋতুতে দোয়েল, শ্যামা ও কোকিলের মধুর স্বরে আমরা আত্মহারা হয়ে যাই।
গ্রীষ্মে বাংলার প্রকৃতি
বাংলাদেশে প্রকৃতির রূপরঙ্গশালার প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম। গ্রীষ্মে চারদিকের মাঠঘাট ধু-ধু করতে থাকে। প্রখর অগ্নিদাহ নিয়ে আবির্ভাব ঘটে রুদ্র তাপসের। সমগ্র জীবজগৎ ও উদ্ভিদ জগতে নেমে আসে এক প্রাণহীন, রসহীন বিবর্ণতার পাড়ুর ছায়া, শ্রান্ত-ক্লান্ত পথিক হাঁপিয়ে উঠে বিশ্রাম নেয় বট-বৃক্ষের ছায়ায়। এ সময়ে প্রচণ্ড তাপে ও রুক্ষতায় মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে দেশবাসী হাঁপিয়ে ওঠে।
নবযৌবন সৃষ্টিশীল বর্ষার সৌন্দর্য
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ দূর করতে বর্ষার আবির্ভাব ঘটে। প্রচণ্ড বর্ষণে পল্লিজননীর বুকে বয়ে চলা জলের স্রোতের রূপ পরিগ্রহ করা যায়। গাছপালা বৃষ্টির জল পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। মৃতপ্রায় নদ-নদীগুলো আবারও জলে পরিপূর্ণ হয়ে যেন নবযৌবন লাভ করে। বর্ষা প্রকৃতির সকল শূন্যতাকে সৃষ্টিতে পরিণত করে।
শরতের শুভ্র মেঘের ভেলা
শরতের আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা ভেসে চলে। দেখে যেন মনে হয় কোনো সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে বাংলার রূপকে অবিরাম সৌন্দর্যে ভরিয়ে দেবার টানে মেঘগুলো ভেসে এসেছে বাংলার আকাশে। শরতের শুভ্র মেঘ মানুষের সকল মলিনতাকে দূরে সরিয়ে মনে এনে দেয় পরম প্রশান্তি।
হেমন্তের উদারতা
হেমন্ত তার দুহাত উজাড় করে ফসলের ডালি সাজিয়ে রাখে বাংলার বুকে। এ যেন হেমন্তের পরম উদারতার পরিচয়। চারদিকে ফসল কাটা ও ফসল ঘরে তোলার ধুম পড়ে যায়। কৃষাণ-কৃষাণীদের মুখে ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি।
শীতের রূপদৃশ্য
হেমন্ত সমৃদ্ধিতে ভরে দিয়ে বিদায় নেয়। তারপর আসে শীত। শুষ্ক, কাঠিন্য ও রিক্ততায় বিষাদময় প্রতিমূর্তিতে শীতের আবির্ভাব ঘটে। এ সময়ে ধান কাটা মাঠে কী সীমাহীন শূন্যতা! তারপরেও মানুষের মনে থাকে আনন্দের ছোঁয়া। এ সময়ে ঘরে ঘরে পিঠাপুলির আয়োজন চলতে থাকে। নতুন খেজুর রসের মিষ্টি মধুর সুভাসে পল্লির আঙিনা মধুময় হয়ে ওঠে। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে থাকে সমস্ত গ্রাম। আস্তে আস্তে সুয্যিমামা উঁকি দিতে থাকে, সাড়া পড়ে যায় জনজীবনে।
বসন্তের ফুলের সমাহার
বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্যের মধ্যে বসন্ত ঋতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে প্রকৃতিতে দেখা যায় নতুন ফুলের সমাহার। ফুলের সৌরভে প্রতিটি চত্বরকে সুশোভিত করে বসন্ত। বসন্তের খেলা জাতির জীবনে সৃষ্টি করে নতুন চেতনা।
“এ বিশ্বে এসেছে বসন্ত,
মেঘের মেঘে সঙ্গীতের ঝড়।”
এভাবে বসন্তের আসার সাথে সাথে আবির্ভূত হয় প্রাণের গান। বসন্তের আহ্বানে প্রকৃতি ও প্রাণীজগত একে অপরকে দীক্ষিত করে।
উপসংহার
বাংলাদেশের প্রকৃতি ও ঋতুবৈচিত্র্য অবারিত সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ বৈচিত্র্য মানুষকে আচ্ছন্ন করে। আমরা যদি প্রকৃতির প্রতিটি ভিন্নতার দিকে মনোযোগী হই, তবে প্রকৃতির অনেক গুণাবলি আমাদের অভিজ্ঞতার পরিসরকে বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ প্রকৃতির একটি নৈসর্গিক খেলা, যেখানে ঋতু সমূহ মিলে এক অপূর্ব রূপ সৃষ্টি করে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে মানুষের চিত্ত আকৃষ্ট হয়, এবং প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন হয়।
সবশেষে
অনেকেই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা pdf চেয়েছেন। বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য রচনা class 8, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা ক্লাস ২, বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য অনুচ্ছেদ রচনা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা ৩য় শ্রেণি, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা ক্লাস 6, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা class 10 সহ সকল চাহিদার পূরন হবে এই পোস্ট। মাই ক্লাসরুম ফেসবুক পেজ এখানে
যেভাবে খুজে পাবেন: বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা সহজ ভাষায় ২০০ শব্দ, ৩০০ শব্দ, ৪০০ শব্দ, ৪৫০ শব্দে লেখা হয়েছে। বিভিন্ন ক্লাসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে রচনাটি লেখা হয়েছে। রূপসী বাংলাদেশ রচনাটি ৬ষ্ঠ ৭ম ও ৮ম শ্রেণির জন্য ১৫ পয়েন্ট ২০ পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। ৯ম ১০ম ১১শ ও ১২শ ক্লাসের জন্য ২৫ পয়েন্ট ও ৩০ পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। অনেকে রূপসী বাংলাদেশ রচনা pdf ডাউনলোড করতে চান। আপনি মাই ক্লাসরুম থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন না।
১১ থেকে ২০ গ্রেডের অনেক চাকরি পরীক্ষা লিখিত হয়। লিখিত চাকরী পরীক্ষাগুলোতে রচনা লিখতে হয়। লিখিত চাকরি পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য উপযোগী করে এই রচনাগুলো লেখা হয়েছে। চাকরী পরীক্ষা যেমন- ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা, ইউনিয়ন সমাজকর্মীর জন্য বাংলা রচনা, খাদ্য অধিদপ্তর এর জন্য বাংলা রচনা প্রস্তুতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়োগ পরীক্ষা প্রস্তুতি, বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি, ব্যাংক লিখিত প্রস্তুতি সহ সকল সরকারি ও বেসরকারি চাকরি পরীক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।