বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনা ২০ – ৩০ পয়েন্ট
বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনাটি ৩য় শ্রেনি, ৪র্থ শ্রেণি, ৫ম শ্রেণি, ষষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনি উপযোগী লেখা হয়েছে। ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক সময় বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনা না দিয়ে বলা হয় বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখুন। আবার চাকরি কিংবা ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে আসে বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার সম্পর্কে অনুচ্ছেদ লিখুন। বাংলা ২য়পত্র বিষয় থেকে বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনাটি সহজ ভাষায় লিখা হয়েছে । ৩য় থেকে ৭ম শ্রেনি উপযোগী করে লেখা হয়েছে।
বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। যেন, একবার পড়লেই মুখস্থ হয়ে যায়। বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার এর জায়গায় যদি আসে আদর্শ বিদ্যালয় তাহলেও রচনাটি লিখতে পারেন। Flood Effect of Bangladesh essay is written for class- 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10
বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার
ভূমিকা : নদীমাতৃক দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ। এদেশের সর্বত্র জালের মতো ছড়িয়ে আছে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড় ইত্যাদি। বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৩০টি নদী রয়েছে এদেশে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র এদেশের বড় নদী। ছোট নদীও রয়েছে অনেক। যেমন : তিস্তা, করতোয়া, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ, গড়াই, কপোতাক্ষ, ধরলা, সুরমা, কুমার, কর্ণফুলী, ইছামতি, মহানন্দা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা, মাতামুহুরি ইত্যাদি।
এগুলো ছাড়াও রয়েছে অনেক শাখানদী, উপনদী ও অসংখ্য ছোট-বড় খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়। শুকনো মৌসুমে পানি তেমন না থাকলেও বর্ষার বৃষ্টিতে এসব নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড় কানায় কানায় জলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তার ওপর আবার অতিবৃষ্টি বা উজানের ঢল এসে অনেক সময় এমন অবস্থা সৃষ্টি করে যে, তখন নদী-নালা, খাল-বিল, মাঠ-ঘাট, বাড়ি-ঘর সবকিছু পানিতে নিমজ্জিত হয়। আর এ অবস্থা হলে তাকেই বলে বন্যা।
বাংলাদেশের বন্যা
বন্যা বাংলাদেশের চিরপরিচিত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রাচীনকাল থেকে ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এদেশে প্রতিবছরই বন্যা দেখা দেয়। কিন্তু কোনো কোনো বছর এ বন্যার মাত্রা এতটাই বেশি হয় যে, তখন জীবন ও সম্পদের প্রচুর ক্ষতি সাধিত হয়। তার প্রভাবে জনজীবন ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। এমন ভয়াবহ বন্যা হয় ১৯৮০, ১৯৮৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০১৬, ২০১৯ সালে।
বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতি
বাংলাদেশের উন্নয়ন যেসব কারণে বাধাগ্রস্ত হয় তার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে বন্যা। বন্যার কারণে প্রতিবছরই এদেশের জানমাল সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বন্যায় কী পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল তার একটি চিত্র নিচের ছকে দেখানো হলো :
সাল | প্লাবিত এলাকা | ক্ষতির পরিমাণ | স্থায়িত্ব |
---|---|---|---|
১৯৮৪ | ২৫ হাজার বর্গমাইল এলাকা | ৩৫,০০০ কোটি টাকা সামগ্রিক আর্থিক ক্ষতি | ২৩ দিন |
১৯৮৭ | ৩৫ হাজার বর্গমাইল এলাকা, ৪০টি জেলা | ১ হাজার লোকের মৃত্যু, ৩৫,০০০ কোটি টাকা | ৬৪ দিন |
১৯৮৮ | ৩৯ হাজার বর্গমাইল এলাকা, ৫১টি জেলা | ১৬০০ মানুষ ও ২ লক্ষ গবাদিপশুর মৃত্যু, ৫০,০০০ কোটি টাকা | ৬৮ শতাংশ |
১৯৯৮ | প্রায় ৪৫ হাজার বর্গমাইল এলাকা, ৫৪টি জেলা | ৩০,০০০ কোটি টাকা | ৯০ দিন |
২০০৪ | আনুমানিক ৪০ হাজার বর্গমাইল এলাকা, ৪৬টি জেলা | ৪৪,০০০ কোটি টাকা | ২০ দিন |
২০১৬ | প্রায় ১২টি জেলার নিচু অঞ্চল | ৬৩৬ কোটি ৮২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, ৬৫. শতাংশ | প্রায় ৯০ দিন |
২০১৯ | প্রায় ২৪টি জেলা প্লাবিত হয় | ৮৭ জন মানুষ মারা যায় |
সাম্প্রতিক বন্যা
২০১৯ সালের জুলাই মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ২৪টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। এ বন্যায় বাংলাদেশের অন্তত ২৪টি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বিবিসি বাংলার তথ্যসূত্র মতে, জুলাই মাসের এ বন্যায় ১ কোটির বেশি মানুষ দুর্গত হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রামে এবারের বন্যায় ইতহাসের সর্বোচ্চ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৮ জুলাই যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২১ সে.মি. উপর প্রবাহিত হয়। বহু ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, মাঠ-ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের মে মাসে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়।
বাংলাদেশের বন্যার কারণসমূহ
বাংলাদেশের বন্যার কারণগুলোকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ১. প্রাকৃতিক কারণ, ২. কৃত্রিম কারণ
১। প্রাকৃতিক কারণ : বাংলাদেশের বন্যার প্রাকৃতিক কারণসমূহ নিম্নরূপ-
ক) জলবায়ু : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অধিকাংশ বন্যা সংঘটিত হয়ে থাকে।
খ) ভৌগোলিক অবস্থান : বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানই এদেশের বন্যার সবচেয়ে বড় কারণ। এদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে অসংখ্য ছোট-বড় নদী। বর্ষাকালে এগুলোর প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে নিম্নাঞ্চল খুব সহজেই প্লাবিত হয় এবং বন্যা দেখা দেয়।
গ) অতিবৃষ্টি : বাংলাদেশ বৃষ্টিবহুল অঞ্চল। বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ফলে বন্যা দেখা দেয়।
ঘ) উজানের ঢল : বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীর উৎপত্তি ভারতে; বিভিন্ন পাহাড়-পর্বতে। বর্ষার মৌসুমে সেখানকার প্রচুর বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে এদেশের নদ-নদীর পানিপ্রবাহ মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যায় এবং বন্যার সৃষ্টি হয়।
ঙ) হিমালয়ের বরফগলা পানি: পৃথিবীর বৃহত্তর পর্বতমালা আমাদের উত্তরে ভারতে অবস্থিত- যেখান থেকে আমাদের বেশ ক’টি নদ-নদীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎপত্তি। কাজেই হিমালয়ের বরফগলা পানি আমাদের নদ-নদী দিয়ে প্রবাহিত হলে বন্যার সৃষ্টি হয়।
২। বন্যার কৃত্রিম কারণসমূহ:
‘ভারতের বাঁধ নির্মাণ: আমাদের অধিকাংশ নদ-নদীর উৎপত্তি ভারতে। ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করে নদীর নিয়মিত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। যেমন: ফারাক্কা বাঁধ, টিপাইমুখ বাঁধ ইত্যাদি। এসব বাঁধ নির্মাণের ফলে একদিকে শুকনো মৌসুমে আমরা যেমন পানিই পাই না অন্যদিকে তেমনই বর্ষার মৌসুমে বাঁধের সবগুলো ব্লুইসগেট একসাথে খুলে দেওয়ায় অতিরিক্ত পানিপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। যার ফলে বন্যা দেখা দেয়।
খ) বনাঞ্চল উজাড়: একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন ২৫% বনভূমি। কিন্তু আমাদের দেশের বনভূমির পরিমাণ শতকরা ১৭ ভাগ। এর ফলে প্রতিবছরই খরা-অনাবৃষ্টি অথবা অতিবৃষ্টি দেখা দেয় এবং বন্যার সৃষ্টি হয়।
ঘ) নদী ভরাট: আমাদের নদীগুলোর অধিকাংশই পলি জমে জমে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে স্বাভাবিকের তুলনায় অল্প বৃষ্টিপাত বা পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেলেই বন্যা দেখা দেয়।
বাংলাদেশের বন্যা সমস্যার সমাধান বা প্রতিকার: বন্যা বাংলাদেশের জাতীয় উন্নতির পথে একটি বড় বাধা। এর সমাধান বা প্রতিকার অত্যন্ত জরুরি। নিচে বন্যা সমস্যার সমাধান বা তার প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
ক) বাঁধ নির্মাণ: বন্যা সমস্যা সমাধানের জন্য পরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
খ) নদী খনন: নদীর নাব্যতা ঠিক রাখার জন্য নদী ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নদী গভীর করে খনন করে দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে দিলে আর বন্যা হবে না।
গ) পোল্ডার নির্মাণ: দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে স্থাপিত ৭% স্বয়ক্রিয় জোয়ার বিরোধী গেটের মতো করে কাঠামো দ্বারা সাগরের জোয়ার অনুপ্রবেশ রোধ এবং জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য পোল্ডার নির্মাণ করে পানি পাম্প করার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
ঘ) সমন্বিত ব্যবস্থা: আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন প্রভৃতি দেশকে নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
ঙ) সতর্কীকরণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা: বন্যা সমস্যার সমাধান ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানোর জন্য বন্যার আগাম সতর্কীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং বন্যার সময় ও পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসনের সুব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উপসংহার
বন্যা প্রতিবছরই আমাদের প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি করে; জাতীয় উন্নতিতে প্রবল বাধার সৃষ্টি করে। তবে এ ক্ষতির পাশাপাশি বন্যা উপকারও করে থাকে। বন্যার ফলে আমাদের জমিতে প্রচুর পলি জমে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ভালো ফসল ফলাতে সহায়তা করে।
তাছাড়া বন্যার সময় আমাদের যাতায়াত বা যোগাযোগব্যবস্থা সহজতর হয়। কিন্তু তারপরও বন্যা আমাদের কাম্য নয়। আমাদের জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন স্থিতিশীলতা। আর সেজন্য অতীব প্রয়োজন বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা। সেটি করতে পারলেই আমরা সবক্ষেত্রে সাফল্যের শীর্ষে আরোহণ করতে পারব।
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন রচনা:
- মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা
- আমাদের বিদ্যালয় রচনা
- বর্ষাকাল রচনা
- আমাদের গ্রাম রচনা
- আমাদের জাতীয় পতাকা রচনা
সবশেষে
অনেকেই বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনা pdf চেয়েছেন। বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনা class 8, আদর্শ গ্রাম রচনা ক্লাস ২, আদর্শ গ্রাম অনুচ্ছেদ রচনা, বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনা ৩য় শ্রেণি, বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনা ক্লাস 6, বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনা class 10 সহ সকল চাহিদার পূরন হবে এই পোস্ট। মাই ক্লাসরুম ফেসবুক পেজ এখানে
যেভাবে খুজে পাবেন: বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনা সহজ ভাষায় ২০০ শব্দ, ৩০০ শব্দ, ৪০০ শব্দ, ৪৫০ শব্দে লেখা হয়েছে। বিভিন্ন ক্লাসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে রচনাটি লেখা হয়েছে। বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনাটি ৬ষ্ঠ ৭ম ও ৮ম শ্রেণির জন্য ১৫ পয়েন্ট ২০ পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। ৯ম ১০ম ১১শ ও ১২শ ক্লাসের জন্য ২৫ পয়েন্ট ও ৩০ পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। অনেকে বাংলাদেশের বন্যা ও প্রতিকার রচনা pdf ডাউনলোড করতে চান। আপনি মাই ক্লাসরুম থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন না। ধন্যবাদ।