বাংলাদেশের শরৎকাল রচনা। Class 6 7 8 9 SSC & HSC
বাংলাদেশের শরৎকাল রচনাটি ৩য় শ্রেনি, ৪র্থ শ্রেণি, ৫ম শ্রেণি, ষষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনি উপযোগী লেখা হয়েছে। ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক সময় বাংলাদেশের শরৎকাল রচনা না দিয়ে বলা হয় বাংলাদেশের শরৎকাল সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখুন। আবার চাকরি কিংবা ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে আসে বাংলাদেশের শরৎকাল সম্পর্কে অনুচ্ছেদ লিখুন। বাংলা ২য়পত্র বিষয় থেকে বাংলাদেশের শরৎকাল রচনাটি সহজ ভাষায় লিখা হয়েছে । ৩য় থেকে ৭ম শ্রেনি উপযোগী করে লেখা হয়েছে বাংলাদেশের শরৎকাল রচনাটি ।
বাংলাদেশের শরৎকাল রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। যেন, একবার পড়লেই মুখস্থ হয়ে যায়। বাংলাদেশের শরৎকাল এর জায়গায় যদি আসে আদর্শ বিদ্যালয় তাহলেও রচনাটি লিখতে পারেন। Ruposhi Bangladesh essay is written for class- 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10
বাংলাদেশের শরৎকাল রচনা
ভূমিকা: ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ। ছয়টি ঋতুই পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের প্রকৃতিকে আপন সৌন্দর্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। শরৎকাল ষড়ঋতুর তৃতীয় পরিক্রমা। ভাদ্র ও আশ্বিন দুই মাস শরৎকাল। বর্ষার অভিশ্রান্ত বর্ষণের পর এ ঋতু স্বচ্ছ নীলাকাশ ও কাশফুলের সাদা হাসি নিয়ে বাংলার প্রকৃতিকে করে তোলে উজ্জ্বল মোহনীয়।
শরতের আগমন
বাংলায় বর্ষা ঋতু শেষে আসে শরৎকাল। বর্ষায় প্রকৃতি ধুয়ে-মুছে শরতে চকচক করে উঠে। এ সময় প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যের মতো মানবমনেরও পরিবর্তন সাধিত হয়। অন্যান্য ঋতুর মতো শরতের আগমন বা প্রস্থান তেমন ঘটা করে হয় না। তবে অন্য ঋতুগুলোর মাঝে সংযোগস্থল হিসেবে এ ঋতুর ভূমিকা অশেষ।
শরতের সময়কাল
বাংলা ঋতুচরের তৃতীয় ঋতু শরৎকাল। অন্যান্য দুই মাস স্থায়ী হয়। ভাদ্র-আশ্বিন মাস মিলে শরৎকাল। এ সময় আকাশে থাকে সাদা মেঘের ভেলা। মানুষ শারদীয়া প্রকৃতিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলে, “আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালি মালা, নবীন ধানের মঞ্জবী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা।”
শরতের বৈশিষ্ট্য
প্রত্যেক ঋতুর মতো শরতেরও পৃথক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ কুয়াশা আর বিন্দু শিশিরের প্রভাব লক্ষণীয়। এ সময় সকালের স্নিগ্ধ আলোয় প্রকৃতি এক অনুপম সৌন্দর্য ধারণ করে। তাছাড়া নদীর তীরের সাদা কাশফুল বাতাসের মৃদু দোলায় আন্দোলিত হয়। আবার কখনোবা কালো মেঘমুক্ত নীলাকাশের বুকে ভেসে বেড়ায় সাদা সাদা মেঘ, যা প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে।
শরতের সৌন্দর্য
বর্ষার পর শরতের পরিচ্ছন্ন সুন্দর রূপ সহজেই সবার মন আকর্ষণ করে। ঘরে বাইরে আলোছায়ার লুকোচুরি খেলা, মেঘমুক্ত স্বচ্ছ নীল আকাশ আর ঠাণ্ডা হাওয়ার পরণ আমাদের প্রাণ-মন অনাবিল আনন্দে ভরে তোলে। এ সময় মাঠ ভরা শ্যামল শসা মন উত্তলা করে। নদীর দুই তীরে সাদা কাশফুল বাতাসে দোল খায়। শরতের সূর্যাস্ত প্রকৃতিতে এক মোহনীয় দৃশ্য ফুটিয়ে তোলে। রাতে রূপালি চাঁদের আলোতে ভরে যায় দিগদিগন্ত। মাঠে মাঠে সবুজ ধানের সমারোহ। প্রকৃতি যেন অপূর্ব রূপে সাজে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় শরতের মোহনীয় রূপ ফুটে ওঠে, “শরৎ তোমার শিশির কুড়লে বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে আজ প্রভাতের হৃদয় চলি।”
শরতের আবহাওয়া
অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শরতের আবহাওয়া কিছুটা স্বতন্ত্র। বর্ষার পরের ঋতু বলে এ সময় মেঘের আনাগোনা কম থাকে। তবে নীলাকাশের মাঝে সাদা সাদা মেঘের খেলা আমাদেরকে বিমোহিত করে। উজ্জ্বল রোদের মাঝে সবকিছু বেশ নতুনত্ব ধারণ করে। দিনের সূর্যের আলোর মতো রাতের চাঁদও বেশ জ্যোতি ছড়ায়।
শরতের নানা ফুল-ফল
শরৎকালের নানারকম গাছে নানা রকম ফুল ফোটে, ফল ধরে। এ সময় গাছে গাছে শিউলি, কেয়া আর কাশফুলে আঙিনা ভরে যায়। দিঘির বুকে ফোটে অসংখ্য শাপলা ও পদ্ম। এ ছাড়া গাছে ফল ধরে। ফলের মধ্যে রয়েছে তাল, জামরুনসহ নানা সুম্বাদু ফল।
শারদীয় উৎসব আনন্দ
শরৎকালে বাংলার গ্রামগুলো নানা উৎসবে আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে। এ সময় হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। তাই হিন্দুদের ঘরে ঘরে নির্মল আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শরৎকালেই পূর্ণিমার জ্যোৎস্না প্লাবিত রাতে হিন্দুদের লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। অমাবস্যার তমসাচ্ছন্ন রাতে অনুষ্ঠিত হয় হিন্দুদের দীপান্বিতা শ্যামাপূজা। এ সময়েই হিন্দুদের ভাই ফোটার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বোন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে তার দীর্ঘজীবন কামনা করে।
শরতের সকাল
শরতের সকাল খুব স্নিগ্ধ কোমল এবং শান্ত রূপ নিয়ে, আত্মপ্রকাশ করে। যেন হেমন্তের আগমনের অপেক্ষায় অধীর হয়ে থাকে। পথে ঘাটে বর্ষার তেমন কোনো চিহ্ন থাকে না। ধীরে ধীরে প্রকৃতি শান্ত হয়ে ওঠে।
বাংলার শরৎ
বাংলার শরৎকাল যেন চিরন্তন ধারাবাহিকতার এক অপরূপ বহিঃপ্রকাশ। প্রতিবছর সে আবির্ভূত হয় তার আপন মহিমায়। আপন সাজে এবং আপন গৌরবে। প্রকৃতির কোলে সে এক অমূল্য উপহার। তারপর আবার ফিরে যায়। বাংলার শরৎ প্রকৃতিতে এক অপরূপ সৌন্দর্যের পরশ মেখে দেয়। শরতের সকাল-সন্ধ্যা সত্যিই দারুণ উপভোগ্য। রৌদ্রকরোজ্জ্বল সকালের সামান্য শিশির ভেজা প্রকৃতিকে আরো মোহনীয় এবং অপরূপ করে তোলে। জীবনে নিয়ে আসে নির্মল আনন্দ।
মানবমনে শরতের প্রভাব
শরতের আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা ভেসে চলে। দেশে মনে হয় কোনো সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে বাংলার রূপকে অবিরাম সৌন্দর্যে ভরিয়ে দেবার টানে মেঘগুলো ভেসে এসেছে বাংলার আকাশে। শরতের শুভ্র মেঘ মানুষের সকল মলিনতাকে দূরে সরিয়ে মনে এনে দেয় পরম প্রশান্তি।
শরৎ প্রকৃতির রূপ
প্রগলভ বর্ষার প্রভাব কাটিয়ে শরৎ প্রকৃতিকে সাজায় এক শান্ত সমাহিত রূপে। তখন মাঠে মাঠে গাছে সবুজের বিপুল সমাবেশ। ফসলের ক্ষেত্রের শ্যামলিমা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। আকাশে হালকা মেঘের ভেলা মানুষের মনে আনন্দের শিহরণ আনে। শরৎ প্রভাবে ফুটে উঠে প্রকৃতির মধুর মূর্তি। প্রকৃতির শান্ত-স্নিগ্ধ রূপটি সৌন্দর্যের আকর হয়ে ওঠে। বাংলার শরৎকালীন সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে কবিকূল গেয়ে উঠেছেন– “শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি। শরৎ, তোমার শিশির ধোয়া কুণ্ডলে বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে আজ প্রভাতে হৃদয় উঠে চঞ্চলি।”
শরতের সকালে শিশিরসিক্ত দূর্বাঘাসে রোদের আলো যেন হীরা মাণিকের প্রভাব সৃষ্টি করে। শারোদোৎসব শুরু হয় এ ঋতুতে এ দেশের মানুষের মনে আনন্দের হিল্লোল ওঠে। কবিগুরু এ জন্য বলেছেন, “কী অপরূপ রূপে তোমার হেরিণু শারদ প্রভাতে হে মাতঃবঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ, ঝলিছে অমল শোভাতে।”
বাংলাদেশে শরৎ ঋতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব
বাংলাদেশে শরৎ ঋতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এ সময় মাঠে মাঠে ফসলে ভরপুর থাকে। ধানের শীষে থোড় আসে। কৃষকের মনে আশার সঞ্চার ঘটে। মাঠে মাঠে ধানের থোড় রক্ষায় সচেতন হয়। সারা বছর কষ্ট করে শরতের পরেই আসে ফসল কাটার মৌসুম। যা কৃষকের মুখে হাসি ফোটায়। কবির ভাষায়- সাদা সাদা বক-কনেরা রচে সেথায় মালা, শরৎকালের শিশির সেথা জ্বালায় মানিক আলা। তারি মায়ায় থোকা থোকা দোলে ধানের ছড়া; মার আঁচলের পরশ যেন সকল অভাব-হরা।
শরতের উপকারিতা
শরৎ ঋতুর বেশ কিছু উপকারী দিক রয়েছে। বর্ষার জীবনজ্বালার অবসান ঘটে নবজীবনে বার্তা বহন করে আনে। মানবমনের নতুন কর্মধারার সূচনা ও প্রাকৃতিক রসদ নিয়ে আসে এ ঋতু।
উপসংহার:
শরৎকাল বাংলাদেশের প্রকৃতি ও সমাজে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এটি শুধু একটি ঋতু নয়, বরং এটি আনন্দ, উৎসব, এবং নতুন সম্ভাবনার প্রতীক। এই সময় মানুষের মনে একটি নতুন উদ্যম ও উৎসাহ জাগিয়ে তোলে। শারদীয়া উৎসব, কাশফুলের সৌন্দর্য, এবং প্রকৃতির পরিবর্তন আমাদের জীবনে বিশেষ মাত্রা যোগ করে। তাই, শরৎকাল আমাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দময় সময়, যা আমাদের সৃষ্টির সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে প্রবাহিত হয় এবং আমাদেরকে মানবিকতার পথ দেখায়।
সবশেষে
অনেকেই বাংলাদেশের শরৎকাল রচনা pdf চেয়েছেন। বাংলাদেশের শরৎকাল রচনা class 8, বাংলাদেশের শরৎকাল রচনা ক্লাস ২, বাংলাদেশের শরৎকাল অনুচ্ছেদ রচনা, বাংলাদেশের শরৎকাল রচনা ৩য় শ্রেণি, বাংলাদেশের শরৎকাল রচনা ক্লাস 6, বাংলাদেশের শরৎকাল রচনা class 10 সহ সকল চাহিদার পূরন হবে এই পোস্ট। মাই ক্লাসরুম ফেসবুক পেজ এখানে
যেভাবে খুজে পাবেন: বাংলাদেশের শরৎকাল রচনা সহজ ভাষায় ২০০ শব্দ, ৩০০ শব্দ, ৪০০ শব্দ, ৪৫০ শব্দে লেখা হয়েছে। বিভিন্ন ক্লাসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে রচনাটি লেখা হয়েছে। বাংলাদেশের শরৎকাল রচনাটি ৬ষ্ঠ ৭ম ও ৮ম শ্রেণির জন্য ১৫ পয়েন্ট ২০ পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। ৯ম ১০ম ১১শ ও ১২শ ক্লাসের জন্য ২৫ পয়েন্ট ও ৩০ পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। অনেকে বাংলাদেশের শরৎকাল রচনা pdf ডাউনলোড করতে চান। আপনি মাই ক্লাসরুম থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন না।
১১ থেকে ২০ গ্রেডের অনেক চাকরি পরীক্ষা লিখিত হয়। লিখিত চাকরী পরীক্ষাগুলোতে রচনা লিখতে হয়। লিখিত চাকরি পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য উপযোগী করে এই রচনাগুলো লেখা হয়েছে। চাকরী পরীক্ষা যেমন- ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা, ইউনিয়ন সমাজকর্মীর জন্য বাংলা রচনা, খাদ্য অধিদপ্তর এর জন্য বাংলা রচনা প্রস্তুতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়োগ পরীক্ষা প্রস্তুতি, বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি, ব্যাংক লিখিত প্রস্তুতি সহ সকল সরকারি ও বেসরকারি চাকরি পরীক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।