বিভক্তি কাকে বলে? বিভক্তি চার্ট। বিভক্তি নির্ণয় উদাহরন

বিভক্তি কাকে বলে?
বাক্যের মধ্যে অন্য শব্দের সাথে সম্পর্ক বোঝাতে বিশেষ্য ও সর্বনামের সঙ্গে অর্থহীন কিছু লগ্ন যুক্ত হয়, সেগুলোকে বিভক্তি বলে। যেমন: -এ, -তে, য়, -য়ে, -কে, রে, র, -এর, -য়ের ইত্যাদি।
লোকে কি না বলে। এই বাক্যে ‘লোক’ শব্দের সঙ্গে জুড়ে আছে ‘এ’ বিভক্তি।
সে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গরু চরাতে গেছে। এই বাক্যে ‘ছেলে’ শব্দের সঙ্গে জুড়ে আছে ‘কে’ বিভক্তি।
বাড়ির পুকুরের পাড়ে বড়ো ভাইয়ের কলাবাগান। এই বাক্যে ‘বাড়ি’, ‘পুকুর’ এবং ‘ভাই’ শব্দের সঙ্গে জুড়ে আছে ‘-র’, ‘-এর এবং ‘-য়ের’ বিভক্তি।
বিভক্তির প্রকারভেদ
বিভক্তিগুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করে দেখানো যায়:
ক) -এ, -তে, য়, -য়ে বিভক্তি
সাধারণত ক্রিয়ার স্থান, কাল, ভাব বোঝাতে -এ, -তে, -য়, -য়ে ইত্যাদি বিভক্তির ব্যবহার হয়। কখনো কখনো বাক্যের কর্তার সঙ্গেও এসব বিভক্তি বসে।
যেসব শব্দের শেষে কারচিহ্ন নেই, সেসব শব্দের সঙ্গে -এ বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন- সকালে, দিনাজপুরে, ই-মেইলে, কম্পিউটারে, ছাগলে, তিলে ইত্যাদি।
শব্দের শেষে ই-কার ও উ-কার থাকলে -তে বিভক্তি হয়। যেমন- হাতিতে, রাত্রিতে, মধুতে, রামুতে ইত্যাদি।
আ-কারান্ত শব্দের শেষে -য় বিভক্তি হয়। যেমন- ঘোড়ায়, সন্ধ্যায়, ঢাকায় ইত্যাদি।
শব্দের শেষে দ্বিস্বর থাকলে -য়ে বিভক্তি হয়। যেমন- ছইয়ে, ভাইয়ে, বউয়ে।
ই-কারান্ত শব্দের শেষে -য়ে বিভক্তি দেখা যায়। যেমন- ঝিয়ে, ঘিয়ে।
খ) -কে, রে বিভক্তি
বাক্যে গৌণকর্মের সঙ্গে সাধারণত -কে এবং -রে বিভক্তি বসে। ক্রিয়াকে ‘কাকে’ প্রশ্ন করলে যে শব্দ পাওয়া যায়, তার সঙ্গে এই বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন- শিশুকে, দরিদ্রকে, আমাকে, আমারে ইত্যাদি।
গ) -র, -এর, -য়ের বিভক্তি
বাক্যের মধ্যে পরবর্তী শব্দের সঙ্গে সম্বন্ধ বোঝাতে পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে -র, -এর এবং -য়ের বিভক্তি যুক্ত হয়। সাধারণত আ-কারান্ত, ই/ঈ-কারান্ত ও উ/ঊ-কারান্ত শব্দের শেষে -র বিভক্তি বসে। যেমন- রাজা’র, প্রজা’র, হাতি’র, বুদ্ধিজীবী’র, তনু’র, বধূ’র।
যেসব শব্দের শেষে কারচিহ্ন নেই, সেসব শব্দের শেষে -এর বিভক্তি হয়। যেমন- বল’র, শব্দ’র, নজরুল’র, সাতাশ’র ইত্যাদি।
শব্দের শেষে দ্বিস্বর থাকলে -য়ের বিভক্তি হয়। যেমন- ভাইয়ের, বইয়ের, লাউয়ের, মৌয়ের ইত্যাদি।
কারক বিভক্তি নির্ণয় উদাহরণ
বাক্যের মধ্যে শব্দগুলোকে সম্পর্কযুক্ত করার জন্যে শব্দের সঙ্গে যে সকল বর্ণ যুক্ত হয়, সেগুলোকে বিভক্তি বলে। যেমন : শিক্ষক ছাত্রকে ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন। বাক্যটিতে শিক্ষক (শিক্ষক + ০ বিভক্তি), ছাত্রকে (ছাত্র + কে বিভক্তি), ব্যাকরণ (ব্যাকরণ + ০ বিভক্তি) ইত্যাদি পদে বিভিন্ন বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। বিভক্তিগুলো ক্রিয়াপদের সাথে নামপদের সম্পর্ক সৃষ্টি করে। বিভক্তি চিহ্ন স্পষ্ট না হলে সেখানে শূন্য বিভক্তি আছে বলে মনে করা হয়।
→ বাংলা শব্দ-বিভক্তি
বাংলা ভাষায় বিভক্তির সংখ্যা খুবই সীমিত। শূন্য (০) বিভক্তি বা অ-বিভক্তি, এ (য়), তে, এ, কে, রে, র, এরা– এ কয়টিই খাঁটি বাংলা শব্দ বিভক্তি। তাছাড়া বিভক্তি স্থানীয় কয়েকটি অব্যয় শব্দও কারক সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য বাংলায় প্রচলিত আছে। যেমন : দ্বারা, দিয়ে, হতে, থেকে ইত্যাদি। ‘র’ সম্বন্ধ পদের বিভক্তি হলেও তা কারকবোধক।
→ বাংলা শব্দ-বিভক্তির প্রকারভেদ
শব্দ বা প্রকৃতি অনুসারে বিভক্তি দুরকর্মের শব্দ বিভক্তি ও ধাতু-বিভক্তি। নাম-প্রকৃতির সঙ্গে যে অতিরিক্ত শব্দাংশ যোগ করা হয় তাকে শব্দ-বিভক্তি, আর ধাতু বা ক্রিয়া প্রকৃতির সঙ্গে যে অতিরিক্ত শব্দাংশ যোগ করা হয়, তাকে ধাতু-বিভক্তি বা ক্রিয়া-বিভক্তি বলে। বাংলা শব্দ-বিভক্তি সাত প্রকার । যেমন : প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমী।
একবচন ও বহুবচন ভেদে বিভক্তিগুলোর আকৃতিগত পার্থক্য দেখা যায়।
বিভক্তি চার্ট
বিভক্তি | একবচন | বহুবচন |
---|---|---|
প্রথমা | ০, অ, এ, (য়), তে | রা, এরা, গুলো, গণ |
দ্বিতীয়া | কে, রে, এরে | দিগে, দিগকে, দের |
তৃতীয়া | দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক | দের, দিয়া, দিগকে দ্বারা, দিগ কর্তৃক |
চতুর্থী | দ্বিতীয়ার মতো, জন্য, নিমিত্ত | দ্বিতীয়ার মতো |
পঞ্চমী | হইতে, থেকে, চেয়ে, হতে | দের হইতে, দিগের চেয়ে |
ষষ্ঠী | র, এর | দিগের, দের, গুলির |
সপ্তমী | এ, (য়), তে, এতে | দিগে, দিগেতে, গুলিতে |
FAQs on বিভক্তি
প্রশ্ন: কোন কারকে কে বিভক্তি যুক্ত হয়?
উত্তর: কে বিভক্তি সাধারণত সম্প্রদান কারকে যুক্ত হয়। যেমন- রামকে, সীতাকে।
প্রশ্ন: সময়বাচক অর্থে সম্বন্ধ পদে কোন বিভক্তি যুক্ত হয়?
উত্তর: সময়বাচক অর্থে সম্বন্ধ পদে -কার > -কের বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন:
- আজি + -কার = আজিকার > আজকের
- পূর্বে + -কার = পূর্বেকার
- কালি + -কার = কালিকার > কালকার > কালকের
তবে, “কাল” শব্দটির উত্তরে শুধু -এর বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন: - কাল + -এর = কালের
প্রশ্ন: বিভক্তি কয় প্রকার? কী কী?
উত্তর: বিভক্তি সাধারণত সপ্ত প্রকার, যেমন:
১. প্রথমা
২. দ্বিতীয়া
৩. তৃতীয়া
৪. চতুর্থী
৫. পঞ্চমী
৬. ষষ্ঠী
৭. সপ্তমী
প্রশ্ন: কারক কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর: কারক ছয় প্রকার:
১. কর্তৃকারক
২. কর্মকারক
৩. করণ কারক
৪. সম্প্রদান কারক
৫. অধিকরণ কারক
৬. সম্বন্ধ কারক
প্রশ্ন: বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে কী বলে?
উত্তর: বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে “ক্রিয়ার কর্তা” বা “কর্তৃকারক” বলে।
প্রশ্ন: বিভক্তি সংক্রান্ত কোন অধ্যায়গুলো গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর:
১. সকল কারকে প্রথমা বা শুন্য বিভক্তির ব্যবহার
২. সকল কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তির ব্যবহার
৩. সকল কারকে তৃতীয়া বিভক্তির ব্যবহার
৪. সকল কারকে চতুর্থী বিভক্তির ব্যবহার
৫. সকল কারকে পঞ্চমী বিভক্তির ব্যবহার
৬. সকল কারকে ষষ্ঠী বিভক্তির ব্যবহার
৭. সকল কারকে সপ্তমী বা এ বিভক্তির ব্যবহার