ব্যবসায়

ব্যবসায় শুরু করবেন? আগেই দেখে নিন ১৫টি বিষয়

আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হতে চান, তাহলে নতুন ব্যবসা শুরু করার আগে কিছু বিষয় মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা অর্জন। সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মোট আয় থেকে সকল ব্যয় বাদ দেয়ার পর যে অংশ অবশিষ্ট থাকে সেটি হচ্ছে ব্যবসায়ের লভ্যাংশ বা মুনাফা। তাই নতুন ব্যবসা শুরু করার আগে লক্ষণীয় ১৫ টি বিষয় অবশ্যই জেনে রাখা উচিত। এতে করে আপনার ব্যবসায় পরিচালনা করতে সহজ হবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।

Table of Contents

নতুন ব্যবসা শুরু করার আগে লক্ষণীয় ১৫ টি বিষয়

১. প্রাথমিক মূলধন:

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার জন্য অবশ্যই অর্থের প্রয়োজন। আপনি যখন ব্যবসায় পরিচালনার করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন তখন অবশ্যই সেই ব্যবসার জন্য পুঁজির প্রয়োজন হয়। ব্যবসায়িক ভাষায় এই পুঁজিকে মূলধন বলা হয় এবং ব্যবসায়ের প্রথম মূলধনকে প্রাথমিক মূলধন হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাই নতুন ব্যবসায়ী হিসেবে অবশ্যই প্রাথমিক মূলধন সংগ্রহ করতে হয় এবং সেই মূলধন সঠিকভাবে সঠিক স্থানে ব্যয় করতে হয়।

২. সুষ্ঠু ব্যবসা পরিকল্পনা প্রণয়ন:

একটি সুষ্ঠু ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন হয়। কারণ আপনি যদি পূর্বে থেকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার সকল প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন না করেন তাহলে ব্যবসা পরিচালনার করা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তবে পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি যে পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করবেন তার বিকল্প একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে পূর্বে থেকে রেখে দিতে হবে। যে কোন কারণবশত যদি আপনার প্রথম পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় তাহলে দ্বিতীয় পরিকল্পনা অনুসারে ব্যবসায়ের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। নতুবা আপনি বড় ঝুঁকি সম্মুখীন হতে পারেন। তাই অবশ্যই সুষ্ঠু ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা আবশ্যক।

৩. সঠিক পণ্য নির্বাচন এবং পণ্যের চাহিদা নির্ধারণ:

নতুন ব্যবসায়ী হিসেবে যখন আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিবেন আপনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে চান, তখন অবশ্যই আপনি যে পণ্য নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে চান সে পণ্য নির্বাচন করতে হবে। বাজারে সেই পণ্যের চাহিদা কিরূপ রয়েছে সে সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে সঠিক পণ্য বাছাই করতে হবে। আর সঠিক পণ্য বাছাইয়ের জন্য আপনাকে অবশ্যই বাজার বিশ্লেষণ করতে হবে। বাজার বিশ্লেষণ করার ফলে আপনি জানতে পারবেন ভোক্তাদের মধ্যে কোন পণ্যের চাহিদা রয়েছে এবং কোন পণ্যটি ভোক্তাদের প্রয়োজন। কারণ আপনি যখন ব্যবসায়ী হিসেবে একটি পণ্য উৎপাদন করবেন বা বিক্রয় করবেন সেই পণ্যটি ভোক্তাদের কাছে কতটা প্রয়োজন এবং চাহিদা রয়েছে তা অবশ্যই পূর্বে থেকে জেনে নিতে হবে। আর এর ফলে আপনার সঠিক পণ্য নির্বাচন করতে সহজ হবে।

৪. ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন:

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ব্যবসায়ীর স্থান নির্বাচন। আপনি যে পণ্যটি নিয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করতে চাচ্ছেন সেই পণ্যটি কোন স্থানে বেশি বিক্রয় হবে অর্থাৎ কোন স্থানে সেই পণ্যটির চাহিদা রয়েছে সেই স্থানে ব্যবসায়ের স্থাপন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে কাপড়ের ব্যবসায়ের দোকান দেন তাহলে সেই ব্যবসায়ীটি সঠিক স্থান নির্বাচন হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে খাবারের দোকান অথবা লাইব্রেরী দোকান প্রতিষ্ঠা করলে সেই ব্যবসায় মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে এবং সেই ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন সঠিক হবে। সুতরাং এভাবেই ব্যবসায়ের সঠিক স্থান নির্বাচন করতে হয়।

৫. অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা:

একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনাকে যে উচ্চশিক্ষিত হতে হবে এমন বিষয় নয়। আপনার মধ্যে সাধারণ শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা থাকলে আপনি সহজেই যে কোন ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ী পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন। তবে বৃহত্তর ব্যবসায়ের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সঠিক শিক্ষা অর্জন করতে হবে এবং অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

তবে আপনার মধ্যে যদি কোন শিক্ষা না থাকে তাহলে আপনি যে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারবেন না এই বিষয়টি যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ একজন মুদি দোকানী কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাই ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই আপনার মধ্যে কিছুটা শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

৬. প্রতিযোগিতা মূল্য নির্ধারণ:

বাজারে বিভিন্ন ধরণের পণ্য বিক্রি হয় এবং বাজারে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়ী রয়েছে। তাই আপনি যখন ব্যবসায় পরিচালনা করবেন তখন আপনাকে অবশ্যই প্রতিযোগিতা মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। কারণ আপনি যদি একটি পণ্য উচ্চ দামে বিক্রি করেন তাহলে ভোক্তারা সেই পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহী হবে না। আবার আপনি যদি একটি পণ্য খুব কম দামে বিক্রি করেন তাহলে আপনার লভ্যাংশ কম হবে। তাই আপনাকে অবশ্যই প্রতিযোগিতা মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিযোগিতা মূল্য নির্ধারণ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই বাজার বিশ্লেষণ করতে হবে এবং বাজারে আপনার প্রতিযোগীদের পণ্যের দাম কত তা জানতে হবে।

৭. বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা:

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কথা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অবশ্যই বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালাতে হবে। আপনি যদি বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা না চালান তাহলে ভোক্তারা আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কথা জানতে পারবে না এবং আপনার ব্যবসায়ের লভ্যাংশ কম হবে। বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই ব্যয় করতে হবে। তবে আপনি যদি সঠিকভাবে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালান তাহলে আপনার ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালানোর জন্য আপনি বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন। যেমন: টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা, ইন্টারনেট ইত্যাদি।

৮. করদাতব্য:

একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনাকে অবশ্যই কর দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের উপর আয়কর, মূল্য সংযোজিত কর (মূসক), স্থানীয় কর ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের কর ধার্য করা হয়। তাই ব্যবসায় শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই সে সম্পর্কে জেনে নিতে হবে এবং কর কর্তৃপক্ষের সাথে নিবন্ধন করতে হবে।

৯. নিয়ম-কানুন মেনে চলা:

একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনাকে অবশ্যই ব্যবসায়িক নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। ব্যবসায়িক নিয়ম-কানুন মেনে না চললে আপনাকে আইনি শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে। তাই ব্যবসায় শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই ব্যবসায়িক নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।

১০. ঝুঁকি মোকাবেলা:

ব্যবসায় ঝুঁকি থাকেই। তাই ব্যবসায় শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য আপনাকে অবশ্যই বীমা করতে হবে এবং ঝুঁকি মোকাবেলার পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

১১. গ্রাহক পরিষেবা:

গ্রাহক হচ্ছে ব্যবসায়ের প্রাণ। তাই ব্যবসায়ী হিসেবে আপনাকে অবশ্যই গ্রাহকদের ভালো পরিষেবা প্রদান করতে হবে। গ্রাহকদের ভালো পরিষেবা প্রদান করলে গ্রাহকরা আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থাশীল হবে এবং আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বারবার কেনাকাটা করবে।

দেখে নিন: সফল উদ্যোক্তার ১৪টি গুন

১২. কর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক:

কর্মীরা হচ্ছে ব্যবসায়ের সম্পদ। তাই ব্যবসায়ী হিসেবে আপনাকে অবশ্যই কর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। কর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখলে কর্মীরা আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য মনোযোগ দিয়ে কাজ করবে এবং আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

১৩. প্রযুক্তি ব্যবহার:

বর্তমান যুগে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা অনেক সহজ হয়ে পড়ে এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

১৪. সময়সাপেক্ষ:

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাই ব্যবসায় শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

১৫. আন্তরিকতা:

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই আন্তরিকতা থাকতে হবে। আন্তরিকতা থাকলে আপনি ভোক্তাদের প্রতি ভালো ব্যবহার করবেন এবং ভোক্তাদের ভালো পণ্য সরবরাহ করবেন। আন্তরিকতা থাকলে আপনি আপনার কর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হবেন এবং আপনার কর্মীরা আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য মনোযোগ দিয়ে কাজ করবে।

উপসংহার:

উপরে উল্লেখিত ১৫ টি বিষয় মনে রেখে আপনি যদি ব্যবসা শুরু করেন তাহলে অবশ্যই আপনি সফল হবেন। ব্যবসায় শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে এবং বাজার বিশ্লেষণ করতে হবে। ব্যবসায় শুরু করার পর আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

শুভকামনা!

ব্যবসায় শুরু সংক্রান্ত FAQ

প্রশ্ন: নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ কী?

উত্তর: প্রথম পদক্ষেপ হল একটি অনন্য ধারণা তৈরি করা যা বাজারে চাহিদা পূরণ করে। আপনার ধারণাটি কি সমাধান করে এমন একটি সমস্যা আছে? এটি কি বিদ্যমান পণ্য বা পরিষেবার চেয়ে উন্নত কিছু অফার করে? আপনার লক্ষ্য বাজার কে এবং তারা আপনার অফারের জন্য কী কী মূল্য দেবে?

প্রশ্ন: বাজার সম্পর্কে আমার গবেষণা কীভাবে করব?

উত্তর: বাজার সম্পর্কে গবেষণা করার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আপনি অনলাইন গবেষণা করতে পারেন, শিল্প প্রতিবেদনগুলি পড়তে পারেন, প্রতিযোগীদের বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং সম্ভাব্য গ্রাহকদের সাথে সাক্ষাৎকার নিতে পারেন।

প্রশ্ন: ব্যবসায়িক পরিকল্পনা কী এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা হল একটি লিখিত নথি যা আপনার ব্যবসার লক্ষ্য, কৌশল এবং আর্থিক পূর্বাভাস রূপরেখা দেয়। এটি আপনাকে আপনার ব্যবসা শুরু এবং পরিচালনা করার জন্য একটি রোডম্যাপ সরবরাহ করে এবং এটি সম্ভাব্য ঋণদাতা এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে আপনার ব্যবসা উপস্থাপন করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রশ্ন: নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য আমি কীভাবে অর্থ সংগ্রহ করতে পারি?

উত্তর: নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য অর্থায়নের অনেকগুলি উপায় রয়েছে। আপনি ব্যক্তিগত সঞ্চয়, বন্ধু এবং পরিবার থেকে ঋণ, বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ বা ঋণ ব্যবহার করতে পারেন।

M@mun

Hasan Al Mamun is a dedicated teacher, blogger, and YouTuber who has achieved great success in his field. He was born to parents Shahjahan Topodar and Masrura Begum and grew up with a love for learning and exploration. After completing his Bachelor's degree, Hasan pursued a Master's degree in Accounting and excelled in his studies. He then began his career as a teacher, sharing his knowledge and passion for accounting with his students. In addition to teaching, Hasan is also an avid blogger and YouTuber, creating content that educates and inspires his viewers. His YouTube channel, "My Classroom," has grown to an impressive 240,000 subscribers, earning him a silver play button from YouTube. Hasan's interests include book reading, travelling, gardening, and writing, and he often incorporates these passions into his work. He strives to create an honest and supportive community in all of his endeavors, encouraging his followers to learn and grow alongside him. Overall, Hasan Al Mamun is a talented and dedicated individual who has made a significant impact in the fields of education, blogging, and content creation.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button