রচনা: বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান।
বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনাটি ৩য় শ্রেনি, ৪র্থ শ্রেণি, ৫ম শ্রেণি, ষষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনি উপযোগী লেখা হয়েছে। ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক সময় বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনা না দিয়ে বলা হয় বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখুন। আবার চাকরি কিংবা ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে আসে বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান সম্পর্কে অনুচ্ছেদ লিখুন। বাংলা ২য়পত্র বিষয় থেকে বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনাটি সহজ ভাষায় লিখা হয়েছে । ৩য় থেকে ৭ম শ্রেনি উপযোগী করে লেখা হয়েছে বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনাটি ।
বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। যেন, একবার পড়লেই মুখস্থ হয়ে যায়। বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান এর জায়গায় যদি আসে আদর্শ বিদ্যালয় তাহলেও রচনাটি লিখতে পারেন। Bangladesh Economics essay is written for class- 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10
বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান
ভূমিকা:
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। এটি তৃণ বা ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ, যা বাংলাদেশের কৃষির অন্যতম প্রাণভোমরা। কৃষিপ্রধান এই দেশটির প্রায় সব জেলাতেই ধান উৎপন্ন হয় এবং তা দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধান থেকে উৎপন্ন চাল আমাদের প্রধান খাদ্য, যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের অঙ্গ। ধানগাছকে বলা হয় ঔষধি গাছ, অর্থাৎ একবার ফসল দিয়ে মারা যায়। বাংলাদেশের কৃষিতে ধান উৎপাদন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, যার কারণে আমাদের পরিচিতি ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’। ধানের উৎপাদন কমে গেলে দেশে অন্নাভাব ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। এই কারণেই বলা হয়—
ধানের দেশ বাংলাদেশ
গানের দেশ বাংলাদেশ
তেরশত নদীর দেশ বাংলাদেশ
উৎপত্তি স্থান:
পৃথিবীর সব দেশেই ধান উৎপন্ন হয়, তবে এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়, তা পৃথিবীর আর কোনো অঞ্চলে হয় না। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ, যেখানে উর্বর মাটি রয়েছে, যা ধান চাষের জন্য আদর্শ। এখানে ধান উৎপাদনের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। বরিশাল জেলায় সবচেয়ে বেশি ধান উৎপন্ন হয়, যা তাকে বাংলাদেশের শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। তবে দেশের অন্যান্য জেলাতেও প্রচুর ধান উৎপন্ন হয়, যেমন খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, এবং ময়মনসিংহ। থাইল্যান্ড, জাপান, শ্রীলঙ্কা, এবং বাংলাদেশে মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত, যা ধান থেকে প্রস্তুত।
ধানের প্রকারভেদ:
ধানের প্রকারভেদ নিয়ে বিভিন্ন গবেষকরা বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। কিছু গবেষক একাধিক ধরনের ধান উল্লেখ করেছেন, আবার অন্যরা শতাধিক ধান প্রজাতির কথা বলেছেন। তবে বাংলাদেশে সাধারণত চার ধরনের ধান পাওয়া যায়। এগুলো হলো:
আউশ ধান
আউশ ধান মূলত বৈশাখ মাসে উঁচু জমিতে বপন করা হয় এবং শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ঘরে তোলা হয়। এটি সাধারণত বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল।
আমন ধান
আমন ধান চাষের জন্য কৃষকরা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বৃষ্টি শুরু হলে জমিতে বীজ বপন করে। পরে, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে জমি সিক্ত হলে চারা রোপণ করা হয় এবং কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ধান কাটা হয়।
বোরো ধান
বোরো ধান চাষের জন্য কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বপন করতে হয়, এবং পৌষ-মাঘ মাসে রোপণ করা হয়। এটি বেশি খরচ ও পরিশ্রম সাপেক্ষ হলেও ফলন অন্যান্য ধানের তুলনায় অনেক বেশি হয়।
ইরি ধান
এটি আরও একটি ধান প্রজাতি, যার চাষে কৃষকরা বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অধিক ফলন অর্জন করতে সক্ষম হয়।
উৎপাদন প্রণালি:
বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের পদ্ধতি বেশ বৈচিত্র্যময়। প্রথমে, আউশ ধানের বীজ বৈশাখে জমিতে বপন করা হয়। এরপর, আমন ধানের জন্য বৃষ্টি আসলে জমিতে বীজ বপন করা হয়। বোরো ধান চাষে কৃষকরা আরো বেশি খরচ ও পরিশ্রম করেন, তবে এর ফলন অনেক বেশি হয়। ধান চাষের জন্য জমি ভালভাবে চাষ করা, সেচ, সার ও আগাছা পরিষ্কার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন ধান পাকতে থাকে, তখন কৃষকরা এটি কেটে ঘরে নিয়ে আসেন এবং পরে মাড়াই করে গাছ থেকে ধান আলাদা করেন।
ধানখেতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
ধানখেত শুধু একটি কৃষি ক্ষেত্র নয়, এটি বাংলাদেশের প্রকৃতির অংশ। ধান গাছের শোভা আমাদের মনে আনন্দ এনে দেয়। বিশেষত, সবুজ ধানগাছের সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝে এক অমুল্য রত্নের মতো। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ধানখেতের সৌন্দর্য উঠে এসেছে: “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু।” ধানখেতের এই দৃশ্য প্রকৃতির শোভাবর্ধন করে। সবুজ ধান যখন ধানের শীষে রূপান্তরিত হয়, তখন ধানখেতের দৃশ্য একেবারে সোনালি হয়ে ওঠে, যা দেখতে সত্যিই মুগ্ধকর।
চাল প্রস্তুত প্রণালি:
ধান থেকে চাল প্রস্তুত করা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। প্রথমে ধান পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখেন, তারপর তা সেদ্ধ করা হয়। এরপর রোদে শুকানো হয় এবং রাইস মিলে চাল তৈরি করা হয়। ধান থেকে তৈরি করা চালের দুটি প্রধান প্রকারভেদ রয়েছে—আতপ চাল এবং সেদ্ধ চাল। আতপ চাল সাধারণত পিঠা, পোলাও ইত্যাদি রান্নায় ব্যবহৃত হয়, তবে সেদ্ধ চাল ভাত রান্নায় ব্যবহৃত হয়।
উপকারিতা:
ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি শুধু খাদ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, একটি অর্থকরী ফসল হিসেবেও গুরুত্ব রাখে। ধান থেকে তৈরি করা চালের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য তৈরি করি—পিঠা, পায়েস, পোলাও, খিচুড়ি ইত্যাদি। ধান ভাঙানোর পর তার খোসাগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়, এবং চালের মিহি খোসাগুলো গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
অর্থকরী ফসল হিসেবে ধান:
ধান বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। এটি শুধুমাত্র খাদ্য হিসেবে চাষ করা হয় না, বরং অর্থনৈতিক দিক থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। ধান চাষের মাধ্যমে কৃষকরা অর্থ উপার্জন করে এবং বর্গাচাষীরা নিজেদের জীবনযাপন করতে সক্ষম হন।
ধানের খড়ের বহুমুখী ব্যবহার:
ধানগাছের খড় গরু ও মহিষের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি শীতকালীন অঞ্চলে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে এটি দরিদ্রশ্রেণির মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার:
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি আমাদের অর্থনীতি ও কৃষির উন্নতিতে বিশাল ভূমিকা পালন করে। ধান উৎপাদনে আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, এবং কৃষির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন উন্নতমানের প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নতি বৃদ্ধি পাবে। এই জন্য আমরা সবাই মিলে কৃষিকে আরও বেশি উৎসাহিত করতে হবে, যাতে ধান চাষ আরও ফলপ্রসূ হতে পারে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হয়।
সবশেষে
অনেকেই বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনা pdf চেয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনা class 8, বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনা ক্লাস ২, বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান অনুচ্ছেদ রচনা, বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনা ৩য় শ্রেণি, বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনা ক্লাস 6, বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনা class 10 সহ সকল চাহিদার পূরন হবে এই পোস্ট। মাই ক্লাসরুম ফেসবুক পেজ এখানে
যেভাবে খুজে পাবেন: বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনা সহজ ভাষায় ২০০ শব্দ, ৩০০ শব্দ, ৪০০ শব্দ, ৪৫০ শব্দে লেখা হয়েছে। বিভিন্ন ক্লাসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে রচনাটি লেখা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনাটি ৬ষ্ঠ ৭ম ও ৮ম শ্রেণির জন্য ১৫ পয়েন্ট ২০ পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। ৯ম ১০ম ১১শ ও ১২শ ক্লাসের জন্য ২৫ পয়েন্ট ও ৩০ পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। অনেকে বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল- ধান রচনা pdf ডাউনলোড করতে চান। আপনি মাই ক্লাসরুম থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন না।
১১ থেকে ২০ গ্রেডের অনেক চাকরি পরীক্ষা লিখিত হয়। লিখিত চাকরী পরীক্ষাগুলোতে রচনা লিখতে হয়। লিখিত চাকরি পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য উপযোগী করে এই রচনাগুলো লেখা হয়েছে। চাকরী পরীক্ষা যেমন- ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা, ইউনিয়ন সমাজকর্মীর জন্য বাংলা রচনা, খাদ্য অধিদপ্তর এর জন্য বাংলা রচনা প্রস্তুতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়োগ পরীক্ষা প্রস্তুতি, বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি, ব্যাংক লিখিত প্রস্তুতি সহ সকল সরকারি ও বেসরকারি চাকরি পরীক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।