শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা: ক্যারিয়ার গাইডলাইন পরামর্শ ও প্রস্তুতি

বাংলাদেশে প্রায় ৩৬,০০০ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা নিম্ন-মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। এসব প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে সরকার বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (NTRCA) গঠন করেছে। এই কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, যা শিক্ষকদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া। NTRCA শীঘ্রই ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে।
শিক্ষক নিবন্ধন ও Certification:
বেসরকারি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক হতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেও শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। এ জন্য পৃথক নিবন্ধন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, যার মাধ্যমে একজন প্রার্থী একটি স্কোর লাভ করেন, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের যেকোনো MPO ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয়। নিবন্ধন পরীক্ষা তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত:
- স্কুল পর্যায় ১: সহকারী শিক্ষক (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি), শরীরচর্চা শিক্ষক, মৌলভী, এবতেদায়ী প্রধান, প্রদর্শক ইত্যাদি পদ।
- স্কুল পর্যায় ২: ট্রেড ইন্সট্রাক্টর, জুনিয়র মৌলভী, জুনিয়র শিক্ষক (সাধারণ) ইত্যাদি।
- কলেজ পর্যায়: প্রভাষক/ইন্সট্রাক্টর (টেক/নন-টেক) পদ।
শিক্ষক নিবন্ধন যোগ্যতা
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থীদের কমপক্ষে স্নাতক পাস হতে হবে এবং তাদের শিক্ষা জীবনে যেকোনো একটিমাত্র তৃতীয় বিভাগ বা সমমানের জিপিএ গ্রহণযোগ্য হবে। প্রার্থীর বয়স ১৮-৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি শিক্ষক নিবন্ধন
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্ন সিলেবাস অনুযায়ী থাকে, তাই সিলেবাস ধরে প্রস্তুতি নেয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি বিষয়কে ভালোভাবে বুঝে প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশেষত, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হয়। তাই যতটুকু সম্ভব সঠিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
বাংলা প্রস্তুতি
বাংলা অংশে সাধারণত ব্যাকরণ থেকে প্রশ্ন থাকে, যেমন সমাস, ভাষা, বাগধারা, শুদ্ধ-অশুদ্ধ, সন্ধি, বিপরীত শব্দ, এবং বিরামচিহ্ন। এর পাশাপাশি সাহিত্য থেকেও কিছু প্রশ্ন হতে পারে। বাংলা প্রস্তুতির জন্য নবম ও দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বই এবং বিগত ১০ বছরের বিসিএস, নিবন্ধন ও প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক সমাধান করতে হবে।
ইংরেজি শিক্ষক নিবন্ধন প্রস্তুতি
ইংরেজি অংশে প্রার্থীদের মৌলিক জ্ঞান ব্যবহার করে ইংরেজি গ্রামারের বিভিন্ন বিষয় যেমন Parts of Speech, Verb Forms, Translation, Synonym/Antonym ইত্যাদি পড়তে হবে। ইংরেজি প্রস্তুতির জন্য ষষ্ঠ-দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি গ্রামার বোর্ড বই এবং অন্যান্য গ্রামার বই ব্যবহার করা যেতে পারে।
গণিত শিক্ষক নিবন্ধন প্রস্তুতি
গণিতের জন্য বিগত বিসিএস, নিবন্ধন পরীক্ষা এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন থেকে ধারণা নেয়া যেতে পারে। গণিতের বিভিন্ন অংশ যেমন বীজগণিত, পাটিগণিত, জ্যামিতি, লগারিদম ইত্যাদি ভালোভাবে চর্চা করতে হবে।
সাধারণ জ্ঞান প্রস্তুতি
সাধারণ জ্ঞান অংশে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন আসে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিবেশ এবং রোগব্যাধি সম্পর্কেও প্রশ্ন হতে পারে।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার পদ্ধতি
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়:
- প্রিলিমিনারি পরীক্ষা: MCQ ভিত্তিক ১০০ নম্বরের পরীক্ষা, যার সময় ১ ঘণ্টা। পাস নম্বর ৪০%।
- লিখিত পরীক্ষা: প্রিলিমিনারিতে পাস প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে, যেখানে ১০০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে।
- মৌখিক পরীক্ষা: লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
MCQ-এর মানবণ্টন:
- বাংলা: ২৫ নম্বর
- ইংরেজি: ২৫ নম্বর
- সাধারণ গণিত: ২৫ নম্বর
- সাধারণ জ্ঞান: ২৫ নম্বর
Conclusion:
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দেশের শিক্ষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার অংশ। সঠিক প্রস্তুতির মাধ্যমে পরীক্ষায় সফল হওয়া সম্ভব। এজন্য সিলেবাস অনুযায়ী অধ্যয়ন এবং বিগত পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।