সত্যবাদিতা অথবা সততা রচনা।
সততা রচনাটি ৩য় শ্রেনি, ৪র্থ শ্রেণি, ৫ম শ্রেণি, ষষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনি উপযোগী লেখা হয়েছে। ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক সময় সততা রচনা না দিয়ে বলা হয় সততা সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখুন। আবার চাকরি কিংবা ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে আসে সততা সম্পর্কে অনুচ্ছেদ লিখুন। বাংলা ২য়পত্র বিষয় থেকে সততা রচনাটি সহজ ভাষায় লিখা হয়েছে । ৩য় থেকে ৭ম শ্রেনি উপযোগী করে লেখা হয়েছে।
সততা রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। যেন, একবার পড়লেই মুখস্থ হয়ে যায়। সততা এর জায়গায় যদি আসে আদর্শ বিদ্যালয় তাহলেও রচনাটি লিখতে পারেন। My Favorite Sports essay is written for class- 3, 4, 5, 6 and 7.
সত্যবাদিতা অথবা, সততা রচনা
ভূমিকা : সত্যবাদিতা মানুষের আচরণগত একটি মূল্যবোধ। এটি মানুষের একটি মহৎ গুণ ও আদর্শ। যেসব চারিত্রিক গুণ মানুষকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে এবং তাকে মহৎ করে, সেসব গুণের মধ্যে সততা অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ। পৃথিবীর যাবতীয় কল্যাণ, জীবনের সর্বময় পবিত্রতা ও শান্তির উৎস হলো সততা। মিথ্যা ও অসত্যকে বিতাড়িত করে সততা চিরদিন মাথা উঁচু করে থাকে বলে এর মূল্য ও মর্যাদা যুগে যুগে স্বীকৃত হয়ে আসছে।
সত্যবাদিতা কী : সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ। সত্য কথা বলার গুণকে সত্যবাদিতা বলে। একজন সত্যবাদী মানুষ কখনো মিথ্যা বলেন না। চরম বিপদেও তিনি সত্যকে আঁকড়ে থাকেন। সত্যবাদিতা মানবচরিত্রের অলংকার স্বরূপ। সত্য কথা বলতে পারলে অন্যান্য গুণ মানুষের মধ্যে এমনিই চলে আসে। সত্যবাদিতার গুণেই মানুষ সমাজে ও রাষ্ট্রে আদর্শ মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয়। সত্যকে অবলম্বন করে যে বৈশিষ্ট্য বিকশিত হয়, তা-ই সততা। সত্যের মধ্য দিয়ে মানুষ এই মহৎ গুণ লাভ করে ।
সততা রচনা ষষ্ঠ ৭ম শ্রেণি
দৈনন্দিন জীবন ও সততা : সততা- এই মহৎ গুণটি বাস্তব জীবন থেকে উঠে যেতে বসেছে। সততা পরিহার করে মানুষ সত্যপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। নানাভাবে নানাশ্রেণি এ পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মনে রাখতে হবে, ইতিহাসে যারা স্মরণীয় হয়ে আছেন, তাদের সবাই ছিলেন সত্যবাদী। বর্তমান যুগ জীবন-জটিলতার যুগ। জীবনযুদ্ধের জটিলতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষ ততই তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাণপণ লড়ছে। অস্তিত্ব যখন মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়, তখন অধিকাংশ মানুষ যেকোনো প্রকারে হোক টিকে থাকতে চায়। ফলে তারা সত্যকে জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য হয়। এভাবে অবস্থার চাপে পড়ে আধুনিক যুগের বিশেষ করে স্বল্পোন্নত বা অনুন্নত
দেশের অনেক মানুষই অসততার আশ্রয় নেয় বা নিচ্ছে। তারা অপরকে ঠকানো, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ঘুষ গ্রহণ, খুন-জখম ইত্যাদি কাজে লিপ্ত থেকে অসৎ হচ্ছে।
আরেক দল আছে, যারা শুধু অর্থ চায়- অর্থই তাদের জীবনের মূলমন্ত্র। অর্থ ছাড়া এরা কিছু বোঝে না। এই শ্রেণি ভিন্ন শ্রেণিকে নানাভাবে শোষণ করে নিজেদেরকে অসৎ প্রমাণিত করছে। এদের কোনো অভাব নেই, কিন্তু সম্পদ বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় এরা একেকজন তীব্র প্রতিযোগী। এসব প্রতিযোগী কখনো হারতে চায় না, জিততে চায়। আর জয়ী হতে গিয়েই পদস্খলন হয়, অসততার আশ্রয় নেয়। এ শ্রেণি সম্পদ হরণ করে, মজুরি কর্তন বা কম দিয়ে পরের অধিকার বঞ্চিত করে কিংবা ভয় দেখিয়ে বড় লোক হওয়ার পথটি প্রসারিত করে।
সত্যবাদিতা রচনা সকল ক্লাসের জন্য
সমাজে তৃতীয় যে দলটির অবস্থান, তারা ধনী হোক আর গরিব হোক অসমতা প্রদর্শন তাদের নেশা ও পেশা দুটিই। বিপদে থাকুক আর নিরাপদে থাকুক, অসততার আশ্রয় না নিলে তাদের ভালোই লাগে না। অসততার ভেতর তারা সুখ পায়, লোক ঠকিয়ে আনন্দ পায়। এরা অফিস-আদালতে বিনা কারণে ফাইল আটকিয়ে ঘুষ নিয়ে মজা পায় ।
আজকের সমাজে সততা নেই বললেই চলে। রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মনীতি- সব ক্ষেত্রেই অসততা ঢুকে গেছে। সৎ থাকাই একটা অপরাধ হিসেবে সমাজের মানুষগুলো বিবেচনা করে। সৎ থাকলে তাকে নানা বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। একের পর এক আরোপিত বিপদ তাকে প্রায় পর্যুদস্ত করে ফেলে। নানামুখী অসততার চাপে তার মানসিক স্থিরতা হারানোর উপক্রম হয় ।
সত্যবাদিতা বা সততার পরিণাম বা গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা : সত্যবাদী লোক সমাজে সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হন। বিভিন্ন ধর্মেও সত্যবাদিতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সমাজজীবনেও সত্যবাদিতার পরিণাম সবসময় মঙ্গলজনক হয়ে থাকে। একজন মিথ্যাবাদীও সত্যবাদীকে পছন্দ করে। কারণ সত্যের জয় সুনিশ্চিত। সততার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সত্যবাদিতা মানুষের চরিত্রকে সুন্দর ও মহৎ করে তোলে। বর্তমান পৃথিবীতে সততার বড় বেশি প্রয়োজন। সততার অভাবে সমাজে শান্তি- শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে। আইন-আদালত, শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে । সততার ভান করে মানুষ নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে নেয়। আপাতদৃষ্টিতে মিথ্যা বা অসততার জয় প্রতীয়মান হলেও তা স্থায়ী নয়।
বাংলা ২য়পত্র থেকে সততা রচনা
বরং সততার প্রকাশ একসময় অনির্বাণ হয়ে ওঠে এবং পরিণামে সত্যের বিজয় ঘোষিত হয়। সত্যবাদীরা আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয় এবং এতে তার মনের শক্তিও বেড়ে যায়। মিথ্যা, প্রবঞ্চনা, ছলনা ও প্রতারণা মানুষের অন্তরকে কলুষিত করে। তার জীবনে বাহ্যিক সুখ থাকলেও অন্তরে তৃপ্তি থাকে না। অসৎ ব্যক্তি বিবেকের দংশনে বিড়ম্বিত থাকে । অসৎ লোকের মনে নানা পাপ ও সংকীর্ণবোধ বাসা বাঁধে। সত্যের অভাবে সমাজে আজ অপরাধপ্রবণতা বেড়ে গেছে। সব ক্ষেত্রেই সৎ লোকের প্রয়োজন। একজন সৎ ব্যক্তি তার পরিবার, সমাজ ও দেশের মধ্যে বিশেষ সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হন। সৎ লোককে সবাই সম্মান করে, বিপদের সময় সাহায্য করে। সততার চর্চাই পারে সমাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। সমাজে সততা বিরাজ করলে পারস্পরিক সৌহার্দ, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হয়।
তখন মানুষ এ কথার সত্যতা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারে :
‘কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক/ কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক / মানুষেতেই সুরাসুর।
আরও পড়ুন:
উপসংহার : সুন্দর ও পুণ্যবান জীবনের জন্য সততার অনুশীলন আবশ্যক। জীবনে সততাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। শিশুকাল থেকেই সততার আদর্শকে সমুজ্জ্বল করে রাখতে হবে। পারিবারিকভাবে এ গুণের শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এর গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বোপরি আমাদের সবাইকে সত্যবাদিতার চর্চা করতে হবে। একজন সত্যবাদী মানুষ পৃথিবীর অমূল্য সম্পদ।
সবশেষে
অনেকেই সততা রচনা pdf চেয়েছেন। সততা রচনা class 8, সততা রচনা ক্লাস ২, সততা অনুচ্ছেদ রচনা, সততা রচনা ৩য় শ্রেণি, সততা রচনা ক্লাস 6, সততা রচনা class 10 সহ সকল চাহিদার পূরন হবে এই পোস্ট।