স্বদেশপ্রেম রচনা। সকল শ্রেনির জন্য ১৫ ২০ ২৫ ৩০ পয়েন্ট স্বদেশপ্রেম
স্বদেশপ্রেম রচনাটি ৩য় শ্রেনি, ৪র্থ শ্রেণি, ৫ম শ্রেণি, ষষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনি উপযোগী লেখা হয়েছে। ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক সময় স্বদেশপ্রেম রচনা না দিয়ে বলা হয় স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখুন। আবার চাকরি কিংবা ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে আসে স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে অনুচ্ছেদ লিখুন। বাংলা ২য়পত্র বিষয় থেকে স্বদেশপ্রেম রচনাটি সহজ ভাষায় লিখা হয়েছে । ৩য় থেকে ৭ম শ্রেনি উপযোগী করে লেখা হয়েছে।
স্বদেশপ্রেম রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। যেন, একবার পড়লেই মুখস্থ হয়ে যায়। স্বদেশপ্রেম এর জায়গায় যদি আসে আদর্শ বিদ্যালয় তাহলেও রচনাটি লিখতে পারেন। patriotism essay is written for class- 3, 4, 5, 6 and 7.
স্বদেশপ্রেম রচনা
ভূমিকা :
স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে-
কে বাঁচিতে চায়?
‘দাসত্ব শৃঙ্খল বল, কে পরিবে পায় হে
কে পরিবে পায়?
সত্যিই তাই মুক্ত জীবনের প্রশান্তি সকলের কাম্য। জন্মভূমির বুকে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার মতো প্রশান্তি বিরল।
প্যালেস্টাইনের এক কবি বলেছেন, “স্বদেশের মাটি স্পর্শ করার সময় ছাড়া আমার শির আর কখনো নত হয় না।” কবির এ উচ্চারণে ফুটে উঠেছে স্বদেশের জন্য ভালোবাসা, গভীর অনুভূতি। মূলত দেশপ্রেম এক সহজাত অনুভব। প্রতিটি মানুষের অন্তরে এ অনুভব উজ্জ্বল আলোর মতো জেগে থাকে। দেশের প্রতি যার ভালোবাসা নেই, তার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। দেশের মাটি মায়ের মতো। সে জন্যই দেশকে বলা হয় দেশমাতা। আমরা দেশমাতার কোলে ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠি। দেশের আলো-জল, মাটির স্পর্শে আমাদের তনু-মন পুষ্ট হয়ে ওঠে। আমাদের প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস স্বদেশের কাছে ঋণী। আমাদের অনুভবের প্রতিটি সীমানায় স্বদেশের পতাকা, আমাদের জীবন আমাদের স্বদেশেরই দান ।
স্বদেশপ্রেম কী
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। এ সমাজ আবার কতকগুলো ধর্ম, ভাষা, নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভৌগোলিক সীমায় বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়ে স্বতন্ত্র বা পৃথক রাষ্ট্র, জাতি বা সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে থাকে। এ স্বাতন্ত্র্যবোধ তীব্র হয়ে যখন অঞ্চলবিশেষের মানুষের মধ্যে একটি ঐক্যচেতনা জাগিয়ে তোলে, তখনই তার নাম হয় দেশাত্মবোধ, স্বাজাত্যবোধ বা স্বদেশপ্রেম। স্বদেশের ভৌগোলিক সীমা, তার অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, তার ভাষা, প্রাকৃতিক সম্পদ, এমনকি ধর্মবোধ এসব নিয়েই স্বদেশপ্রেমকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এ স্বদেশকে আপনার বলে জানা, স্বদেশের মানুষ, প্রাণী, মৃত্তিকা সবকিছুর জন্য মমত্ববোধ সংস্কৃতিমান মানুষের একটি মৌলিক বৃত্তি। এ বৃত্তিকেই আমরা বলি স্বদেশপ্রেম।
স্বদেশপ্রেমের উৎস
স্বদেশপ্রেম সকলের অন্তরেই থাকে। কখনও এ প্রেম থাকে সুপ্ত অবস্থায়, কখনো থাকে অন্তরের অন্তস্তলে। প্রকৃতপক্ষে স্বদেশপ্রেমের উদ্ভব আত্মসম্মানবোধ থেকে। যে জাতির আত্মসম্মানবোধ যত প্রখর, সে জাতির
স্বদেশপ্রেম তত প্ৰবল ।
স্বদেশপ্রেমের উপায়
প্রতিটি মানুষের মাঝেই মন-মনন, চিন্তা-চেতনা, মেধা-প্রজ্ঞার পার্থক্য রয়েছে বলে স্বদেশপ্রেমের উপায়
সম্পর্কে ভিন্নতা থাকে। তবে সকল মানুষের নানামুখী ভিন্নতা থাকলেও স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপনের ক্ষেত্রে কেউ কারো থেকে কম নয়। বরং প্রতিটি মানুষ স্ব স্ব স্থানে থেকে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে দেশকে ভালোবাসতে পারে ।
স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ
মূলত স্বদেশপ্রেমের উদ্ভব আত্মসম্মান বোধ থেকে। এ জন্যই বলা হয়ে থাকে, যে জাতির
আত্মসম্মানবোধ যত বেশি, সে জাতির স্বদেশপ্রেম তত বেশি। স্বদেশপ্রেম হলো স্বর্গীয় ভাবাবেগ, আর যে দেশপ্রেমের মধ্যে কোনো স্বার্থ নেই, হিংসা নেই, সেই দেশপ্রেমই হলো স্বদেশপ্রেম। আমরা যখন ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র স্বার্থের পরিধি অতিক্রম করে বৃহত্তর স্বার্থের দিকে মন দিই, নিজের কল্যাণের চেয়ে বৃহত্তর কল্যাণবোধ বড় হয়ে ওঠে, তখন সেটাকে স্বদেশপ্রেম বলা হয়ে থাকে।
স্বদেশপ্রেমের উন্মেষ
স্বদেশপ্রেমের পথে ঝড়, ঝঞ্ঝা যতই আসুক না কেন, দেশপ্রেমিকের কাছে সেগুলো কিছুই না, দেশপ্রেমিকদের
বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কাছে সেগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়। স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু বা উদ্ধত অস্ত্র তাদের দমিয়ে রাখতে পারে না। এর প্রমাণ আমাদের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ। বাংলার দামাল ছেলেরা দেশপ্রেমের মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী : জননী এবং জন্মভূমি আমাদের কাছে পরম শ্রদ্ধেয়া জননী জন্মদাত্রী স্তন্যে-স্নেহে আমাদের লালন-পালন করে। আর জন্মভূমি আমাদের সবাইকে শস্যে, ফলে, অন্নে ও পানীয়ে পুষ্ট করে তোলে। তাই সে আমাদের জননী কবি গেয়ে ওঠেন, “তুমি অন্ন মুখে তুলে দিলে, তুমি শীতল জলে জুড়াইলে, তুমি যে সকল সহা সকল বহা মাতার মাতা।”
দেশপ্রেমিকের অবদান
যুগে যুগে দেশপ্রেমিকগণ জগতের ইতিহাসে তাদের কর্মময় জীবনের মহান দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ দেশের কল্যাণে তাদের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন। জর্জ ওয়াশিংটন, মহাত্মা গান্ধী, লেনিন, মাওসেতুং, ইয়াসির আরাফাত, নেলসন ম্যান্ডেলা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ নেতা দেশকে ভালোবেসে দীর্ঘকাল কারাবরণ করেছেন। অত্যাচার আর পীড়ন সহ্য করে দেশ ও জাতির মুক্তিসংগ্রামে নেতৃত্বদান করেছেন। কোনো ভয়, প্রলোভন তাঁদেরকে কাবু করতে পারেনি। শত বিপর্যয়ের মুখেও তারা দেশমাতৃকার মুক্তিব্রত থেকে পিছু হটেননি। তাই তো বিশ্বের ইতিহাসে এসব মহান দেশপ্রেমিকের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ দেশের জনগণ মায়ের মতো দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করেছে। ৫২, ৫৪, ৬৬, ৬৯ সালে রক্ত দিয়ে
স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিসংগ্রামে লিপ্ত হয়ে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ, এ মাটিকে শত্রুমুক্ত করেছে শুধু স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়েছিল বলে। দেশ সৃষ্টির এরূপ দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল। তবে বাংলাদেশে স্বদেশপ্রেমের নামে মাঝে মধ্যে উগ্র দেশপ্রেমের নজিরও দেখতে পাওয়া যায়। এক শ্রেণির মানুষ দেশপ্রেমের নামে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে স্বার্থ হাসিল করে। তারা তাদের হীনস্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য উগ্র মতবাদ দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটায়। বিদেশি কোনো মেহমান এলে অথবা দেশের বাইরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিদেশ সফরে গেলে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য যদেশের কোনো গ্রুপের বদনাম রটায় যা মূলত দেশপ্রেমবহির্ভূত ।
বাংলা কাব্যে দেশপ্রেম
দেশপ্রেম শুধু ইতিহাস, ঐতিহ্য, মনীষীদের বাণী বা ধর্মীয় বিধানেই সীমাবদ্ধ নয়। বাংলা কাব্যে দেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসার সমূহ ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। সতেরো শতকের কবি আব্দুল হাকিম তাঁর ‘নূরনামা’ কাব্যে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় দেশের প্রতি গভীর উপলব্ধি ও বিশ্বাসের কথা নির্দ্বিধায় ব্যক্ত করেছেন।
তিনি যাদের স্বদেশের প্রতি অনীহা, তাদের ধিক্কার দিয়েছেন,
“যেসব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী। সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।
” অর্থাৎ বঙ্গবিদ্বেষীদের তিনি জারজ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় স্বপ্নময়, স্মৃতিময় এ দেশের রূপে বিমোহিত হয়ে গেয়েছেন,
“ধনধান্যে পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।”
কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলাদেশকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থে গেয়েছেন,
“বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।”
দেশপ্রেম এবং বিশ্বপ্রেম প্রকৃত দেশপ্রেমিক ব্যক্তি কখনো সংকীর্ণ মনের পরিচয় দেন না। নিজের দেশকে ভালোবাসা মানে অন্য দেশের প্রতি শত্রুতা নয়। যে দেশপ্রেম শুধু নিজের দেশের জন্য, সে দেশপ্রেম অন্ধ এবং পক্ষপাতদুষ্ট। “স্বদেশ আমার ভূমি, কিন্তু বিশ্বও আমার পর নয়”- এটাই প্রকৃত দেশপ্রেমের বাণী। কাজেই নিজের দেশকে ভালোবাসতে হবে আবার সমগ্র বিশ্বের প্রতিও সহমর্মিতা জাগ্রত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রকৃত দেশপ্রেম নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে রাখে না বরং বৃহৎ পৃথিবীর মধ্যে নিজেকে ছড়িয়ে দেয়।
অদ্ধ স্বদেশপ্রেমের পরিণতি
স্বদেশপ্রেম হলো সমগ্র দেশ ও জাতির গৌরবের বিষয়। কিন্তু অন্ধ স্বদেশপ্রেম অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। অন্ধ স্বদেশপ্রেম জাতিতে জাতিতে সংঘাত ও সংঘর্ষ অনিবার্য করে তোলে। স্বদেশের জয়গান গাইতে
গিয়ে অন্য কোনো জাতির স্বদেশপ্রেমে আঘাত হানলে সেটা দেশ ও জাতির মধ্যে রক্তাক্ত দ্বন্দ্ব-সংঘাত অনিবার্য করে তোলে।
স্বদেশপ্রেম ও রাজনীতি
স্বদেশপ্রেম ও রাজনীতি একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। রাজনীতিবিদ হওয়ার জন্য প্রধান
শর্ত তাকে অবশ্যই স্বদেশপ্রেমী হতে হবে। প্রেমের পবিত্র বেদিমূলই রাজনীতির পাঠ। স্বদেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ দেশের সদাজাগ্রত প্রহরী স্বরূপ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের এক ঝাঁক দেশপ্রেমী রাজনৈতিক নেতার অবদানেই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। বর্তমানেও অনেক রাজনৈতিক নেতা আছেন। তবে আজকের অধিকাংশ নেতাই মুখে দেশপ্রেম দেখান কিন্তু তারা নিজের স্বার্থকে সব সময় বড় করে দেখেন ।
স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বভাবনা স্বদেশপ্রেমের মধ্যেই বিশ্বপ্রেমের জাগরণ। স্বদেশকে ভালোবাসা মানে বিশ্বকে ভালোবাসা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের উর্ধ্বে মানুষকে ভালোবাসলে জাতীয়তাবোধ থেকে মুক্তি পেয়ে আমরা সমস্ত বিশ্বকে ভালোবাসতে পারব। ”
বিশ্বপ্রেমের উজ্জ্বল আলোয় স্বদেশপ্রেমকে উচ্চাসিত করতে পারব। স্বদেশচেতনা বিশ্ববোধেরই অংশ। দেশের মানুষ, মাটি ও প্রকৃতি ভালোবাসার মধ্য দিয়েই পৃথিবীর মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসা যায়। তাই স্বদেশকে সবার আগে জানতে হবে এবং ভালোবাসতে হবে ।
স্বদেশপ্রেমের প্রকৃত স্বরূপ
স্বদেশপ্রেম মানুষের মনে কখনো সুপ্ত বা কখনো জাগ্রত অবস্থায় থাকে। কিন্তু স্বদেশপ্রেমের মূল
থাকে অন্তরের অন্তস্তলে যখন দেশের সব মানুষ একই জীবনধারায়, একই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারায় পৃষ্ট হয়ে একই আদর্শের অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে, তখনই স্বদেশপ্রেমের প্রকৃত স্বরূপ বোঝা যায়। স্বদেশ আমাদের কাছে মায়ের মতোই। তাই দেশকে মায়ের মতোই ভালোবাসা উচিত, যখন বিদেশি শত্রুর আক্রমণে দেশ পর্যুদস্ত হয়, তখন সমগ্র জাতি স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। এখানেই স্বদেশপ্রেমের প্রকৃত স্বরূপ বিদ্যমান ।
রবীন্দ্রনাথের মতে স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের মধ্যে পার্থক্য
জাতীয়তা ও স্বদেশপ্রেম যখন সংকীর্ণতার অন্ধকূপে বন্দি হয়, তখন বিশ্বপ্রেম পদদলিত হয়। স্বদেশকে পরমপ্রিয় মনে করে আমরা বিশ্বকে শত্রু মনে করি এবং সেটাকে ধ্বংস করার জন্য ধাবিত হই । রবীন্দ্রনাথ এসবের বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি স্বদেশপ্রেমের মধ্যেই বিশ্বপ্রেম খুঁজে পেয়েছেন।
এ জন্য তিনি বলেছেন,
‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা
তোমাতে বিশ্বময়ী তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা ।’
স্বদেশপ্রেমের প্রভাব
মানবচরিত্রের গুণাবলি বিকাশের ক্ষেত্রে স্বদেশপ্রেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বদেশপ্রেমের
চেতনায় মানবমন থেকে সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতা দূর হয়। স্বদেশপ্রেমের কারণে দেশ ও জাতির জন্য মানবমনে কল্যাণচিন্তা জাগ্রত হয় । তাই দেশের স্বার্থে প্রত্যেকটি মানুষকে স্বদেশপ্রেমী হওয়া উচিত।
স্বদেশপ্রেমের অভিব্যক্তি
সভ্যতার অগ্রগতির পথে একসময় যাযাবর মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করে, সৃষ্টি হয় রাষ্ট্রের। স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুগে যুগে মানুষ বিভিন্নভাবে নজির স্থাপন করে গেছে। আমাদের এ সুজলা-সুফলা সোনার বাংলাকে
ভালোবেসে এবং স্বাধীনতা রক্ষায় অথবা স্বাধীনতাসংগ্রামে কত মানুষ যে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। স্বদেশকে ভালোবাসলে আত্মতৃপ্তি অনুভব করা সম্ভব। তাই স্বদেশপ্রেমের অভিব্যক্তি হয় তৃপ্তিদায়ক।
দেশেপ্রেমের উগ্রতা
দেশপ্রেমবোধ মানুষের চরিত্রের একটি অন্যতম দিক। এ ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, যা সত্যিই
গৌরব ও অহংকারের বিষয়। কিন্তু এ দেশপ্রেম যখন হয় অন্ধ ও উগ্র, তখন তা জাতীয় জীবনে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে । উগ্র দেশপ্রেম মানুষের শুভবুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে সংঘাতে, সংঘর্ষকে অনিবার্য করে তোলে। অন্ধ দেশপ্রেম বিশ্বদ্রোহিতারই নামান্তর। এতে নেই জাতির সমৃদ্ধির কোনো নিদর্শন ।
উপসংহার
কবি গেয়েছেন, “ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা।” প্রতিদিন ভোরবেলা যে আলো, আকাশ, মাটি,
বায়ু আর মানুষের সাথে আমাদের দেখা, সে তো আমাদেরই স্বদেশ। দেশকে ভালোবেসে আমরা আমাদের জন্মঋণ শোধ করতে পারি। সুতরাং দেশপ্রেমের গভীর অনুভূতি বুকে ধারণ করে আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হোক-
“এই দেশেতেই জন্ম/যেন এই দেশেতেই মরি।”
সবশেষে
অনেকেই স্বদেশপ্রেম রচনা pdf চেয়েছেন। স্বদেশপ্রেম রচনা class 8, আদর্শ গ্রাম রচনা ক্লাস ২, আদর্শ গ্রাম অনুচ্ছেদ রচনা, স্বদেশপ্রেম রচনা ৩য় শ্রেণি, স্বদেশপ্রেম রচনা ক্লাস 6, স্বদেশপ্রেম রচনা class 10 সহ সকল চাহিদার পূরন হবে এই পোস্ট। Our Facebook Link is Here
যেভাবে খুঁজে পাবেন: স্বদেশ প্রেম রচনা ১৫ ২০ ২৫ ৩০ পয়েন্ট পর্যন্ত এখানে লেখা হয়েছে। সহজ ভাষায় স্বদেশ প্রেম রচনা সকল ক্লাসের জন্য যেমন ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ এর জন্য উপযোগী। স্বদেশ প্রেম রচনা pdf হিসাবে ডাউনলোড করা সম্ভব নয়।
আরো গুরুত্বপূর্ন রচনা
FAQ’s on স্বদেশপ্রেম
প্রশ্ন: 200 শব্দের রচনা দেশপ্রেম কি?
উত্তর: দেশপ্রেম হলো নিজের দেশ ও জাতির প্রতি গভীর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সেবা করার মানসিকতা। দেশপ্রেমিক ব্যক্তি দেশের উন্নতি ও স্বাধীনতার জন্য সবসময় কাজ করে এবং দেশের সুনাম রক্ষায় নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। দেশপ্রেম শুধু অনুভূতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দায়িত্ব, কর্তব্য এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
প্রশ্ন: স্বদেশ প্রেম বলতে কি বোঝায়?
উত্তর: স্বদেশ প্রেম বলতে নিজের জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কর্তব্য পালন করা বোঝায়। এটি দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ জাগ্রত করে।
প্রশ্ন: দেশপ্রেমের বক্তব্য কি?
উত্তর: দেশপ্রেমের মূল বক্তব্য হলো দেশের প্রতি নিষ্ঠা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা। এটি দেশের অগ্রগতি, সংহতি এবং স্বাধীনতা রক্ষায় অবদান রাখা এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার উৎসাহ প্রদান করে।
প্রশ্ন: দেশপ্রেমের সুফল কি কি?
উত্তর: দেশপ্রেমের সুফল হলো দেশের অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা। এটি নাগরিকদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে, দেশকে উন্নত করে এবং বিদেশি শত্রুদের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। দেশপ্রেমের মাধ্যমে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।