এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক AIIB ইতিহাস ও উদ্দেশ্য

বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB)-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গড়ে ওঠে চীনের নেতৃত্বাধীন এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (AIIB)। এই ব্যাংকটি “এশিয়ার বিশ্বব্যাংক” হিসেবে পরিচিত, যার মূল উদ্দেশ্য এশিয়ার অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামোগত চাহিদা পূরণ করা।
প্রতিষ্ঠা
এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (AIIB) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা ২০১৩ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত Asia-Pacific Economic Cooperation (APEC)-এর ২৫তম শীর্ষ সম্মেলনে দেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি AIIB গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, যা পরবর্তীতে ২৪ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে ২১টি দেশ সমঝোতা স্মারকে (MoU) স্বাক্ষর করে। ২০১৫ সালের ২৯ জুন চীনের বেইজিংয়ে ৫০টি দেশ আর্টিকেলস অব এগ্রিমেন্ট (AoA) স্বাক্ষর করে এবং ব্যাংকটির কাঠামোগত রূপ লাভ হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর, AIIB আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে।
AIIB গঠনের পর, ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি চীনের নেতৃত্বে ব্যাংকটি কার্যক্রম শুরু করে এবং তা বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর বিকল্প হিসেবে কাজ করতে শুরু করে।
উদ্দেশ্য
AIIB গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও ইউরোপের সাথে স্থলপথের সংযোগ স্থাপন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। ব্যাংকটি এশিয়ার পরিবহন, জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য অবকাঠামো খাতে ঋণ ও অর্থ সহায়তা প্রদান করবে।
প্রথম ঋণ
২৪ জুন ২০১৬ AIIB তার প্রথম ঋণ অনুমোদন করে, যেখানে ৪টি দেশের ৪টি প্রকল্পের জন্য মোট ৫০.৯০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের ১৬.৫০ কোটি ডলারের একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প ছিল। এই ছিল AIIB-এর প্রথম ঋণ অনুমোদন, যা সংস্থার ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের ভিত্তি তৈরি করে।
শেয়ার এবং তহবিল
AIIB-এর অনুমোদিত মূলধন ১০০ বিলিয়ন বা ১০,০০০ কোটি মার্কিন ডলার। ব্যাংকটি এশিয়ায় বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী। সদস্য দেশগুলোর শেয়ার এবং ভোটাধিকারের পরিমাণ দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা, দেশজ উৎপাদন (GDP), এবং ক্রয়ক্ষমতার (PPP) ওপর নির্ভর করে।
শেয়ার ও ভোটাধিকারে শীর্ষ ৫ দেশ:
- চীন: শেয়ারের ৩০.৬৯% এবং ভোটাধিকার ২৬.৫৪%
- ভারত: শেয়ারের ৮.৬২৩% এবং ভোটাধিকার ৭.৫৮%
- রাশিয়া: শেয়ারের ৬.৭৩৬% এবং ভোটাধিকার ৫.৯৬%
- জার্মানি: শেয়ারের ৪.৬২১% এবং ভোটাধিকার ৪.১৪%
- দ. কোরিয়া: শেয়ারের ৩.৮৫% এবং ভোটাধিকার ৩.৪৮%
AIIB এবং বাংলাদেশ
বাংলাদেশ AIIB-এর প্রতিষ্ঠাকালে ২৪ অক্টোবর ২০১৪ একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে এবং পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালের ২৯ জুন আর্টিকেল অব এগ্রিমেন্ট (AoA) স্বাক্ষর করে। ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ‘এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক আইন, ২০১৬’ পাস করে এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি বিলটি স্বাক্ষর করলে তা আইনে পরিণত হয়। এরপর ২২ মার্চ ২০১৬ বাংলাদেশ AIIB-এর ৩৩তম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। বাংলাদেশ এর মাধ্যমে ৬৬০.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার শেয়ার এবং ০.৭৬৩০% ভোটাধিকার পায়।
AIIB Bank: Fact File
- পূর্ণরূপ: Asian Infrastructure Investment Bank
- প্রতিষ্ঠা: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫
- যাত্রা শুরু: ১৬ জানুয়ারি ২০১৬
- সদর দপ্তর: বেইজিং, চীন
- প্রথম প্রেসিডেন্ট: জিন লিকুন (চীন)
- প্রতিষ্ঠাতা সদস্য: ৫৭টি দেশ
- বর্তমান সদস্য: ৯৬টি দেশ
- সর্বশেষ সদস্য: পাপুয়া নিউ গিনি (১৩ মে ২০২৪)
- বার্ষিক বৈঠক:
- প্রথম বৈঠক: ২৫-২৬ জুন ২০১৬, বেইজিং, চীন
- নবম বৈঠক: ২৫-২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সমরখন্দ, উজবেকিস্তান
উপসংহার
এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (AIIB) চীনের নেতৃত্বে গঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যা এশিয়া এবং ইউরোপের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশের জন্য AIIB একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান, যা দেশের বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্পে সহায়তা প্রদান করছে। AIIB-এর মাধ্যমে এশিয়ার অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন আশা করা হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
AIIB সম্পর্কিত FAQ
- AIIB এর বর্তমান সদস্য কত?
- AIIB এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৯৬টি দেশ।
- AIIB এর সর্বশেষ সদস্য দেশ কোনটি?
- AIIB এর সর্বশেষ সদস্য দেশ পাপুয়া নিউ গিনি, যা ১৩ মে ২০২৪ তারিখে সদস্যপদ লাভ করেছে।
- AIIB এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা কত?
- AIIB এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৯৬টি দেশ।
- AIIB এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট কে?
- AIIB এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন জিন লিকুন, যিনি ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।