Career Guideline

পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরামর্শ Police Sub Inspector (SI)

বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এবং পুলিশ সদর দপ্তর দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত। সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। একজন সাব-ইন্সপেক্টরের মূল দায়িত্ব হলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অপরাধ দমন এবং তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা। তাই, বর্তমান সময়ে সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট নিয়োগ প্রস্তুতির জন্য বিশেষ কিছু দিক আলোচনা করা হলো।

পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর বাছাই-পদ্ধতি

প্রার্থী বাছাই করা হয় ১১টি ধাপে:

  1. অনলাইন রেজিস্ট্রেশন
  2. ওয়েববেজড স্ক্রিনিং
  3. শারীরিক মাপ ও কাগজপত্র যাচাইকরণ
  4. শারীরিক সক্ষমতা যাচাই বা Physical Endurance Test
  5. ওয়েববেজড আবেদন ফরম পূরণ
  6. লিখিত পরীক্ষা
  7. কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষা
  8. মৌখিক পরীক্ষা
  9. মেডিক্যাল টেস্ট বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা
  10. পুলিশ ভেরিফিকেশন
  11. ক্যাডেট SI (নিরস্ত্র) বা সার্জেন্ট হিসেবে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ধাপ নিম্নে আলোচনা করা হলো—

প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং

প্রার্থীদের প্রাথমিকভাবে এসএসসি, এইচএসসি এবং স্নাতক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এবং উচ্চতার মাপকাঠিতে ওয়েববেজড প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিংয়ে নির্বাচিত করা হয়।

শারীরিক মাপ ও Physical Endurance Test

নির্ধারিত তারিখ ও স্থানে প্রার্থীদের শারীরিক মাপ (উচ্চতা, ওজন, বুকের মাপ) এবং Physical Endurance Test অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থীদের কাগজপত্রসহ উপস্থিত থাকতে হয়। এই ধাপে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা পরবর্তী শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের সাতটি ইভেন্ট রয়েছে এবং প্রতিটিতে পাস করতে হবে। এক ইভেন্টে ব্যর্থ হলে পরবর্তী ইভেন্টে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়।

ইভেন্টসমূহ:

  • প্রথম ইভেন্ট (দৌড়): পুরুষদের ১,৬০০ মিটার ৭ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে, নারীদের ১,০০০ মিটার ৭ মিনিটে সম্পন্ন করতে হবে।
  • দ্বিতীয় ইভেন্ট (লং জাম্প): পুরুষদের ১০ ফুট, নারীদের ৬ ফুট জাম্প করতে হবে।
  • তৃতীয় ইভেন্ট (হাই জাম্প): পুরুষদের ৩.৫ ফুট, নারীদের ২.৫ ফুট উচ্চতায় জাম্প করতে হবে।
  • চতুর্থ ইভেন্ট (পুশ আপ): পুরুষদের ৪০ সেকেন্ডে ১৫টি এবং নারীদের ৩০ সেকেন্ডে ১০টি পুশ আপ।
  • পঞ্চম ইভেন্ট (সিট আপ): পুরুষদের ৪০ সেকেন্ডে ১৫টি এবং নারীদের ৩০ সেকেন্ডে ১০টি সিট আপ।
  • ষষ্ঠ ইভেন্ট (ড্র্যাগিং): পুরুষদের ১৬০ পাউন্ড ও নারীদের ১২০ পাউন্ড ওজনের টায়ার টেনে নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে।
  • সপ্তম ইভেন্ট (রোপ ক্লাইমিং): পুরুষদের ১২ ফুট এবং নারীদের ৮ ফুট উচ্চতায় রোপ ক্লাইম্বিং।

শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা পরবর্তী ধাপে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।

পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর লিখিত পরীক্ষায় প্রস্তুতি

লিখিত পরীক্ষায় কমন কয়েকটি টপিক থেকে প্রশ্ন আসে। তাই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো নিয়মিত অনুশীলন করা উচিত।

ক. ইংরেজি এবং বাংলা রচনা ও কম্পোজিশন:

এই পরীক্ষাটি ১০০ নম্বরের, এবং সময় ৩ ঘণ্টা।

  • বাংলা: এখানে ৫০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। সাধারণত একটি রচনায় ১৫ নম্বর, ভাব-সম্প্রসারণে ১০, এককথায় প্রকাশে ৫, অর্থসহ বাক্য রচনায় ৫, এবং বাংলা অনুবাদে ১৫ নম্বর থাকে। রচনার জন্য সমসাময়িক বিষয়, পুলিশ সম্পর্কে ধারণা, এবং সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের ওপর নজর দেওয়া যেতে পারে।
  • ইংরেজি: এখানেও ৫০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। Essay 15 নম্বর, Appropriate Preposition 5, Idioms and Phrase 5, Letter/Application 10, এবং Translation 15 নম্বর। বাংলা ও ইংরেজি উভয় বিষয়েই অনুবাদে তুলনামূলক বেশি নম্বর বরাদ্দ থাকে, তাই অন্যান্য টপিকের চেয়ে অনুবাদে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

খ. সাধারণ জ্ঞান ও গণিত: Police Sub Inspector Niyog

এই অংশটিতে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা, এবং সময় ৩ ঘণ্টা।

  • সাধারণ জ্ঞান: এখানে ৫০ নম্বরের জন্য সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টিকা এবং রচনা লিখতে হয়। এই অংশের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, পুলিশ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, পুলিশ সংস্কার, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ ও তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।
  • গণিত: গণিতে ৫০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। সাধারণত গসাগু ও লসাগু, ভগ্নাংশ, সরলীকরণ, ঐকিক নিয়ম, গড়, অনুপাত ও সমানুপাত, শতকরা ও লাভক্ষতি, সুদকষা, পরিমাপ এবং ক্ষেত্রফল ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন আসে। প্রশ্নগুলো মূলত সপ্তম, অষ্টম এবং নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের ওপর ভিত্তি করে থাকে।

গ. মনস্তত্ত্ব:

মনস্তত্ত্বের জন্য ৫০ নম্বর এবং সময় এক ঘণ্টা।
এই অংশে ভাষা ও সাহিত্য, সাদৃশ্য বিচার, সাংকেতিক বিন্যাস বা পুনর্বিন্যাস, সম্পর্ক নির্ণয়, অসম্ভাব্যতা বিচার, বর্ণবিন্যাস ও শব্দ গঠন, গাণিতিক যুক্তি, জ্যামিতির মৌলিক বিষয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে প্রশ্ন করা হয়। মনস্তত্ত্বের প্রস্তুতির জন্য প্রফেসর’স পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ প্রস্তুতির বইটি সহায়ক হতে পারে।

কম্পিউটার দক্ষতা

লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষায় (MS Office, Web Browsing, Troubleshooting) অংশগ্রহণ করতে হবে।

Police Sub Inspector SI মৌখিক পরীক্ষা

লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীরাই কেবল মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। মৌখিক পরীক্ষায় বাংলাদেশের ইতিহাস, সংবিধান ও পুলিশ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, জাতিসংঘ সম্পর্কিত সাধারণ তথ্য সম্পর্কে প্রশ্ন থাকে। ইংরেজিতে দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য অনুবাদও জিজ্ঞেস করা হয়। এছাড়া প্রার্থীর নিজ জেলার বিশদ তথ্য যেমন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, তাদের কর্মজীবন, দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশ্ন হতে পারে। বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য হিসেবে কাজ করার জন্য পুলিশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা রাখা জরুরি। পুলিশ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। মৌখিক পরীক্ষায় অনার্সে পঠিত বিষয়ের মৌলিক বিষয়বস্তু থেকেও প্রশ্ন করা হতে পারে। সাধারণত ২-৩টি অনুবাদ (বাংলা থেকে ইংরেজি ও ইংরেজি থেকে বাংলা) করতে বলা হয়। প্রার্থীর বুদ্ধিমত্তা যাচাই করতে বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক ও বিব্রতকর প্রশ্নও করা হতে পারে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ভিআর (ভেরিফিকেশন রিপোর্ট)

মৌখিক পরীক্ষায় নির্বাচিত প্রার্থীদের পরবর্তীতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন (ভিআর) ফরম পূরণ করতে হয়। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত যেসব প্রার্থী স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং ভেরিফিকেশন রিপোর্টে অনুমোদিত হন, তাঁদেরই সারদা (রাজশাহী) এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত করা হয়। সফলভাবে মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে প্রার্থীরা ‘শিক্ষানবিশ সাব-ইন্সপেক্টর’ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন, যা পরে স্থায়ী পদে উন্নীত হয়।

পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা

একজন সাব-ইন্সপেক্টরকে ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেড অনুযায়ী ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা স্কেলে বেতন দেওয়া হয়। এছাড়াও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের সুযোগ, পরিবারের নির্ধারিত সদস্যদের জন্য রেশন সুবিধা, পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা, দায়িত্ব পালনে পরিবহন ও লজিস্টিক সুবিধা সহ সরকারি বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়। পুলিশিংয়ের পাশাপাশি ট্রেনিং একাডেমিতে শিক্ষকতা, সিআইডি-তে কাজ, বোম্ব ডিসপোজাল ডিউটি, রোড ডিউটি সহ কাজের বৈচিত্র্য এই পেশাকে আরো উপভোগ্য করে তুলেছে। এপিবিএন, সোয়াট, র‍্যাব এবং ইউএন মিশনের প্রত্যেক ইউনিটের আলাদা আলাদা পোশাক এই চাকরিতে ভিন্নতা নিয়ে আসে।

পুলিশের এসআইয়ের কাজ ও দায়িত্ব

বাংলাদেশ পুলিশের সশস্ত্র ও নিরস্ত্র দুটি শাখা রয়েছে। সশস্ত্র শাখার সদস্যরা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত থাকেন এবং বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান তাদের মূল দায়িত্ব। কনস্টেবল থেকে পদোন্নতির সময় সশস্ত্র ও নিরস্ত্র শাখায় আলাদা করে পদায়ন করা হয়। সাব-ইন্সপেক্টর পদে কেবল নিরস্ত্র শাখায় কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় এবং থানায় পদায়ন করা হয়। মামলার তদন্ত কাজ ও সেবা নিশ্চিত করাই নিরস্ত্র শাখার প্রধান দায়িত্ব।

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন:
police.teletalk.com.bd

M@mun

Hasan Al Mamun is a dedicated teacher, blogger, and YouTuber who has achieved great success in his field. He was born to parents Shahjahan Topodar and Masrura Begum and grew up with a love for learning and exploration. After completing his Bachelor's degree, Hasan pursued a Master's degree in Accounting and excelled in his studies. He then began his career as a teacher, sharing his knowledge and passion for accounting with his students. In addition to teaching, Hasan is also an avid blogger and YouTuber, creating content that educates and inspires his viewers. His YouTube channel, "My Classroom," has grown to an impressive 240,000 subscribers, earning him a silver play button from YouTube. Hasan's interests include book reading, travelling, gardening, and writing, and he often incorporates these passions into his work. He strives to create an honest and supportive community in all of his endeavors, encouraging his followers to learn and grow alongside him. Overall, Hasan Al Mamun is a talented and dedicated individual who has made a significant impact in the fields of education, blogging, and content creation.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button