গর্ভাবস্থার ৩য় সপ্তাহ: লক্ষন ও করনীয়
আপনি এখন গর্ভাবস্থার ৩য় সপ্তাহে! এই সপ্তাহটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময়েই নিষিক্ত ডিম্বাণু (যা এখন ভ্রুণ নামে পরিচিত) ফেলোপিয়ান টিউব থেকে জরায়ুর অন্দরের আস্তরণে প্রতিস্থাপিত হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে “ইমপ্লান্টেশন” বলা হয়।
গর্ভাবস্থার ৩য় সপ্তাহ: শরীরে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে:
- লক্ষণ: অনেক নারী এই সপ্তাহে গর্ভাবস্থার কোন লক্ষণ অনুভব করেন না। তবে কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি
- পেট ফোলাভাব এবং গ্যাস
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- স্তনে সংবেদনশীলতা বা ব্যথা
- হালকা রক্তপাত (ইমপ্লান্টেশন রক্তপাত)
- প্রিমেঞ্স্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS)-এর মতো লক্ষণ
- আবেগ: হরমোনের পরিবর্তনের কারণে আপনার মেজাজ দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে, যেমন বিরক্তি, বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ।
- শারীরিক পরিবর্তন: আপনার ওজন সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
এ সপ্তাহে মাসিক না হওয়া: গর্ভের ইঙ্গিত?
- মাসিক না হওয়া হতে পারে গর্ভের প্রথম লক্ষণ, যা আগামী সপ্তাহ শেষে টের পেতে পারেন।
- গর্ভধারণের পর, hCG নামক হরমোন মাসিক বন্ধ করে দেয়।
- গর্ভাবস্থা পরীক্ষা প্রস্রাবে এই hCG হরমোন শনাক্ত করে, যা ২-১ সপ্তাহের মধ্যে ইতিবাচক হতে পারে।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট
- মাসিক অনিয়মিত হলে কিনুন: আগামী সপ্তাহে মাসিক না হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা যাচাই করার জন্য টেস্ট কিনুন।
- গর্ভধারণ নিশ্চিত করুন: টেস্টের মাধ্যমে দ্রুত গর্ভধারণ নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।
- প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের নাম: বাজারে অনেক ধরনের টেস্ট কিট পাওয়া যায় যেমন- গুড নিউজ
প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট এর ব্যবহার
- টেস্টের নির্দেশাবলী মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
- ফলাফলের সঠিকতা নিশ্চিত করার জন্য সকালের প্রথম প্রস্রাব ব্যবহার করুন।
- নেতিবাচক ফলাফল হলেও, মাসিক না হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
গর্ভাবস্থায় ৩য় সপ্তাহে ডাক্তার নির্বাচন করুন
- গর্ভধারণের পর দ্রুত চেকআপ করুন।
- প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসার পরই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
- আপনার সঙ্গীর সাহায্য নিন।
- সম্ভাব্য ডাক্তারদের তালিকা, চেম্বারের ঠিকানা ও রোগী দেখার শিডিউল খুঁজে বের করুন।
মনে রাখবেন:
- আপনার জন্য উপযুক্ত ডাক্তার খুঁজে বের করার জন্য কিছু সময় লাগতে পারে।
- একজনের চেয়ে বেশি ডাক্তারের সাথে দেখা করতে দ্বিধা করবেন না।
প্রেগন্যান্সির ৩য় সপ্তাহে সন্তান কত বড় হয়েছে
এই সপ্তাহে, আপনি বাইরে থেকে হয়তো কিছুই টের পাবেন না, তবে আপনার শরীরের ভেতরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটছে।
- ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন: সপ্তাহের শুরুতে, আপনার ডিম্বাণু এবং সঙ্গীর শুক্রাণু মিলিত হয়ে একটি ভ্রূণ তৈরি হবে। এই ক্ষুদ্র কোষটিই আগামী নয় মাস ধরে আপনার গর্ভে বেড়ে উঠবে।
- ডিম্বনালি থেকে জরায়ুতে ভ্রূণের যাত্রা: ভ্রূণ তৈরির পর, এটি ডিম্বনালি বেয়ে জরায়ুতে নেমে যাবে।
- জরায়ুতে গেঁথে যাওয়া: এই সপ্তাহের শেষে, ভ্রূণ জরায়ুর দেয়ালে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সংযুক্ত করে ফেলবে। এটিই ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করবে।
এই সপ্তাহে ভ্রূণ মাত্র একটি ছোট্ট কোষের সমষ্টি হলেও, এর মধ্যেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনের প্রাথমিক ধাপ শুরু হয়ে গেছে।
আপনার করনীয়: গর্ভাবস্থায় ৩য় সপ্তাহ
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান: প্রচুর ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।
- ফোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খান: জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য প্রতিদিন 400 মাইক্রোগ্রাম ফোলিক অ্যাসিড গ্রহণ করুন।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য প্রতিদিন 8-10 গ্লাস পানি পান করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন 30 মিনিট হালকা থেকে মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম পান: প্রতি রাতে 7-9 ঘন্টা ঘুমের চেষ্টা করুন।
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: এগুলি আপনার শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- ক্যাফেইন গ্রহণ সীমাবদ্ধ করুন: প্রতিদিন 200 মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন পান করা এড়িয়ে চলুন।
- প্রসবপূর্ব যত্ন শুরু করুন: একজন ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করুন এবং প্রসবপূর্ব যত্ন শুরু করুন।
- আপনার আবেগ সম্পর্কে কথা বলুন: আপনার যদি মানসিক সমস্যা হয় তবে আপনার পরিবার, বন্ধু বা একজন থেরাপিস্টের সাথে কথা বলুন।
প্রেগন্যান্সির ৩য় সপ্তাহ: বাবার করনীয়
আপনি কি জানেন? কয়েক মাসের মধ্যেই আপনি বাবা হতে চলেছেন! সুস্থ গর্ভাবস্থার জন্য প্রারম্ভিক প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত:
চেকআপের মাধ্যমে প্রস্তুতি:
- গর্ভধারণের আগে থেকেই একজন গাইনী ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।
- এই চেকআপের মাধ্যমে ডাক্তার আপনার সঙ্গীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারবেন।
- ডাক্তার আয়রন ও ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করার পরামর্শ দিতে পারেন।
- আপনি যদি কোনও ওষুধ সেবন করেন, তাহলে ডাক্তার নির্ধারণ করবেন যে সেগুলি গর্ভের জন্য নিরাপদ কিনা।
- জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হলে ডাক্তার আপনাকে পরামর্শ দেবেন।
- গর্ভপাত হলে, ডাক্তার বিশেষ পরামর্শ দিতে পারবেন।
আরো পড়ুন:
- গর্ভাবস্থায় সহবাস: নিয়ম ও সতর্কতা
- প্রেগন্যান্সি বা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন- ১ম সপ্তাহ
- গর্ভাবস্থার ২য় সপ্তাহ: আপনার শরীরে কী ঘটছে এবং কী করবেন
ধূমপান ত্যাগ: ৩য় সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত নিন
ধূমপান গর্ভবতী মায়ের জন্য এবং তাদের অনাগত শিশুর জন্য বিপজ্জনক। ধূমপানের ধোঁয়া বিষাক্ত রাসায়নিক সমৃদ্ধ যা প্লাসেন্টা অতিক্রম করে শিশুর রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে গুরুতর পরিণতি হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- অপরিণত বা সময়ের আগে জন্ম
- নিম্ন জন্ম ওজন
- জন্মগত ত্রুটি
- শিশুমৃত্যু
FAQ’s গর্ভাবস্থার ৩য় সপ্তাহ
প্রশ্ন: ৩ সপ্তাহের গর্ভের বাচ্চা দেখতে কেমন হয়?
উত্তর: এই পর্যায়ে, ভ্রূণটি একটি ছোট্ট বলের মতো দেখায় যাকে ব্লাস্টোসিস্ট বলা হয়। এটি কোষের একটি গুচ্ছ দিয়ে তৈরি এবং মাত্র ০.২ মিমি ব্যাসের।
প্রশ্ন: ৩ সপ্তাহের গর্ভাবস্থার লক্ষণ কি?
উত্তর: আপনি হালকা রক্তপাত, দাগ পড়া, ক্র্যাম্প বা ফোলাভাব অনুভব করতে পারেন। আপনার নির্ধারিত তারিখও এই সময়ে গণনা করা হয়।
প্রশ্ন: মর্নিং সিকনেস কি ৩ সপ্তাহে শুরু হয়?
উত্তর: মর্নিং সিকনেস সাধারণত ৬ সপ্তাহে শুরু হয়, তবে এটি ৪ সপ্তাহে শুরু হতে পারে। কিছু মহিলা আরও আগে বমি বমি ভাব অনুভব করেন। মনে রাখবেন, মর্নিং সিকনেস দিনের যেকোনো সময় হতে পারে।
সবশেষে:
এ পোস্টে গর্ভবতী হওয়ার ৩য় সপ্তাহের লক্ষণ এবং গর্ভাবস্থার এ সপ্তাহে করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে কত মাস কিংবা প্রতি সপ্তাহের অবস্থা জানতে মাই ক্লাসরুম এর সাথে থাকুন। আপনার শুভ যাত্রায় আমরা সাথে আছি, ইনশা আল্লাহ।