প্রেগন্যান্সি
গর্ভে অতিরিক্ত পানি (পলিহাইড্রামনিওস): কারণ, লক্ষণ ও সমাধান

পলিহাইড্রামনিওস কী?
গর্ভাবস্থায় শিশুকে ঘিরে থাকা অ্যামনিওটিক তরল শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু এই তরলের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি (২৫ সেমির বেশি) হলে তাকে পলিহাইড্রামনিওস বলে।
🔹 কখন হয়?
- সাধারণত দ্বিতীয় বা তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে (১৬ সপ্তাহ পর) দেখা দেয়।
- ১০০ জনে ১-২ জন গর্ভবতীর এ সমস্যা হয়।
কেন হয়? মা ও শিশুর সম্ভাব্য কারণ
মায়ের দিক থেকে:
- ডায়াবেটিস (গর্ভকালীন বা আগে থেকে থাকলে)।
- জমজ গর্ভধারণ (একাধিক শিশু থাকলে)।
- গর্ভকালীন ইনফেকশন (যেমন: টক্সোপ্লাজমোসিস)।
শিশুর দিক থেকে:
- গিলতে বা প্রস্রাব করতে সমস্যা (পরিপাকনালির ব্লকেজ, ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা)।
- হৃদরোগ বা নিউরোলজিক্যাল সমস্যা।
- টুইন টু টুইন ট্রান্সফিউশন সিনড্রোম (জমজ শিশুর ক্ষেত্রে)।
লক্ষণ: কখন সতর্ক হবেন?
- পেট অস্বাভাবিক বড় বা টাইট মনে হওয়া।
- শ্বাসকষ্ট বা বসতে অসুবিধা।
- পায়ে ফোলা ও প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।
- গর্ভের শিশুর নড়াচড়া কমে গেলে।
❗ নোট: অনেক সময় কোনো লক্ষণই দেখা যায় না, রুটিন আল্ট্রাসাউন্ডে ধরা পড়ে।
ডায়াগনোসিস: কীভাবে নির্ণয় করবেন?
- আল্ট্রাসাউন্ড (AFI পরিমাপ):
- অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স ২৫ সেমির বেশি হলে পলিহাইড্রামনিওস ধরা হয়।
- অতিরিক্ত টেস্ট:
- গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (ডায়াবেটিস চেক)।
- অ্যামনিওসেন্টেসিস (জেনেটিক সমস্যা নির্ণয়)।
- ডিটেইল্ড স্ক্যান (শিশুর অঙ্গসংস্থান পরীক্ষা)।
চিকিৎসা: কী করবেন?
১. মাইল্ড কেস (অল্প তরল বৃদ্ধি):
- নিয়মিত মনিটরিং: প্রতি ২-৩ সপ্তাহে আল্ট্রাসাউন্ড।
- বিশ্রাম: ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন।
২. মডারেট থেকে সিভিয়ার কেস:
- অ্যামনিওরিডাকশন: সুই দিয়ে অতিরিক্ত তরল বের করা (হাসপাতালে)।
- ওষুধ: ইন্ডোমেথাসিন (তরল উৎপাদন কমাতে, ডাক্তারের পরামর্শে)।
- অকাল প্রসব রোধ: বেড রেস্ট বা মেডিকেশন।
৩. ডেলিভারি প্ল্যান:
- স্বাভাবিক ডেলিভারি: যদি শিশুর অবস্থা ভালো থাকে।
- সিজার: শিশুর পজিশন অস্বাভাবিক বা মায়ের শ্বাসকষ্ট থাকলে।
জটিলতা: মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকি
- মায়ের জন্য: অকাল প্রসব, প্রি-এক্লাম্পসিয়া, ডেলিভারির পর রক্তপাত।
- শিশুর জন্য: জন্মগত ত্রুটি, শ্বাসকষ্ট, NICU-তে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা।
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
Q: পলিহাইড্রামনিওস থাকলে কি নরমাল ডেলিভারি সম্ভব?
A: হ্যাঁ, যদি শিশুর অবস্থা ও মায়ের স্বাস্থ্য অনুকূলে থাকে।
Q: এই সমস্যা পরবর্তী গর্ভাবস্থায় আবার হতে পারে কি?
A: ঝুঁকি বাড়ে যদি ডায়াবেটিস বা জমজ গর্ভধারণের ইতিহাস থাকে।
Q: কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
A: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত প্রেগন্যান্সি চেকআপ ও সঠিক পুষ্টি।
সারমর্ম
পলিহাইড্রামনিওস একটি ম্যানেজযোগ্য অবস্থা, তবে সময়মতো চিকিৎসা জরুরি। নিয়মিত চেকআপ, ডায়াবেটিস কন্ট্রোল এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব।



