মাথাব্যথা। কারন, লক্ষন, দোয়া ও চিকিৎসা।
মাথাব্যথা আমাদের সকলেরই জীবনে কখনো না কখনো দেখা দেয়। মাথাব্যথা নিয়ে খুব সুন্দর একটি প্রবাদ আছে-মাথা থাকলে ব্যথা হবেই। প্রশ্ন হলো মাথাব্যথার কারন কি, মাথাব্যথার লক্ষন কি? মাথা ব্যথা সারানোর জন্য দোয়া এবং এর অন্য চিকিৎসা কি আছে। চিন্তিত হবার খুব বেশি কারন নেই। মাথা থাকলে যেমন মাথাব্যথা হয় তেমনি এর ভালো চিকিৎসাও রয়েছে।
কারো কারো ঘন ঘন মাথাব্যথা হয়, গর্ভাবস্থায় মাথাব্যথা হতে পারে। নিচে বিস্তারিত দেয়া হলো-
মাথাব্যথার কারন
মাথাব্যথা হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ঘুমের অভাব
- সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া
- পরিমাণমতো পানি না খাওয়া
- মানসিক চাপ
- গর্ভাবস্থা
- স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা
- ক্লান্তি
- চোখের সমস্যা
- কফি, চা, ওয়াইন, চকোলেটের মতো খাবার খাওয়া
- কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মাথাব্যথা কমানোর উপায়
মাথাব্যথা দু’ভাবে কমানো যায়:
- ঔষধের মাধ্যমে:
- অ্যাসিটামিনোফেন (প্যারাসিটামল)
- আইবুপ্রোফেন
- ন্যাপ্রোক্সেন
- প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়ে:
প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়ে মাথাব্যথা কমানোর ১০টি উপায়:
১. পানিশূন্যতা দূর করুন:
শরীরে পানিশূন্যতা হলে মাথাব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। গ্রীষ্মকালের চেয়ে শীতকালে পানি কম পান করেন অনেকে। এটি ঠিক নয়।
২. বিশ্রাম নিন:
মাথাব্যথা অনুভব করলে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিন। যদি সময় থাকে তাহলে ঘুমিয়ে পড়ুন।
৩. মাথায় ম্যাসাজ করুন:
মাথায় ম্যাসাজ করলে মাথাব্যথা অনেকটা কমে যায়।
- তেল ব্যবহার: সরিষার তেল, নারকেল তেল, ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করতে পারেন।
- ব্যথা উপশমকারী জেল: ব্যথানাশক জেল ব্যবহার করতে পারেন।
৪. আদা চা পান করুন:
আদা চা মাথাব্যথা কমাতে খুবই উপকারী। দিনে ২-৩ বার আদা চা পান করুন।
৫. কালোজিরা তেল ব্যবহার করুন:
কালোজিরা তেল মাথায়, কপালে ও কানে ম্যাসাজ করলে মাথাব্যথা দ্রুত কমে যায়।
৬. ঠান্ডা সেঁক দিন:
একটি পরিষ্কার কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে কপালে ও ঘাড়ে ঠান্ডা সেঁক দিন।
৭. ঘর আন্ধার করুন:
আলো মাথাব্যথার তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ঘর আন্ধার করে রাখুন।
৮. ধ্যান করুন:
ধ্যান করলে মন শান্ত হয় এবং মাথাব্যথা কমে যায়।
৯. যোগব্যায়াম করুন:
যোগব্যায়াম মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
১০. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন:
ধূমপান ও মদ্যপান মাথাব্যথার তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:
নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে দ্রুত একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত:
- তীব্র বা অস্বাভাবিক মাথাব্যথা: যদি আপনার মাথাব্যথা হঠাৎ করে তীব্র হয়, অথবা যদি এটি আগের চেয়ে অনেক বেশি ব্যথাযুক্ত হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত। এটি একটি গুরুতর মেডিকেল অবস্থার লক্ষণ হতে পারে।
- মাথাব্যথার সাথে অন্যান্য উপসর্গ: যদি আপনার মাথাব্যথার সাথে জ্বর, ঘাড় শক্ত হওয়া, বিভ্রান্তি, কথা বলতে অসুবিধা, হাঁটতে অসুবিধা, ঝিমঝিম করা, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত।
- মাথাব্যথা যা চলে যায় না: যদি আপনার মাথাব্যথা কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত।
- নতুন ওষুধ শুরু করার পর মাথাব্যথা: আপনি যদি নতুন কোন ওষুধ খেতে শুরু করেন এবং তারপর মাথাব্যথা অনুভব করেন, তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- মাথাব্যথা যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে হস্তক্ষেপ করে: যদি আপনার মাথাব্যথা আপনাকে কাজ করতে, স্কুলে যেতে বা আপনার প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটাতে বাধা দেয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত।
মাথা ব্যথা কমানোর ঔষধ:
- এসিটামিনোফেন (প্যারাসিটামল): এটি একটি সাধারণ ওষুধ যা হালকা থেকে মাঝারি মাথাব্যথা কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- আইবুপ্রোফেন: এটি একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ যা হালকা থেকে মাঝারি মাথাব্যথা, টেনশন হেডেক, এবং মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ন্যাপ্রোক্সেন: এটি আরেকটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ যা হালকা থেকে মাঝারি মাথাব্যথা, টেনশন হেডেক, এবং মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ক্যাফেইন: এটি কিছু মাথাব্যথার ঔষধে একটি সাধারণ উপাদান যা ব্যথার প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
- ট্রিপটানস: মাইগ্রেনের ব্যথা চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত একটি নির্দিষ্ট ধরণের ঔষধ।
- এর্গোটামিন: মাইগ্রেনের ব্যথা চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত আরেকটি ধরণের ঔষধ।
- ব্যথানাশক ক্রিম বা জেল: কিছু ক্ষেত্রে, ব্যথানাশক ক্রিম বা জেল মাথায় প্রয়োগ করা মাথাব্যথা উপশম করতে সহায়তা করতে পারে।
- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: কিছু ক্ষেত্রে, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন কফি বা চা, হালকা মাথাব্যথা উপশম করতে সহায়তা করতে পারে।
মাথাব্যথার দোয়া
মাথাব্যথার জন্য অনেক দোয়া আছে।
কিছু দোয়া:
১) রাসুল (সাঃ) এর হাদিস থেকে:
“اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ و وَعَدْكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقْتَ”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার বান্দা এবং আমি আমার সাধ্যমত আপনার প্রতিশ্রুতি ও নিয়ম-কানুন মেনে চলার চেষ্টা করব। আপনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
২) মাথাব্যথা থেকে মুক্তির জন্য:
“رَبِّ أَعْفِ لِي وَتَوَبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ”
অর্থ: “হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার উপর তওবা গ্রহণ করুন। নিশ্চয়ই আপনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু।”
৩) মাথাব্যথা ও অন্যান্য অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য:
“اللَّهُمَّ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شَافِيَ إِلَّا أَنْتَ اشْفِني شَفَاءً لاَ يَغْدَرُ سَقْمًا”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনিই একমাত্র নিরাময়কারী, আপনি ছাড়া অন্য কোন নিরাময়কারী নেই। আমাকে এমনভাবে নিরাময় করুন যাতে কোন অসুস্থতা না থাকে।”
৪) মাথাব্যথা ও অন্যান্য অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য:
“رَبِّ إِنِّي أَمَسَّنِي الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ”
অর্থ: “হে আমার রব! নিশ্চয়ই আমাকে কষ্ট পেয়েছে এবং আপনিই সর্বোত্তম দয়ালু।”
দোয়া করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা উচিত:
- নিষ্ঠার সাথে দোয়া করুন।
- আপনার মনকে একাগ্র করুন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চান।
- বিশ্বাস করুন যে আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন।
- ধৈর্য ধরুন এবং নিয়মিত দোয়া করুন।
সচরাচর প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: মাথাব্যথা কী? উত্তর: মাথায় ব্যথা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
প্রশ্ন: কারণ কী কী? উত্তর: ঘুমের অভাব, খাবার না খাওয়া, পানিশূন্যতা, চাপ, গর্ভাবস্থা, চোখের সমস্যা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
প্রশ্ন: ধরন কতগুলো? উত্তর: টেনশন হেডেক, মাইগ্রেন, ক্লাস্টার হেডেক, সাইনাস হেডেক ইত্যাদি।
প্রশ্ন: কমানোর উপায় কী কী? উত্তর: প্রাকৃতিক উপায় (পানি, বিশ্রাম, ম্যাসাজ, আদা চা, কালোজিরা তেল) এবং ঔষধ (প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন, ট্রিপটানস, এর্গোটামিন)।
প্রশ্ন: কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন? উত্তর: তীব্র/অস্বাভাবিক ব্যথা, অন্যান্য উপসর্গ, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, নতুন ওষুধের পর ব্যথা, দৈনন্দিন জীবনে বাধা।
প্রশ্ন: কিছু টিপস? উত্তর: পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাবার, নিয়মিত পানি, চাপ কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম, নিয়মিত চোখ পরীক্ষা, সুস্থ জীবনধারা।